এই মজুরিতে শ্রমিকদের পেট চলে না

ফিরোজ আহমেদ

এই মজুরিতে শ্রমিকদের পেট চলে না

ফিরোজ আহমেদ

কেন যেনো মনে হচ্ছে, অন্তবর্তীকালীন সরকার আর্থিক খাতের সুশাসন, অবকাঠামো ইত্যাদিতে ভালো যদি করতেও পারে, একদম ব্যর্থ হতে পারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে।
শ্রমিক, শিক্ষক, পেশাজীবীসহ সমাজের সবগুলো বর্গকে শত্রু বানিয়ে কোথায় যেতে চায় এই সরকার? এত বিপুল জনসমর্থনকে যদি তারা যদি কেবল ছাত্রদের শক্তি হিসেবে ভুল পাঠ করেন, তাহলে অচিরেই দুটো ভুলের অপরাধে তারা সাব্যস্ত হবেন।
একটা হলো, ছাত্রদের একাংশকে তারা মতাদর্শিক গুণ্ডায় পরিণত করবেন।
দুই হলো, ঐক্যবদ্ধ একটা জাতিকে তারা আবারও বিভক্ত করবেন।


কারখানায় কারখানায় আগুন যদি জ্বলে ওঠে, সেখানে ইন্ধনদাতাদের খোঁজার চাইতে অনেক বড় কাজ হলো শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের সাথে বসা। তাদের দাবি কি, সেটা শোনা।  
পোষাক শ্রমিকদের জীবনের একটা আশ্চর্য ভোগান্তি হলো, এমনকি ভারতীয়দের সব চাইতে বড় পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগের আমলেও এই শ্রমিকরা যে কোন আন্দোলনে বিদেশী পৃষ্ঠপোষকতা, উস্কানির অপবাদ পেয়েছে। অথচ জনস্বাস্থ্যবিদ কিংবা অর্থনীতিবিদ, অধিকাংশই একমত যে এই মজুরিতে শ্রমিকদের পেট চলে না।
  আমি নিশ্চিত যে, আধিকাংশ সুস্থ অর্থনীতিবিদ তাদের অধিকাংশ দাবির সাথে একমত হবেন। পুরোটা যদি শ্রমিকদের কথা মানা না যায়, অন্তত একটা ন্যায্যতার জায়গায় আসুন।
এই কাজটা করার পাশাপাশি খুব সহজেই শ্রমিক এলাকায় বিগত আমলগুলোতে যারা সন্ত্রাসী রাজত্ব গড়ে তুলেছিলো, সেই সব মানুষগুলোকে গ্রেফতার করুন। রাজনৈতিক আশ্রয়ে যেন কেউ নতুন করে ঝুট কাপড়ের সিন্ডিকেট, সরবরাহের সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করুন।
কিন্তু দ্বিতীয় কাজটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও গৌণ। প্রধান কাজ হবার কথা শ্রমিকদের অন্তত শান্ত করা, তাদের দাবি শোনা। সেনা পাঠিয়ে সেটা হবে না।  
জাতীয় মজুরি কমিশনের ঘোষণা দিন। ঘোষণা করুন যে, ন্যায্য এবং গ্রহণযোগ্য একটা মজুরি শ্রমিকদের দেয়া হবে।
উস্কানি শূন্য থেকে আসে না। শুধু শুধু শ্রমিকদের দোষারোপ করা বন্ধ করুন। আরও বন্ধ করুন যে কোন ন্যায্য দাবিকে ষড়যন্ত্র, উস্কানি হিসেবে দেখাবার প্রবণতা। দাবির সারবত্তা আছে কি না, সেটা খোঁজা হলো রাজনৈতিকভাবে প্রজ্ঞাবান একটা সরকারের কাজ। এভাবে সবাইকে ষড়যন্ত্রকারী অভিধা দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া ছিলো শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী আমলের বৈশিষ্ট্য।
অনেক দেরিতে হলেও শেষপর্যন্ত শ্রমিক-কৃষক-শিক্ষার্থী সকলে মিলেই স্বৈরাচারি ওই সরকারকেও গুড়িয়ে দিয়েছে। গায়ের জোর আছে বলেই আমরা যেনো সবগুলো দাবি দাওয়াকে গুড়িয়ে না দেই, বরং আলাপের পরিসরে ডাকি। ব্যক্তিগতভাবে আমার সমর্থন থাকলো শ্রমিকদের বেতনভাতার বৃদ্ধির আন্দোলনে। আমি মনে করি না এটা কারও উস্কানিতে ঘটছে।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমার সমর্থনও অটুট রয়েছে। আমি । আশাবাদী, এই সরকার তাদের ভুলগুলো উৎড়ে নতুন বাংলাদেশের ভিত তৈরি করতে পারবে।

লেখক : গণসংহতি আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ও প্রাবন্ধিক, ইউপিএল প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত।

news24bd.tv/ডিডি

এই রকম আরও টপিক