‘ইসলামী জোট’ গঠনে আলোচনায় কয়েকটি দল 

কায়েকটি ইসলামী দলের প্রতীক ও লোগো

‘ইসলামী জোট’ গঠনে আলোচনায় কয়েকটি দল 

অনলাইন ডেস্ক

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। হাসিনার শাসনামলে যেসব ইসলামী দলকে দমন পীড়নের মাধ্যমে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা হয়েছে, তারা এখন রাজনীতিতে সক্রিয়। এমনকি অভিন্ন উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এসব দল। একটি বৃহত্তর জোট গঠন করে দেশের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পরস্পরের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে তারা।

 ইসলামী ও সমমনা কয়েকটি দলের একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।  

আগের সরকারের সময় নিপীড়নের শিকার ইসলামী দলগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার তাগিদ অনুভব করছেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তাদের প্রত্যাশা, গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসলামী দলগুলো বৃহৎ জোট গঠন করলে রাজনীতিতে নতুন একটি শক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে। নিজেদের মধ্যে মতের ভিন্নতা থাকলেও ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার আলোকে রাষ্ট্র গঠনের অভিন্ন উদ্দেশ্যে তারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

‘ইসলামী জোট’ গঠনের তৎপরতায় কিছুটা এগিয়ে আছে শীর্ষস্থানীয় দুটি ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এরই মধ্যে এ দুটি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমমনা দলগুলোর বড় নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন।

খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিসের মতো পুরনো মিত্রদের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছে দল দুটি। এ ছাড়া জাকের পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইনসানিয়াত বিপ্লবের মতো ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে তাদের।

সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে আমরা প্রতিটি ইসলামী দলের সঙ্গে আলোচনা করব। আমরা সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ’

বৃহৎ জোট গঠনে গত ২০ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে কওমি মাদরাসাভিত্তিক কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলধারার সাতটি ইসলামী দলের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি কয়েকটি অনিবন্ধিত ইসলামী দল এবং গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে নির্যাতনের শিকার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে যৌথ মতবিনিময় করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বৈঠক শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইসলাম কায়েমের জন্য ছোটখাটো মতভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ’

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের সবার মূল লক্ষ্য অভিন্ন, সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আমরা নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। সবার মধ্যেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আগ্রহ আছে। ইনশাআল্লাহ ছোটখাটো যেসব মতপার্থক্য আছে, সেগুলো আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করব। ’

আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক বিভিন্ন ইসলামী দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারের সহযোগীদের সঙ্গে আমরা কোনো আলোচনা করব না। এমন কোনো চিন্তাভাবনা আমাদের নেই। ’

জানা যায়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামী দল ১১টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত ছোট-বড় দল মিলিয়ে বাংলাদেশে ইসলামী দল রয়েছে প্রায় ৭০টি। এতে ধর্মীয় রীতিনীতি ও মতাদর্শ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে রয়েছে নানা মতপার্থক্য।

বৃহৎ ঐক্যের লক্ষ্যে দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দূর করতে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনৈক্যের কারণেই ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসনের নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। আমরা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে আলোচনা চালিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে সব মতপার্থক্যের অবসান ঘটাতে হবে। কারণ আমাদের সবার লক্ষ্য অভিন্ন, ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম। ’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিগত সময়ের নানা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নির্বাচনে ইসলামভিত্তিক দলগুলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে জোটে শরিক হয়েছে। এবার সমমনাদের নিয়ে জোট গঠন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘জনগণের শক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ দেখছেন দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী জোটের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বাদ রেখেই ইসলামী জোট গঠনের দিকে এগোচ্ছেন তাঁরা।

ইসলামী দলগুলো বাংলাদেশের জনগণের জন্য ইসলামের আলোকে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে জোট গঠন করবে বলে জানিয়েছেন জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জোট গঠনে যেকোনো ধরনের আলোচনার প্রস্তাব এলে আমরা অংশ নেব। আমরা অতীতে সব সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা করেছি। জনগণ আমাদের ভূমিকা জানে। অতীতের যেসব জোট দেশের রাজনীতিতে অনাচার-দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণের শক্তি হিসেবে আমরা দাঁড়াতে পারব। ’

খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসীর আলী বলেন, ‘আমরা কথা বলেছি গত সরকারগুলোর লুটপাট, সিন্ডিকেটসহ যাবতীয় জুলুমের বিরুদ্ধে। ’ দ্রুত ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করেন তিনি।
news24bd.tv/আইএএম