পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষোভ নিয়ে ছাড়ছে আশ্রয়কেন্দ্র

পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষোভ নিয়ে ছাড়ছে আশ্রয়কেন্দ্র

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল অনেক। করা হবে পুনর্বাসন। হয়তো হবে কোন নিরাপদ স্থানে মাথা গোঁজার ঠাঁই। তাই নতুন করে বাচাঁর স্বপ্নও দেখেছিল গৃহহীন নিঃস্ব মানুষগুলো।

কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। তাই কিছুটা ক্ষোভ আর অজানা শঙ্কা নিয়ে ছাড়তে হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রের শেষ ঠিকানাও। এসব ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীন মানুষগুলো আবারও কোন পাহাড়ে অবস্থান নেবে, আবারও তিল তিল করে গড়ে তুলবে আপন ঘর, আবারও হয়ত সেই আশ্রয়টুকু পাহাড়ের নিচে চাপা পড়বে, স্বজনহারা হবেন অনেকে- এই শঙ্কা স্থানীয় সুধীজনদের।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারকে ৬ হাজার টাকা, ২ বান্ডিল টিন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের  ৩০কেজি চাল ও একহাজার টাকা ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এতে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ঠিকানাবিহীন মানুষগুলো। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে বেড়াছেন অনেকেই। স্বামী, সন্তান, পরিবার ও স্বজনহারা মানুষগুলো এখন অনেকটা অনিশ্চিয়তার মধ্যে ছাড়ছে আশ্রয় কেন্দ্র। কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবে সেই উত্তর তাদের অজানা। এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যেও।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর রবিমোহন চাকমা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে পুনর্বাসনের নামে যে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে তা খুবই সামান্য। এসব ত্রাণ দিয়ে তারা আদৌ গৃহনির্মাণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, পাহাড় ধসের ঘটনার পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিনিধি দল রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বলা হয়েছিল নতুন কোন নিরাপদ স্থানে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু, পাহাড় ধসের দীর্ঘ তিন মাসেও সেই সব প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখেনি। এখন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর মাথাগোঁজার শেষ আশ্রুয়টুকুও সরকারি বরাদ্দ শেষ হওয়ায় কারণে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি মাড়ি স্টেডিয়ামের  (আশ্রয় কেন্দ্র) সকিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, পাহাড় ধসের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে অনেক বড় বড় কথা বলেছিল। আমাদের পুনর্বাসন করা হবে। জায়গা জমি দেওয়া হবে। ঘর বানিয়ে দেওয়া হবে। সেসব কিছুই হয়নি। এখন বলছে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যেতে। কিন্তু, কোথায় যাব তা বলে দিচ্ছে না। অনেকেই এসেছিল। অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।

আশ্রিত মো. জিন্নাত আলী বলেন, শহরের শিমুলতলীতে আমার ঘর ছিল। পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে। হারিয়েছি ভিটা-বাড়ি। তিন মাস ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি। তবুও তো এটা মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল। জেলা প্রশাসন নিষেধ করেছে আগের জায়গায় নতুন বাড়ি-ঘর তৈরি না করতে। তারা আমাদের অন্য জায়গায় পুনর্বাসন করবে। কিন্তু এতো দিন পর বলছে  আমাদের আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে দিতে। এখন আমরা কোথায় যাব?

এ অভিযোগ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি তাদের যথাযথ পুনর্বাসন করতে । কিন্তু সে রকম নিরাপদ খাস জমি পাওয়া যায়নি। যে সব জমি আছে সব পাহাড়ে। আমরা চাইলে তাদের পাহাড়ে আবারও বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। আর যেসব সমতল জমি ছিল তাও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকারের বরাদ্দও শেষ হয়ে গেছে। তাই তাদের আর আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে সহায়তা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে কোন নিরাপদ জমি পাওয়া গেলে তাদের সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।  
 

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর