বিলুপ্তির পথে পঞ্চগড়ের খেঁকশিয়াল, আবাস এখন গোরস্থানে 

বিলুপ্তির পথে পঞ্চগড়ের খেঁকশিয়াল, আবাস এখন গোরস্থানে 

সরকার হায়দার • পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রাচীনকাল থেকে শিয়ালের সাথে মানুষের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। একটা সময় দাদি-নানিরা তার নাতি-নাতনিদের ঘুম পাড়ানোর সময় খেঁকশিয়ালের গল্প শোনাতেন। সেই গল্পের চরিত্রে শিয়াল ছিল বাঙ্গালির ‘পণ্ডিত’। গৃহপালিত না হলেও ‘শিয়াল পণ্ডিতের’ সাথে যেন বাঙালির ছিল রক্তের টান।

কিন্তু নানা কারণে এই প্রাণীটি আজ বিলুপ্তির পথে।

গ্রাম-গঞ্জে এখন আর খুব একটা খেঁকশিয়ালের দেখা মিলছেনা। জঙ্গল কেটে ফেলা, ঝোপঝাড় বিলীন হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে চাষ বাসে অতিরিক্ত সার, কীটনাশক প্রয়োগের ফলে তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। যার ফলে শিয়াল এখন আর বংশবৃদ্ধিও করতে পারছেনা ।

 

বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ বলেন, ‘দুই প্রজাতির শিয়ালের মধ্যে পাতি শিয়াল অনেক কষ্টে টিকে থাকলেও খেঁকশিয়াল বিপন্ন হয়ে পড়েছে। দক্ষিণবঙ্গে এদের একেবারেই পাওয়া যাচ্ছেনা। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় খেঁকশিয়ালের দেখা মিললেও তা একেবারেই নগণ্য । সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলার কয়েকটি কবরস্থানে এদের দেখা মিলেছে। জঙ্গল উজাড় হওয়ায় কবরস্থানের সবুজ ঘাস বিছানো মাটিতে গর্ত করে এরা নিজেদের আবাসস্থল বানিয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘কবরস্থানে এখনো ঝোপঝাড়, জঙ্গল থাকার কারণে খেঁকশিয়াল আশ্রয় নিয়েছে সেখানে। ’

news24bd.tv

এসব গোরস্থানের আশেপাশের বাসিন্দারাও তাদের নিরাপদে বসবাস করার ব্যাপারে বেশ সচেতন । জেলার বোদা, তেঁতুলিয়া ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি গোরস্থানে বিপন্ন প্রজাতির খেঁকশিয়ালের দেখা মেলে। এরা ইঁদুর,মুরগি এবং সুযোগ বুঝে মাঝে মাঝে কৃষকের ছাগলও খেয়ে ফেলে। তবে এই এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করে খেঁকশিয়াল তাদের কোন ক্ষতি করেনা। তাই তাদের দাবি, এসব খেঁকশিয়ালকে টিকিয়ে রাখার উপায় বের করা হোক।  

বোদা উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামের গোরস্থানের ধার ঘেঁষে কাজিদের বাড়ি। এই বাড়ির কাজি বাবু (৩৫) জানান, ‘বেশ ক’বছর ধরে এই গোরস্থানে খেঁকশিয়াল দেখে আসছি । এই এলাকার কেউই ওদের ক্ষতি করেনা। তবে মাঝে মাঝে সাঁওতালরা তাদের শিকার করতে আসে । কিন্তু আমরা তাদের শিকার করতে দেইনা।  

বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাটা পাড়া সরকারি প্রার্থমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘আগে খুব দেখা যেতো শিয়াল। রাতের বেলা তাদের ডাক শুনতে ভালোই লাগতো । এখন বন, ঝোপ-ঝাড় উজাড় হওয়ায় খুব একটা চোখে পড়েনা। ইদানিং কবরস্থানগুলোতে কিছু কিছু খেঁকশিয়াল দেখা যাচ্ছে ।   

news24bd.tv

লাল,ধুসর,বাংলা খেঁকশিয়ালসহ বহু প্রজাতির খেঁকশিয়াল দেখা যায় পৃথিবীতে। এরা অত্যন্ত ধূর্ত এবং চালাক প্রাণী । প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর প্রায় সব দেশের উপকথায় শিয়ালের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী, শিয়াল শিকার করা নিষিদ্ধ।  

এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি খেঁকশিয়াল বছরে ৯০০ পাউন্ডের সমপরিমাণ ফসল রক্ষা করে। এর ফলে কৃষকেরা লাভবান হয়। ‘শিয়াল পণ্ডিতকে’ টিকিয়ে রাখতে ও তাদের বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে তাই বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় তথা সরকারি সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন পঞ্চগড়বাসী।

হায়দার/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর