এক শিকলেই কেটে গেছে ২২ বছর

এক শিকলেই কেটে গেছে ২২ বছর

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া গ্রামের রেললাইন ঘেঁষা ছোট খুপরি ঘরে মাজেদা খাতুনের পাঁচ সন্তান নিয়ে বসবাস। অভাব কখনও পিছু ছাড়েনি এই পরিবারটির। একটা সময় অভাবের কারণে মাজেদা খাতুনের স্বামী তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এখন মাজেদার সবচেয়ে বড় কষ্ট তাঁর বড় ছেলে চাঁন মিয়া।

২২ বছর ধরে শিকলে বাঁধা ছেলেটি।  অধিকাংশ সময়ই থাকেন নগ্ন হয়ে। ১৯৯৬ সালের দিকে তাঁর মস্তিস্কের বিকৃতি ঘটেছে। অনেক কষ্ট করে সন্তানদের মুখে দু-মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হয় মাজেদাকে।
ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করানোটাই মাজেদার ২২ বছর ধরে দেখা অপূর্ণ স্বপ্ন!

মাজেদা খাতুন জানান, তাঁরা প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এই রেল সড়কের পাশেই রেলের জমিতে খুপরি ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছেন। তাঁর স্বামী মোস্তফা একজন দিনমুজুর ছিল। তাদের সংসারের প্রথম সন্তান এই চাঁন মিয়া। বয়স যখন সাতবছর তখনই তাকে ময়মনসিংহের একটি মাদ্রাসায় হাফেজী পড়ার জন্য ভর্তি করা হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালের দিকে তাঁর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। পরে আর অর্থাভাবে কোন ধরনের চিকিৎসা করাতে পারেননি। এসময় থেকেই তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে। সময় গড়িয়ে চলে গেছে ২২টি বছর।

তিনি আরো জানান, পরে তাদের সংসারে আরো চারজন সদস্যের জন্ম হয়। কিন্তু অভাবের কারণে একটি সময় তাঁর স্বামী তাদের ছেড়ে চলে যায়। এর পর থেকেই বিভিন্ন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোন রকমে সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন মাজেদা। বিভিন্ন সময় তাঁর প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসায় সহযোগিতার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন কয়েকবার, কিন্তু তা মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাজউদ্দিন আহমেদ জানান, হতদরিদ্র পরিবারের এই মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তানই এখন তাদের বড় সমস্যা। এরা সহায়তার জন্য একবার আমার কাছে এসেছিল। তাদের কিছু কাগজ জোগাড় করার জন্য বলেছিলাম, পরে আর আসেনি।

শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনজুরুল হক জানান, সমাজের অবহেলিত হতদরিদ্র লোকজনের সহায়তায় সরকারের সামাজিক কর্মসূচি কার্যক্রম চলমান আছে। এই প্রতিবন্ধীর পরিবারকে কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা করা হবে।

সম্পর্কিত খবর