ইউনূস সরকারের যত সাফল্য 

ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস 

ইউনূস সরকারের যত সাফল্য 

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেশ কঠিন এক সময়ে দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন তিনি ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা, দেশ ছেড়ে পালান ভারতে। এরপর রাষ্ট্র সংস্কারে ছাত্রদের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ নিতে রাজি হন ড. ইউনূস।

 

গত ৮ আগস্ট সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. ইউনূস। গত এক মাসে কম বাধা-বিপত্তি যায়নি নতুন এই সরকারের ওপর দিয়ে। একে তো দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা, তার ওপর প্রতিটি সেক্টরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন দুর্নীতি আর লুটপাটের কালো থাবা। প্রশাসনও অকার্যকর আর সব জায়গায় ফ্যাসিবাদীদের দোসরদের আধিপত্য।

এর মধ্যে দেশের পূর্বাঞ্চলে দেখা দিলো ভয়াবহ বন্যা। সবকিছু মিলিয়েই গত এক মাস কঠিন সময় পার করেছে ইউনূস সরকার।  

তবে এত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আসছে সাফল্যের খবরও। ধীরে ধীরে কাটছে দুর্যোগের মেঘ, জনগণের আস্থা বাড়ছে সরকারের ওপর।  

৫৭ বাংলাদেশির মুক্তি: অন্তর্বর্তী এ সরকারের এখন পর্যন্ত সেরা সাফল্য ধরতে গেলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক ৫৭ বাংলাদেশি প্রবাসীর মুক্তি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আরব আমিরাতেও প্রতিবাদে নামে বাঙালিরা। তবে দেশটিতে এহেন কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়ার বড় শাস্তি জোটে তাদের কপালে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং বাকি একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তবে আরব আমিরাত প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে ড. ইউনূসের ফোনালাপের পরেই আসে স্বস্তির খবর। গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) জানা যায়, আমিরাত প্রেসিডেন্ট আটক ৫৭ বাংলাদেশিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। পরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে চিঠিও পাঠান ড. ইউনূস।  

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি মনে করি এটা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বিশেষভাবে কার্টেসি (সৌজন্যতা) দেখিয়েছেন আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট। কারণ ড. ইউনূস তাকে এ ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলেন এবং তিনি সেটা রক্ষা করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এ বিষয়টিকে পুরোপুরি কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টের মাধ্যমে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সমন্বয়ক হাসনাত তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত বন্দি ৫৭ বাংলাদেশি স্বৈরাচারবিরোধী প্রতিবাদকারীকে মুক্তি দিয়েছে, যা বাংলাদেশের বড় কূটনৈতিক জয়। ’

বিদেশি সমর্থন আদায়: শপথ নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক শুভেচ্ছায় সিক্ত হতে থাকেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী চিঠি অথবা সরাসরি ফোনকলের মাধ্যমে অভিনন্দন জানান নোবেলজয়ী এই সরকার প্রধানকে। এছাড়া ৫ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন আরও ১৯৮ বিশ্বনেতা। তাদের মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ৯২ জন নোবেলজয়ী রয়েছেন। এতেই বোঝা যায়, অন্তর্বর্তী এই সরকারের ওপর সমর্থন আছে বহির্বিশ্বের।  

দুর্যোগ মোকাবিলা এবং পুনর্বাসন: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের পরেই দেশের পূর্বাঞ্চলে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ মোট ১২টি জেলায় প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এ দুর্যোগে। আগাম পূর্বাভাস পেয়ে বন্যার ভয়াবহটা কমাতে না পারলেও, বন্যা চলাকালীন সময়ে এই দুর্যোগ মোকাবিলাকে সরকার দেয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।  

গত ২৪ আগস্ট বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন ড. ইউনূস। উপকূল ও দুর্গত এলাকায় কর্মরত ৪৪টি এনজিওর কর্তাব্যক্তিরা এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। সেই বৈঠকেই বন্যা মোকাবিলায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ বিতরণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. ইউনূস। এছাড়া ব্যাপক অঙ্কের তহবিল গঠনের সিদ্ধান্তও আসে এই বৈঠকে। যা দিয়ে বন্যা পরিবর্তী সময়ে বন্যার্তদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে।  

সবকিছু ঢেলে সাজানো: দুর্নীতি যেন এ দেশের প্রতিটি সেক্টরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির কালো ছায়া। এছাড়া পদে পদে স্বৈরাচার সরকারের দোসররা তো আছেই। তাই বাংলাদেশ সচিবালয়ে শীর্ষ পদ, বিভিন্ন সংস্থা বা দপ্তরে ও মাঠ প্রশাসনে একের পর বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। পুলিশের আইজিপি, এসবি, র্যাব, পুলিশ কমিশনার পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ছাড়াও সব জেলায় পুলিশ সুপারসহ থানায়ও পরিবর্তন আসছে।

সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিবর্তন এসেছে আরও বেশ কিছু জায়গায়। পুরো আইন-বিচার বিভাগ নতুন করে সাজানো হয়েছে। এছাড়া পদত্যাগ করেছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চপর্যায়ও সাজানো হচ্ছে নতুন করে।  

দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস না পেরোতেই এসব রদবদলে অনেকটা গতি ফিরেছে প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বমহলে।  


রাজনীতিকদের সমর্থন আদায়: অন্তর্বর্তী সরকার শুধুমাত্র ছাত্রদের মনোনীত নয়, এই সরকার সমর্থন পেয়েছে অনেক রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেও। বিএনপির কিছু নেতা নির্বাচনের ব্যাপারে কথা তুললেও, তারাও এই সরকারকে সংস্কারের যৌক্তিক সময় দিতে চায়। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী থেকে শুরু করে আরও অনেক রাজনৈতিক দল সরাসরি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ড. ইউনূসের সরকারকে।  

দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. ইউনূস একাধিকবার রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বসেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেসব বৈঠক থেকেই রাজনীতিবিদদের সমর্থন আদায় করেছে এ সরকার।  

বিক্ষোভ দূর করা: নতুন সরকার গঠনের পর গত ১৫ বছর যারা নির্যাতিত-নিপীড়িত, বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তারা নামেন আন্দোলনে। তবে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই যৌক্তিক দাবি-দাওয়া মেনে তাদের কর্মস্থলে ফিরিয়েছে সরকার।

news24bd.tv/ডিডি
 

এই রকম আরও টপিক