সহিংসতার বিরুদ্ধে ইসলাম যে বার্তা দেয়

সহিংসতার বিরুদ্ধে ইসলাম যে বার্তা দেয়

অনলাইন ডেস্ক

শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধির জন্য যেসব কাজ হুমকি তা ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম মানবজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।  মানুষের জন্য কল্যাণকর নয় জেনেও কোনো কাজ করলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে ফ্যাসাদ এবং তা শরিয়তে নিষিদ্ধ।

ফ্যাসাদকারীরা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধর্ম ও মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এক যুদ্ধে লিপ্ত। তাদের এমন অভ্যাস ও কাজ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, "যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয় তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে। নতুবা তাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে কিংবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হলো তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা।

আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি"(সূরা মায়েদা: ৩৩)।  

ইসলাম মানে আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মাধ্যমে তার কাছে আত্মসমর্পণ করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করা। ইসলামপ্রিয় মুসলমানের পরিচয় দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৮৪)।  

কোরআন ও হাদিসের আলোকে সহিংসতা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণগুলো তুলে ধরা হলো—

১. আল্লাহ সহিংসতা অপছন্দ করেন : আল্লাহ সহিংস ও ধ্বংসাত্মক কাজ পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়; আল্লাহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্তদের ভালোবাসেন না। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৬৪)

২. সহিংস ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত : যারা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে দেশ ও জাতির ক্ষতি করতে চায়, শেষ পর্যন্ত তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৭)

৩. সহিংসতা মুনাফিকদের কাজ : কোরআনে সহিংসতাকে মুনাফিক বা কপট লোকদের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদেরকে বলা হয়, পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি কোরো না, তারা বলে আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১১-১২)

৪. কল্যাণের পরিপন্থী : সহিংসতা সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করে, যা কল্যাণের পরিপন্থী কাজ। আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না, তাঁকে (আল্লাহকে) ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকবে। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)

৫. সহিংসরা কল্যাণকামী নয় : যারা সমাজে সহিংসতা সৃষ্টি করে তারা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকামী নয়। কেননা কল্যাণকামিতা ও সহিংসতা কখনো এক হতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ জানেন কে কল্যাণকামী এবং কে অনিষ্টকারী। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২২০)

ক্ষমতার জন্য সহিংসতা কে আরও  বেশি নিন্দনীয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে- 

ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য সহিংসতায় লিপ্ত হওয়া আরো বেশি নিন্দনীয়। যারা এমন করবে পরকালে তাদের কোনো অংশ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘এটা আখিরাতের সেই আবাস, যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য, যারা এই পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম আল্লাহভীরুদের জন্য। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৮৩)।  

সাধারণ নাগরিক সহিংসতা রোধে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারে। তা হলো—

১. সচেতনতা তৈরি : সহিংসতা রোধে সাধারণ মানুষ নিজে সচেতন থাকবে এবং অন্যকেও সাবধান করবে নতুবা সমাজের বিপর্যয় রোধ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের পূর্বযুগে আমি যাদের রক্ষা করেছিলাম তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া সজ্জন ছিল না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাতে নিষেধ করত। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৬)

২. সহিংসতা রোধে সহযোগিতা করা : সমাজ ও রাষ্ট্রে সহিংসতা রোধে কল্যাণকামীরা পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। কেননা আল্লাহ কল্যাণের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎকাজ ও আল্লাহভীতিতে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমা লঙ্ঘনে পরস্পরকে সাহায্য করবে না। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত :২)

৩. আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া : মুমিন সর্বোপরি দেশ ও জাতির শান্তি, কল্যাণ ও স্থিতি কামনা করে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে। ইরশাদ হয়েছে, সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো।  (সুরা :আনকাবুত,আয়াত : ৩০)

ইসলামের সামগ্রিক পাঠ ও নবীজির সিরাত সামনে রাখলে এ কথাই বুঝে আসে, ইসলাম মানুষের মাঝে সাম্য-শান্তি ও অহিংসা নিশ্চিত করে। মুসলমান হিসেবে সবার কর্তব্য, ইসলামের মর্মবাণী আত্মস্থ করে পার্থিব জীবন ও পরকালীন জীবন সুন্দর করা।

news24bd.tv/আইএইচ

এই রকম আরও টপিক