ইংরেজিতে Slow life বলে একটা শব্দযুগল আছে। বাংলায় কি বলবো? ধীর জীবন? ধীর জীবন আদতে কি? আদতে এটা কথিত আধুনিক গতিশীল জীবনকে প্রত্যাখান করে। আমাদের এই প্রযুক্তি আর পূজিবাদের যুগে সবাই একটা প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকে।
বেশি কাজ, দ্রুত কাজ, একসাথে অনেক কিছু করতে পারাটাই আধুনিক৷ জীবনযাত্রার লক্ষ্য।
আমরা এখন টিভি ছেড়ে রাখি, মোবাইলে ফেসবুকিং করতে থাকি আবার রান্নাও করতে থাকি।
তবে ধীর জীবন মানে অলস জীবন নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কাজকে ফেলে রাখা, সচেতনভাবে পিছিয়ে থাকাও ধীর জীবন দর্শন নয়। আমার বিবেচনায়, ধীর জীবন দর্শনের গভীর সত্যটি হলো, অলওয়েজ দৌঁড়ের উপর থাকা ভালো নয় মামমা।
ফরেস্ট গাস্প জীবনের প্রয়োজনে দুবার দৌঁড়েছিলেন। কিন্তু পুরোটা জীবন দৌঁড়ে কাটাননি। তাই তার জীবন এসোর্টেড চকলেট বক্সের মতো মধুর, উপভোগ্য, বিস্ময়কর।
তাড়াতাড়ি এক কাফ কপি আর একটু রুটি ভাজি খেয়ে দৌঁড় দিলে অফিসে আগে পৌঁছানো যায়। কিন্তু প্রতিদিনের নাস্তায় কফির সুবাস, রুটি-ভাজির স্বাদটা উপভোগ করার সময় না-থাকলে জীবন কি পানসে হয়ে যায় না?
কাজকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে তেমনি প্রতিটি সকাল, সন্ধ্যা, দিবস, রাত্রিকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতি বছর শরৎকালে কাশফুলের সাথে সেলফি দেয়া একটা রুটিন হয়ে যায়। কোথায় কাশফুল আছে, কতো আগে যাবো, কতো ভালো সেলফি তুলবো, কতো লাইক কমেন্ট হবে, অধুনা জীবনের সাথে তা মানানসই বটে।
তবে মানানসই হওয়ার চেয়ে সত্যিকার উপভোগ্য করাটাই জরুরি। পুরোটা শরৎকাল মাথার উপরে মেঘের যে কারুকাজ থাকে তাকে উপভোগ করাও তো ভালো। সব কাজ, আয়োজন রেখে দশ মিনিট বৃষ্টির ছন্দ-তান শুনতে পয়সা লাগে না, পরিশ্রমও হয় না। শুধু মনটাকে, শরীরটাকে একটু স্থির করলেই হয়।
এই স্থিরতা কিন্তু স্থবিরতা নয়, এ বরং ধ্যানের মতো, মেডিটেশনের মতো, প্রার্থনার মতো শক্তি বর্ধক। শরীর, মনকে চাঙ্গা রাখলে, ফুরফুরে রাখলে যে কাজ অন্য কেউ ঘণ্টায় করে সে কাজ আপনি হয়তো কয়েক মিনিটে করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
একটি হটডগ আয়ু কমাতে পারে ৩৬ মিনিট পর্যন্ত!
অবশেষে ফুঁ দিয়ে আগুন ধরানো সেই সাধুবাবা গ্রেপ্তার
ইভ্যালি ধরলেও সমস্যা, ছাড়লেও সমস্যা! কোথায় যাবেন ফারিয়া?
তৃতীয় স্বামীর কাছে শুধু বিচ্ছেদই নয়, খরচও চাইলেন শ্রাবন্তী
তাই আখেরে ধীরে চলো জীবন দর্শনে ফায়দা বেশিই। গাড়িতে বসে একফাঁকে একটা স্যান্ডউইচ, বার্গার খেয়ে কাজের সময় বাঁচানো যায়। কিন্তু বিশ মিনিট সময় ব্যয় করে একটু ধীরে সুস্থে খাওয়াটা খেলে পেটটায় শান্তি থাকে, তাতে ইনপুট, আউটপুট আরামসে হয়। আর বিশ্বাস করুন, তাতে সময় বাঁচবে।
কারণ ঠিকঠাক খেলে শরীর মন ঠিকঠাক, ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ঝামেলা নেই, খরচও নেই। 'সময় কোথা সময় নষ্ট করবার', এ ভেবে কি কাজ? আপনাকে পরের স্টেশনে নামতেই হবে এমন দিব্যি কে দিলো! একটু জিরিয়ে নিন ভাই।
— ওস্তাদ বামে পেলাসটিক, পর্ব ৩, মুম রহমান
লেখাটি মুম রহমান-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া।
(সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )
news24bd.tv/ নকিব