সাংবাদিকদের গণহারে হত্যা মামলায় আসামি করায় বিএফইউজে'র উদ্বেগ প্রকাশ

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী'র সভাপতিত্বে ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিএফইউজে'র নির্বাহী কমিটির সভায় বিভিন্ন হত্যা মামলায় সাংবাদিকদের গণহারে আসামি করা বন্ধসহ ৯ দফা দাবি জানানো হয়।

সাংবাদিকদের গণহারে হত্যা মামলায় আসামি করায় বিএফইউজে'র উদ্বেগ প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী'র সভাপতিত্বে ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিএফইউজে'র নির্বাহী কমিটির সভায় বিভিন্ন হত্যা মামলায় সাংবাদিকদের গণহারে আসামি করা বন্ধসহ ৯ দফা দাবি জানানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এই সভায় এসব দাবি উত্থাপন করা হয়।

৯ দফা দাবিগুলোর মধ্যে অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে,

২. অবিলম্বে বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়া।

৩. গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ দ্রুত কার্যকর করা।

৪. গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএফইউজে নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

৫. সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার।

৬. গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিল।

৭. অপসাংবাদিকতা ও তথ্য সন্ত্রাস বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।

৮. রুহুল আমীন গাজী, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, মাহফুজ আনাম, মতিউর রহমান, আবুল আসাদ, রোজিনা ইসলামসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পতিত সরকারের আমলে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।

৯. ফ্যাসিবাদী সরকারের রোষানলে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকে ক্ষতিপূরণ প্রদান।

বিএফইউজে'র নির্বাহী কমিটির সভায় দেশের সার্বিক অবস্থা এবং গণমাধ্যম পরিস্থিতি নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা বিশদ আলোচনা করেন।

সভায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজে'র সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ডিইউজে-বিএফইউজে সর্বাত্মক সংগ্রামে ৫ জন সাংবাদিক নিহত ও ২০০ জন আহত হয়েছে। বৈষম্যমুক্ত দেশ গঠনে সাংবাদিকদের অবদান অনেক হলেও রাষ্ট্র সংস্কারে যথাযথ অন্তর্ভুক্তি করা হয়নি। সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ তৈরির ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।

এসময় সহসভাপতি একেএম মহসিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সিনিয়র সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন বণ্টনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

সহসভাপতি খায়রুল বাশার বলেন, গত ১৭ বছর সাংবাদিকতা পেশার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। পেশার মর্যাদা রক্ষা করতেই অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বসে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। প্রশাসন ও গণমাধ্যমের বিভিন্ন স্তরে বসে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের সরাতে হবে।

বিএফইউজে'র কোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শে হওয়া দরকার।

সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল বলেন, আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে সরকারের পতন হয়েছে। অতীতে যারা রাজনৈতিক এসাইলাম নিয়ে বাইরে যেয়ে নিরাপদ জীবন যাপন করেছেন এখন তারা দেশে ফিরে বিশেষ সুবিধা নিতে তৎপর।

সহকারী মহাসচিব ড. সাদেকুল ইসলাম স্বপন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন বণ্টনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

নির্বাহী সদস্য শাহীন হাসনাত বলেন, ফ্যাসিবাদ পতনে সাংবাদিকসহ পেশাজীবীরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধিকে অতিমূল্যায়ণ করা হলেও সাংবাদিক নেতৃত্বকে যথাযথ মর্যাদা দেয়া হয়নি। এতে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিপত্তি ঘটছে।

নির্বাহী সদস্য মোদাব্বের হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দেয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রচার সম্পাদক শাহজাহান সাজু বলেন, আমরা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক দুর্যোগে রাজনীতিবিদদের সুরক্ষা দিলেও আজ রাজনৈতিক নেতারা সাংবাদিকদের যথাযথ মর্যাদা দিচ্ছে না। ফ্যাসিবাদের দালালদের সকল ক্ষেত্রে প্রতিহত করতে হবে।

নির্বাহী সদস্য অপর্ণা রায় বলেন, বিএফইউজে মহাসচিবসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে সকল মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।

নির্বাহী সম্পাদক আবু হানিফ বলেন, ফ্যাসিবাদের তাবেদারদের আবার ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহনেওয়াজ বলেন, গত ১৭ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করেছি। যার প্রেক্ষিতে আজ ক্ষমতায় সুশীলরা রয়েছেন। তাদের প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।

সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন বলেন, গণবিরোধী ভূমিকা নেয়ায় খুলনা বেতার ও প্রেসক্লাব গণরোষের শিকার হয়। সরকারী গণমাধ্যমে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররাই এখনো কাজ করছেন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিএফইউজে'র দফতর সম্পাদক আবু বকর বলেন, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

এসময় দেশের বিভিন্ন সাংবাদিক ইউনিয়নের পরিস্থিতি উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল আওয়াল, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আনিসুজ্জামান, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আক্রামুজ্জামান, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বিএফইউজে'র নির্বাহী সদস্য আবদুর রাজ্জাক বাচ্চু, কুমিল্লা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলীল ভূইয়া কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি জিএমএ আশেকউল্লাহ, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আযাদ আলাউদ্দিন, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহফিজুল ইসলাম রিপন, ফেনী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সিদ্দিক আল মামুন, গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এইচএম দেলওয়ার হোসেন, মুন্সিগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী বিপ্লব হাসান।

news24bd.tv/SC