'হিন্দু-মুসলিম কাউকে ছাড়ছে না, শুধু কাটছে আর গুলি করছে'

সংগৃহীত ছবি

'হিন্দু-মুসলিম কাউকে ছাড়ছে না, শুধু কাটছে আর গুলি করছে'

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক:

মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে আসছেন বাংলাদেশে। সেই সঙ্গে এখন কাতারে কাতারে আসতে শুরু করেছেন হিন্দুরাও। কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের কাছে একটি মন্দিরের পাশে একটি খোলা জায়গায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় পাঁচশো রোহিঙ্গা হিন্দু নারী-পুরুষ-শিশু। তাদের চোখে মুখে শুধুই আতঙ্ক।

স্বজন হারানো বেদনার ছাপ।

রোহিঙ্গা মুসলিমরা হাজারে হাজারে রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও এই প্রথম রোহিঙ্গা হিন্দুদের সেখান থেকে পালিয়ে আসতে দেখা গেল। সংবাদমাধ্যমের কাছে তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ওরা হিন্দু-মুসলমান সবাইকে মেরেছে।

গুলি করেছে। ওরা কালো পোশাক পরা ছিল। চারিদিক থেকে ঘেরাও করে মারছে। পালাতে চাইলেও খুঁজে বের করে মারছে। "

কুতুপালং এর মন্দিরে আশ্রয় নেয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা হিন্দু নারী-পুরুষ জানান, যে হিন্দু গ্রামটি সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছে সেটির নাম ফকিরাবাজার।

বকুলবালা নামে এক হিন্দু শরণার্থী জানান, ফকিরাবাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চিকনছড়িতে ছিল তার বাড়ি। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন ফকিরাবাজারে। তার স্বামী মেয়েকে দেখার জন্য ফকিরাবাজার যান। গিয়ে দেখেন তার স্বামী, মেয়ে এবং নাতি সবাইকে মেরে ফেলেছে। এখন আর তার স্বজন বলতে এই পৃথিবীতে কেউ নেই।

বকুলবালা বলেন, "সেখানে সব মানুষকে কেটে ফেলেছে। সেখানে আমার মেয়েকে কেটে ফেলেছে। আমার মেয়েকে দেখতে গিয়েছিল আমার স্বামী। আমার স্বামীকেও কেটে ফেলেছে। আমার নাতি ছিল। তাকেও কেটে ফেলেছে। ''

"ওরা সবাই কালো কালো পোশাক পরে এসেছিল। চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। চিনতে পারিনি। ওরা কাটছিল, মারছিল, গুলি করছিল। সবাইকে মেরে ফেলেছে। ওরা কখনো বার্মিজ ভাষায় কথা বলছিল, কখনো বাংলা বলছিল। ওদের হাতে অনেক ধারালো অস্ত্র ছিল। চিকনছড়িতে যখন ওরা এসে পৌছায়, তার আগেই আমরা পালিয়ে যাই। "

দেনাবালা নামে এক নারী বলেন, "আমাদের গুলি করেছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ভাত-পানি খেতে দেয়নি। আমরা হিন্দু মানুষ। আমাদের মেরেছে-কেটেছে। আমাদের মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছে। এক গ্রাম থেকেই আমরা চারশো জনের মতো এসেছি। যারা মারতে এসেছিল, ওরা কালো পোশাক পরে এসেছিল। ওদের চিনি না। শুধু চোখ দেখা যাচ্ছিল। " সূত্র: বিবিসি বাংলা


বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

সম্পর্কিত খবর