ভারতে শতাধিক মানুষের প্রাণ গেল যেভাবে 

ভারতে শতাধিক মানুষের প্রাণ গেল যেভাবে 

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে ধর্মীয় এক অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।  শেষ খবর পর্যন্ত এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ অন্তত ১০৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন।   প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে হাথরাসের পদদলনের এই ঘটনা ঘটে।

হাথরাস পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রাজেশ কুমার সিং বলেছেন, হাতরাস জেলার একটি গ্রামে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলনের ওই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পদদলনের এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

হিন্দুস্তান টাইমস বলেছে, হাথরাস জেলার সিকান্দ্রা রাও এলাকার রাতি ভানপুর গ্রামে বিশেষ তাঁবু টানিয়ে সৎসঙ্গ সভার আয়োজন করা হয়েছিল।

সেখানে ধর্মীয় এক প্রচারক অনুসারীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে তাঁবুতে ঘেরা থাকায় অনুষ্ঠানস্থলে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে সৎসঙ্গ সভায় আসা লোকজনের মাঝে অস্বস্তি তৈরি হয়। অনুষ্ঠানটির সময় সেখানে প্রচণ্ড গরম ছিল।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘আমরা সৎসঙ্গের জন্য এসেছি। সেখানে প্রচুর ভিড় ছিল। সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পরপরই আমরা বাইরে চলে যেতে শুরু করি। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ অনেক সরু ছিল। আমরা যখন মাঠের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি, তখন হঠাৎ করে হৈ চৈ শুরু হয়। সেই সময় আমরা কী করব বুঝতে পারছিলাম না। অনেক মানুষ মারা গেছেন। ’’

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সবাই বেরিয়ে আসতে শুরু করে। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরের একটি ড্রেন ঘেঁষে রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। এই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় একের পর এক মানুষ ড্রেনে পড়তে থাকেন। এতে কিছু মানুষ পিষ্ট হয়েছেন। ’’

হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে বিপর্যয়ের কারণ নিয়েও। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় সৎসঙ্গের আয়োজক কমিটিকেই দায়ী করছেন অনেকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, সৎসঙ্গের জন্য যে প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছিল, তা ঘেরা ছিল। পাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। প্যান্ডেল খোলামেলা থাকলেও আর্দ্রতা এবং গরমের কারণে সকলেই হাঁসফাঁস করছিলেন। ফলে সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পরেই মানুষ হুড়মুড়িয়ে মাঠের বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আসা-যাওয়ার জন্য যে গেট তৈরি হয়েছিল, সেটিও অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হওয়ার কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অনেকে মাটিতে পড়ে যান। বাকিরা তাঁদের উপর দিয়েই বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেন।

তবে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এদিকে, পদদলনে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

এই ঘটনা তদন্তে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যোগী আদিত্যনাথ। পাশাপাশি দুর্ঘটনাস্থলে ত্রাণ কাজ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

news24bd.tv/তৌহিদ