বন্যায় ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে: ইউনিসেফ

সম্প্রতিক বন্যা

বন্যায় ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে: ইউনিসেফ

অনলাইন ডেস্ক

চলমান বন্যায় বাড়িঘর, স্কুল ও গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের ২০ লাখেরও বেশি শিশু  ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলছে, বিগত ৩৪ বছরে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়ংকর এই বন্যায় ৫৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অবস্থায় খাদ্য বা জরুরি ত্রাণ সরবরাহ ছাড়া পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ ও শিশুর জন্য ইউনিসেফ জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহযোগিতা প্রয়োজন।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নজিরবিহীন প্রবল মৌসুমী বৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলো উপচে পড়ছে। যার ফলে এখন পর্যন্ত ৫২ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।  
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মাথা গোঁজার একটু আশ্রয় খুঁজছেন; বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তা, মাঠ-ঘাট আর ক্ষেত। লাখ লাখ শিশু ও তাদের পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন, তাদের কাছে নেই কোনো খাবার কিংবা জরুরি কোনো ত্রাণসামগ্রী।

সরকারি লোকজন ও স্বেচ্ছাসেবকেরা উদ্ধার-অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌসুমী বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে আগামী দিনে আরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

এতে বলা হয়েছে, দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউনিসেফ দুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফের সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ প্রাথমিক যাচাই পর্ব চালায়। অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিসেফ এ পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজার শিশুসহ তিন লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে। এসব মানুষের মধ্যে তারা জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন উপকরণ যেমন, ৩৬ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পানি ধরে রাখার জন্য ২৫ হাজার জেরি-ক্যান এবং দুই লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট (মুখে খাবার স্যালাইন) এর ব্যাগ বিতরণ করেছে।

কিন্তু এসবের বাইরেও আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং শিশুদের জন্য জরুরিভাবে নগদ সহায়তা, নিরাপদ পানীয় জল, স্বাস্থ্যবিধি উপকরণ (হাইজিন কিট), জরুরি ল্যাট্রিন তৈরি, স্যানিটারি প্যাড, ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট (মুখে খাবার স্যালাইন) এবং জরুরি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের প্রয়োজন।

অসুস্থ নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং গর্ভবতী মায়েরা যেন নিরাপদে তাদের সন্তান জন্ম দিতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা কার্যক্রম অবিলম্বে চালু করা প্রয়োজন।
বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশে ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিগহাম বলেন, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যা শিশুদের ওপর চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা ও জলবায়ু সংকটের প্রভাবের ভয়াবহতাকে তুলে ধরেছে। অনেক শিশু তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, হারিয়েছে তাদের ঘর-বাড়ি ও বিদ্যালয়; তারা খুবই অসহায় অবস্থায় রয়েছে।

তিনি বলেন, শুরু থেকেই ইউনিসেফ সক্রিয়ভাবে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও মুখে খাওয়ার স্যালাইনসহ জরুরি সেবাসামগ্রী সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু সব শিশুর কাছে পৌঁছাতে এবং শিশুদের ভবিষ্যতের ওপর চলমান এই সংকটের বিধ্বংসী প্রভাব রোধ করতে আরও তহবিলের প্রয়োজন।

ব্রিগহাম আরও বলেন, বছরের পর বছর বন্যা, তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশুর জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিশ্চিতভাবেই শিশুদের জীবন পরিবর্তন করছে। এই অবস্থায় বেশি দেরি হওয়ার আগেই, শিশুদের জন্য বৈশ্বিক নেতাদেরকে জরুরিভাবে কাজ করার এবং তাদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো প্রশমিত করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে আমরা আহ্বান জানাই।

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক