অর্থ-লোভে হিজড়া হতে গিয়ে মৃত্যুমুখে যুবক

অর্থ-লোভে হিজড়া হতে গিয়ে মৃত্যুমুখে যুবক

শেখ রুহুল আমিন • ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় হিজড়াদের অর্থের প্রলোভনে অস্ত্রোপচার করে মৃত্যুর মুখে দুই যুবক। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরুষাঙ্গসহ অন্ডকোষ কেটে ফেলে এখন তাদের জীবন বিপর্যস্ত। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।  

জানা যায়, কালীগঞ্জ পৌর শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকার কেসমতের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২২)ও ভোলপাড়া গ্রামের মনিরুল ওরফে কাজলকে (২০) গেল ৭ জুন খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করানো হয়।

এরপর একটি প্রাইভেটকারে করে তাদের যশোরের একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই রাতেই অপারেশন করে যুবকদ্বয়ের পুরুষাঙ্গ কর্তন করা হয়।  

পরের দিন শরিফুল ও কাজলকে মাগুরার একটি বাড়িতে আটকে রেখে নাক, কান ছিদ্র করে হাতে চুড়ি পরিয়ে দেয়। এরপর নিজেদের মতো করে সাজিয়ে দেয় হিজড়ারা।

তাদের একজনের নাম রাখা হয় মনিরা।  

তবে যুবকদ্বয়ের পরিবারের সদস্যদের চাপের মুখে গেল ১৮ জুন সকালে কালীগঞ্জে তাদের পিতা-মাতার কাছে ফিরিয়ে দেয় হিজড়ারা। পরে শরিফুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কালীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।  

কর্তব্যরত কালীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সুলতান আহমেদ বলেন, এ ধরনের অপারেশন একটা আইন বিরোধী কাজ। রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। তাকে উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়া দরকার। অপারেশনটি মেজর বলে জানান ডাক্তার সুলতান আহম্মেদ।  

শরিফুল ইসলাম পেশায় একজন দিনমজুর। সে মাটি কাটার কাজ করতো তার বাবার সাথে। এ কাজের পাশাপাশি শরিফুল ও কাজল হিজড়াদের সাথে কালীগঞ্জ শহরে সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার তুলা আদায় করতো। কিন্তু দু’জনকেই অর্থের প্রলোভন দেখানো হয়। এজন্যই নাকি তারা পুরুষাঙ্গ কেটে হিজড়া হয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছিল।

কর্মক্ষম ও সুস্থ-সবল দুই ছেলের এমন কাণ্ডে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে দিনমজুর পরিবার দুটি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় রত্না হিজড়ার লোভনীয় প্রলোভনে তারা এ কাজ করেছে।

শরিফুলের বাবা কেসমত আলী জানান, কালীগঞ্জ শহরের দাসপাড়ার হিজড়া সর্দার রত্না শরিফুল ও কাজলকে টাকা ও বাড়ি-গাড়ির প্রলোভন দেখিয়ে ঈদের ১০ দিন আগে বেড়ানোর নাম করে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তাদের পাওয়া যাচ্ছিল না। ১৫ দিন পর তারা বাড়িতে ফিরে আসে।  

এরপর দেখা যায়, তাদের উভয়েরই পুরুষাঙ্গসহ অন্ডকোষ কেটে বাদ দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিছানায় শুয়েই সময় পার করছি। আমার পরিবারও চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছে না।

ভুক্তভোগী কাজল হোসেন বলেন, আমাকে প্রলোভন দেখিয়ে রত্না ও আসমানী হিজড়া বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেত। আমি হিজড়া হলে চাপালী বাজার ও স্থানীয় কয়েকটি গ্রামে অর্থ রোজগারের ব্যবস্থা করে দেবে বলে আশ্বাস দেয়। এরপর তারা আমাকে ও শরিফুলকে অচেনা জায়গায় একটি ভাঙাচোরা বাড়িতে নিয়ে যায়। সকালে জ্ঞান ফিরলে দেখতে পাই আমাদের গোপনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে এবং নাক ও কান ফোঁড়ানো হয়েছে।

কাজলের বাবা শামসুল ইসলাম জানান, আমার ছেলের জীবনটাতো নষ্ট হয়েছেই। এখন আমি তার চিকিৎসার খরচও বহন করতে পারছি না।

এদিকে, হিজড়া সর্দার রত্নার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ভাগ্নে আজিজুল জানান, তিনি ভারতে গেছে। কবে ফিরবে কেউ জানে না।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) ডা. জাহিদুর রহমান জানান, এভাবে কোনো পুরুষকে নারীতে পরিণত করা যায় না। এতে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।  

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে কেউ কোনো অভিযোগ দিতে আসেনি। থানায় লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


রুহুল/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর
 

সম্পর্কিত খবর