ধৈর্যশীলদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার

ধৈর্যশীলদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার

 মুফতি নাহিদ হাসান

ধৈর্য এমন একটি মানবিক গুণ। এর অনুশীলন ছাড়া জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায় না। মুমিনের জীবনে ধৈর্য এক অনিবার্য বস্তবতা। অবশ্য অর্জনীয় এক বিষয়।

আরবিতে ধৈর্য শব্দটি ‘সবর’ হিসেবে পরিচিত। পবিত্র কোরআনে প্রায় ৯০টি স্থানে শব্দটির এসেছে। সবর হচ্ছে, বিপদাপদে নিজকে স্থির রাখা ও আল্লাহর তাআলার ফায়সালার ওপর সন্তষ্ট থাকা।

পবিত্র কোরআনে পার্থিব জীবনে ধৈর্য ধারণকারীদের সুসংবাদ দিতে বলা হয়েছে।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয় (কখনো) ক্ষুধা, প্রাণ ও সম্পদ, ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে। সুসংবাদ শোনাও তাদের যারা ধৈর্য ধারণ করে। যারা তাদের কোনো বিপদের সময় বলে, আমরা সবাই আল্লাহর এবং আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৬)

ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য আল্লাহর সাহায্য

বিপদাপদে ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা ধৈর্য ও নাাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য ধারণকারীদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)

ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য পুরস্কার

পবিত্র কোরআনে ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য মহান আল্লাহ বিভিন্ন পুরস্কারের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কাছে যা কিছু আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা স্থায়ী। যারা ধৈর্য ধারণ করে আমি তাদের কাজ অনুযায়ী অবশ্যই প্রতিদান দেব। (সুরা নাহল, আয়াত: ৯৬)

ধৈর্য ধারণের উপায়
হাদিস শরিফে ধৈর্য ধারণে উৎসাহিত করা হয়েছে। এক হাদিসে এসেছে, একবার কিছু আনসার সাহাবি নবী (সা.)-এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তাদের যে যাই চাইলেন, তিনি তাই দিলেন। এক পর্যায়ে তাঁর কাছে যা ছিল তা শেষ হয়ে যায়। সবকিছু দান করার পর তিনি বললেন, আমার কাছে যা কিছু থাকে তা থেকে আমি কিছুই সঞ্চয় করি না। অবশ্য যে ব্যক্তি নিজেকে অন্যের কাছে চাওয়া থেকে পরিত্রাণ চায় আল্লাহ তাঁকে তা দান করেন। আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করে তিনি তাকে ধৈর্য দান করেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দেওয়া হবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭০)

উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস থেকে বোঝা যায়, সবর বা ধৈর্যের গুণটি অর্জনের জন্য নিজের প্রচেষ্টা থাকতে হবে। পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে তা চাইতে হবে। এরমাধ্যমে ইহকালের সাফল্য ও রহমত থেকে শুরু করে পরকালের শান্তি ও সুখের নিশ্চয়তা রয়েছে।  

দুনিয়াতে মানুষের বিপদাপদ আসা স্বাভাবিক। তাই কোনো কিছু না পেলে বা বিপদে পড়লে ধৈর্যহারা হওয়া অনুচিত। বরং মহান আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত। কারণ আমরা জানি না, কোন জিনিস আমাদের জন্য ভালো এবং আর কোন জিনিস মন্দ। তাই রাসুল (সা.) সবর বা ধৈর্যকে সবকিছুর আলো হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘সবর বা ধৈর্য হলো আলো। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২২৯০২)

অর্থাৎ সবর বা ধৈর্য জীবনের সবক্ষেত্রকে আলোকিত করে। তাই জীবনকে রাঙাতে আলোর ছোঁয়া পেতে অবশ্যই সবর অবলম্বন করা উচিত। মহান আল্লাহ আমাদের সবরের গুণ অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন

লেখক, মুহাদ্দিস, জামিয়া আরফান আলী মহিলা মাদ্রাসা, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল।

ইমাম ও খতিব, ঘাটান্দী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল।