জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দেওয়ার নেপথ্য কারণ 

এক ব্যাক্তির হাতে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দেওয়ার নেপথ্য কারণ 

অনলাইন ডেস্ক

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ গত সোমবার মুক্তি পেয়েছেন।  যুক্তরাজ্যের একটি কারাগারে বন্দী ছিলেন। নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছেন। আজ বুধবার তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ সাইপানের একটি আদালত তাঁকে মুক্ত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনাটি হঠাৎই যেন ঘটল। তার ভক্তরাও আশা করেননি এমনটি যে যুক্তরাষ্ট্র এতো সহজে তাকে ছেড়ে দিতে পারে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে স্বেচ্ছায়  ৭ বছর  নির্বাসন এবং ৫ বছর কারাগারে বন্দী থাকতে হয়েছে। এক যুগেরও বেশি।
 
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অনেক গোপন নথি একের পর এক ফাঁস করেছিলেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তিনি ছিলেন চক্ষুশূল। এই তাকেই বা কেন ছেড়ে দেওয়া হলো এ নিয়ে বিবিসি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।  
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী তাঁর মুক্তি সম্ভব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির জেরে। চুক্তিটি কূটনীতি, রাজনীতি ও আইনের কয়েকটি দিক বিবেচনা করে।  
 যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) এক বিবৃতিতে বলছে, চুক্তিসংক্রান্ত একটি আবেদন গত মার্চে প্রথমবারের মতো তাদের নজরে আসে। এরপর থেকে অ্যাসাঞ্জের মুক্তির কৌশল এবং অ্যাসাঞ্জ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চাওয়া এক বিন্দুতে এনে মার্কিন ফেডারেল বিচারকের সামনে উপস্থাপনের উপায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিয়ে আসছে সিপিএস।
তবে এই সমঝোতা চুক্তির বীজ হয়তো বপন করা হয়েছিল বেশ আগেই, ২০২২ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ায় নতুন সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সরকার চেয়েছিল, বিদেশের কারাগারে বন্দী অস্ট্রেলীয় অ্যাসাঞ্জকে মুক্ত করতে।  
অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছিলেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যা করেছেন, এর সবকিছু তিনি সমর্থন করেন না। কিন্তু অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে যা যা ঘটেছে, সেটা যথেষ্ট হয়েছে। এখন তাঁকে (অ্যাসাঞ্জ) মুক্ত করে সময়।  
জানা যায়, এরপরই অস্ট্রেলিয়ার আইনপ্রণেতাদের একটি দল গত সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটন যান। অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়ে তাঁরা মার্কিন কংগ্রেসে আলবানিজের হয়ে তদবির করেন। পরের মাসেই রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যান আলবানিজ। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বাইডেনের কাছে অ্যাসাঞ্জের মুক্তির প্রসঙ্গ তোলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
অ্যাসাঞ্জের মুক্তির প্রসঙ্গটি গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে তোলেন আলবানিজ। ভোটাভুটিতে আইনপ্রণেতারা অ্যাসাঞ্জকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসার অনুমতি দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানানোর প্রক্রিয়াকে জোরালোভাবে সমর্থন করেন।
অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়ে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে লন্ডনে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার পদে যোগ দিয়েছিলেন স্টিফেন স্মিথ। বলা হয়, তিনি অ্যাসাঞ্জের একজন ভক্ত।  
২০২৩ সালের এপ্রিলে যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ কারাগারে গিয়ে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দেখা করেন স্টিফেন স্মিথ। তিনি আইনি বিষয়ে যুক্করাজ্য , যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে যোগাযোগ রক্ষা করেন।  
ব্যারিস্টার গ্রেগ বার্নস অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাসাঞ্জের মুক্তির প্রচারণায় আইনি উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, এখানে রাজনীতি একটি পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামনে অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়ে প্রথম কথা তুলেছিল আলবানিজ সরকার। এ কাজে আলবানিজ বিরোধীদের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন। পুরো অস্ট্রেলীয় জাতি যেন এই ইস্যুতে এক হয়ে গিয়েছিল।  
অ্যাসাঞ্জের মুক্তির জন্য যে বিষয়টি প্রথম উত্থাপন করা হয় সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্র  বাক্স্বাধীনতার কথা বলে , এখন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রশ্নে কোথায় তবে তাদের বাক স্বাধীনতা ? 
সিপিএসের প্রত্যর্পণবিষয়ক সাবেক প্রধান নিক ভামোস বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের এমন নির্দেশনা অ্যাসাঞ্জ ও মার্কিন কর্তৃপক্ষ—উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসতে ও সমঝোতা চুক্তি চূড়ান্ত করতে চাপে ফেলে দেয়। ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই দুই পক্ষ আলোচনার টেবিলে বসে। ’
হাইকোর্টের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা আছে আগামী ৯ ও ১০ জুলাই। উভয় পক্ষ বুঝতে পারে, পরবর্তী শুনানির আগেই সমঝোতা চুক্তির উপযুক্ত সময়।
গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে চলমান বিচারপ্রক্রিয়া প্রত্যাহার করে নিতে অস্ট্রেলিয়া সরকার অনুরোধ করেছে। আর তাঁর প্রশাসন সেটা বিবেচনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বে দীর্ঘদিন ধরে ‘গলার কাঁটা’ হয়ে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। তাই দেশ দুটি চুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। আর বাইডেন প্রশাসন চাইছিল, আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে অ্যাসাঞ্জের বিষয়টি সমাধান করতে। তবে অস্ট্রেলীয় সরকার সময় দিতে রাজি ছিল না।  

news24bd.tv/ডিডি