সাংবাদিকতাকে ঢেলে সাজানোর দাবি গণমাধ্যম সংস্কার উদ্যোগের

সাংবাদিকতাকে ঢেলে সাজানোর দাবি গণমাধ্যম সংস্কার উদ্যোগের

অনলাইন ডেস্ক

গণমাধ্যমকর্মীদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের কারণে মানুষের মনে গণমাধ্যম নিয়ে তৈরি হয়েছে নেতিবাচক ধারণা। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে পুরো ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন স্বাধীন সাংবাদিকতার প্লাটফর্ম 'গণমাধ্যম সংস্কার উদ্যোগ'।

শনিবার (১৭ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আলোচনা সভায় গণমাধ্যম সংস্কারে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এ সময় করপোরেট ইন্টারেস্ট, লেজুড়বৃত্তিক সাংবাদিক সংগঠন এবং নিজেদের লোভ ও পক্ষপাতের বিরুদ্ধে লড়াই করার আহবান জানান কলামিস্ট ও গবেষক আলতাফ পারভেজ।

এসময় বক্তারা বলেন, গণমানুষের কথা আর সত্য কে নিঃসঙ্কোচে সামনে আনতে যে কোন দেশেই বড় ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম। কিন্তু সেই গণমাধ্যমদলের মোড়কে বন্দী হলে তা আস্থাহীন হয়ে ওঠে জনমানুষের কাছে। যার সবচেয়ে বড় নিদর্শন দেখা যায় ২০২৪ এর জুলাই হত্যাকাণ্ডে। ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা তুমুল প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

সত্যিকারের জবাবদিহিতামূলক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শনিবার আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বাধীন সাংবাদিকদের প্ল্যাটফর্ম 'গণমাধ্যম সংস্কার উদ্যোগ'। যেখানে দীর্ঘদিন মুক্ত সাংবাদিকতা করতে না পারার আক্ষেপ উঠে আসে সাংবাদিকদের বক্তব্যে। নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের দিয়ে সংবাদমাধ্যম পরিচালনায় জোর দেন তারা।

এসময় আলোচনায় গণমাধ্যম সংস্কার উদ্যোগের সংগঠক আরিফুল সাজ্জাত বলেন, গণমাধ্যম সংস্কারে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত সাংবাদিকদের হত্যার বিচার নিশ্চিত, গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারী মালিক ও নির্বাহীদের তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনা এবং সংস্কারের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠনসহ ১৩ দফা দাবি জানান গণমাধ্যম সংস্কারের অন্যতম এই সংগঠক।

গণমাধ্যম সংস্কার উদ্যোগের সংগঠক আহম্মদ ফয়েজ বলেন, লেজুড়বৃত্তিক সাংবাদিক সংগঠন দিয়ে সাংবাদিক সমাজের মুক্তি মিলবে না।

এসময় সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ গণহত্যার দায়ে একশ্রেণির সাংবাদিককেও দায়ী করে বলেন, কর্পোরেট ইন্টারেস্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে সাংবাদিকদের। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা দলমত নির্বিশেষে পেশার স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের ব্যাপক সংস্কারকল্পে ১৩ দফা দাবি পেশ করেন সাংবাদিকরা। দাবিগুলো হল-

* ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত সাংবাদিকদের হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

* ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে আহত-নিহত গণমাধ্যমকর্মী ও আক্রান্ত গণমাধ্যমকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সকল বন্ধ গণমাধ্যম অনতিবিলম্বে খুলে দিতে হবে।  

* গণমাধ্যমের যেসব মালিক ও নির্বাহীরা গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করেছে, তদন্ত সাপেক্ষ তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

* গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য অভিন্ন ওয়েজবোর্ড প্রণয়ন করতে হবে। অনতিবিলম্বে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করেছে বলে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে কিন্তু বাস্তবে বাস্তবায়ন করেনি তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে।

* শ্রম আইন অনুযায়ী লভ্যাংশ বণ্টন করতে হবে।

* উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অগণতান্ত্রিক উপায়ে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের দখলদারিত্বের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

* গণমাধ্যম কর্মীদের সর্বস্তরের ভয়ভীতি বন্ধ করতে হবে। গণমাধ্যম পরিচালনা সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ এবং সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে সরকার ও বিশেষ সংস্থার নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ প্রবণতা চিরতরে বন্ধ করতে হবে।  

* গণমাধ্যম পরিচালনার ধরণসহ সার্বিক বিষয়ে সংস্কারের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করতে হবে।

* গণমাধ্যম ও স্বাধীন মত প্রকাশ বিরোধী নিবর্তনমূলক আইনের সকল ধারা বাতিল করতে হবে।

* আইসিটি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি আইনের অধীনে গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

* সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

* বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের গুম, নির্যাতন ও হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে।

* সব গণমাধ্যম যেন গণমানুষের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতে পারে সেই নিশ্চয়তার বিধান করতে হবে।

news24bd.tv/SC