নোবেল জয়ে মিলেছিল বিশ্বজোড়া খ্যাতি, ভাগ্যে জুটেছিল কারাদণ্ড

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ড. ইউনূস

নোবেল জয়ে মিলেছিল বিশ্বজোড়া খ্যাতি, ভাগ্যে জুটেছিল কারাদণ্ড

অনলাইন ডেস্ক

এক দফা অসহযোগ আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। অস্থিতিশীল দেশ পুনর্গঠনের জন্য অন্তর্রবর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে সরকার প্রধান হিসেবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করে।

জানা যায়, ড. ইউনূস এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন।

ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র মুক্তিতে অবদানের জন্য ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি যিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে তিনি তাঁর কাজের জন্য স্বীকৃতি পেলেও বরাবরই ড. ইউনূসের সমালোচনা করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগ ওঠে। তবে সেটা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি অনেকের। গত মাসে বাংলাদেশে যখন কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় তখনও শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি তাঁর বিতৃষ্ণা প্রকাশ করেছিলেন ইউনূস।

ড. ইউনূসের জন্ম ১৯৪০ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে। চট্টগ্রামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাংলার এই বীর সন্তানের অনেক স্মৃতি। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন তিনি। তারপরে চট্টগ্রাম কলেজের অর্থনীতির লেকচারার হিসেবে যোগ দিয়েছিলন ইউনূস। পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

এরপরে দেশে ফিরে এসে বাংলাদেশের সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পরে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশের দারিদ্র বিমোচন করার লক্ষ্য নিয়ে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করেন ইউনূস। দরিদ্র মানুষদের উন্নতির জন্য তিনি ঋণ দেওয়ার কাজ শুরু করেন। পরেই সেটারই নাম হয় ‘গ্রামীণ ব্যাংক’। এর সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের দায়িত্বও নিয়েছিলেন তিনি।

দেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগ ওঠার পরে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সরকার। নানা ভাবে আদালতে হেনস্থা হন তিঁনি।  এই মামলায় তাঁর ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। যদিও আদালতের নির্দেশেই জেলে যেতে হয়নি ইউনূসকে। নানা কারণে হাসিনার সঙ্গে তাঁর বিরোধও হয়।

প্রসঙ্গত, ড. ইউনূস একজন সামাজিক উদ্যোক্তা এবং ব্যাংকার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া ছাড়াও বিশ্বের নানা সংস্থার কাছেও স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। আগে একবার রাজনৈতিক দল গড়ার চিন্তাও করেছিলেন ইউনূস। যদিও সেই পরিকল্পনা থেকে পরে পিছিয়ে এসেছিলেন তিনি।

বাঙালির গর্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তাঁর দাম আমরা কতটুক দিতে পেরেছি আমরা জানিনা। যে দেশে নাকি গুনির কদর হয়না সে দেশে গুনি জন্মায় না। তবুও একজন ইউনূস জন্মেছিলেন, আরো অনেক দেশপ্রেমিক জন্মেছিলেন, এটা আমাদের পরম সৌভাগ্য। যদিও তাঁদের কাজের প্রতি, তাঁদের প্রতি আমাদের দেশ কতটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে, সেটা নিয়ে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন থেকেই যায়! তবে অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রধান হলে, এটিও তাকে দেওয়া এই জাতির পক্ষ থেকে সম্মান।

news24bd.tv/DHL