অন শিবির

আরিফুল হোসেন তুহিন

মত-ভিন্নমত

অন শিবির

আরিফুল হোসেন তুহিন

আমার দাদার বাড়ি কুমিল্লার হোমনা উপজেলায়। যেটা ছিল এম কে আনোয়ারের নির্বাচনী এলাকা। এই কারনে আমার কখনই খুব একটা গভীর আওয়ামী বায়াস ছিল না। কিন্তু ছোটবেলায় বুঝতে শেখার পরপরেই যেই শব্দ/গল্প/ছবি দিয়া আমাদের ইতিহাস শিক্ষার হাতেখড়ি হয় সেগুলা কেমন ছিল?
আমি ১৯৯৩ সালে প্রথম শ্রেনীতে পড়া শুরু করি।

সম্ভবত বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের গল্পটা ছিল। বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট গল্প। আমার তখন একটা শখ ছিল অন্য ক্লাসের বাংলা বই পাইলেই সেইখানে কোন বীরশ্রেষ্ঠের গল্প আছে সেইটা পড়া। আমার নাম্বার দুই ছিল হামিদুর রহমান।
সিলেটের গল্প। এই গল্প অনেক বড়। এরপর সম্ভবত খালার বইতে মোস্তফা কামালের গল্প পড়ছিলাম।  
৯৬ আসার আগেই কিন্তু আমরা আমাদের ইতিহাসের শুরুবিন্দু ধরছি ঐখানেই। এই জন্যে আওয়ামী লীগের কোন দরকার হয় নাই। আমার মেঝ মামা তখন জগন্নাথে ইংরেজী ভাষায় পড়াশোনা করেন। মেঝ মামা আমাদের বাসায় ছিলেন কয়েকবছর, তখন জগন্নাথ ছিল কলেজ। বাসায় শেক্সপিয়ারের বই, ফরহাদ খানের প্রতীচ্য পূরাণ। বলতে দ্বিধা নাই, এস্থেঠিক নগ্ন নারীর ছবি খুব কমবয়সেই আমি এই বইতে দেখছি। গ্রীক দেবীদের স্কেচ ছিল। সবচেয়ে ভালো অবশ্যই ছিলেন আফ্রোদিতি। বাকিগুলোও অনন্য। যাই হোক মেঝ মামা তখন আমার আইডল। তার হাত ধরে আমি ওয়া'সিম আকরামের ফ্যান হইছি, ব্রায়ান লারার ফ্যান হইছি, ম্যারাডোনার ফ্যান হইছি, চকবার খাওয়া শিখছি, ক্যারাম আর দাবা খেলা শিখছি। তার কাছে প্রথম শেক্সপিয়ার দেখছি। শেক্সপিয়ারের আমার প্রথম পড়া নাটক হচ্ছে ওথেলো। ইয়েটসের নাম শুনেছি তার কাছে সুতরাং মেঝ মামা আমার ছোটবেলার একটা বড় অংশ জুড়ে আছেন। মেজমামা ছাত্রদল করতেন। তার কাছে আমি শুনেছি বাকশাল শব্দটা প্রথম। জিয়া কিভাবে হাল না ধরলে আমরা কাশ্মীরের মত হয়ে যেতাম সেই গল্প শুনেছি তার কাছ থেকে।  
এর পরের সবকিছুই আমার কাছে একটা কোর অনুভূতির উপরে এড অন। যেমন শেখ রাসেলের মৃত্যুকে হজম করা কোন মানুষের জন্যে কঠিন। আমার বড় মামার সাথে মেজমামার মাঝে মাঝে শেখ সাহেব সংক্রান্ত বিষয়ে লেগে যাইত। বড় মামা শেখ সাহেবের ব্যর্থতা ডিফেন্ড করতেন না। উনার পয়েন্ট ছিল পরিবারের সবাই কেন? এইটা মেডিভাল পৃথিবী না, যেখানে ক্ষমতায় উঠতে হলে পুরো পরিবারকে ম্যাসাকার করতে হয়।  
শিবিরের সাথে আমার প্রথম পরিচয় কিশোর কন্ঠের মাধ্যমে। আমার নানার বাড়িতে আমাদের বাড়ির পাশের কোন বাড়িতে কিশোর কন্ঠ ছিল। ছোটবেলায়  বাড়িতে গিয়ে কোন কাজ থাকত না, তাই আমি এক ছুটিতে ঐ বাড়ির সকল কিশোর কন্ঠ পড়ে ফেলছিলাম। অনেকে অনেক চেষ্টা করে এইগুলো বানাইত আমার কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু ফান্ডামেন্টালি আমার মত যাদের লিটারেচার বা অন্য বইয়ের এক্সেস আছে, তাদের কাছে কিশোর কন্ঠকে গুরুত্ব দেয়া আসলেই সম্ভব ছিল না। খুবই দরিদ্র ব্যাপার স্যাপার। এফোর্ট দিলে, প্যাশনেট হইলেই গুড কোয়ালিটি কন্টেন্ট লেখা যায় না। কিশোর কন্ঠ  স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিয়েটিভিটির প্রকাশ হিসেবে দেখা সম্ভব ছিল না। এইটা হচ্ছে এজেন্ডা ড্রিভেন লেখা লিখির সমস্যা। আপনার উদ্দেশ্য আসলে লেখা না, আপনার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনি যে "কজের" জন্যে লিখছেন এই আইডিয়াটা আপনার পছন্দ হলে যেমন লিখবেন তেমন লেখা। মোটাদাগে পার্ফোর্মেটিভ।
এর পরে আমি জামাত এবং শিবিরের যাদের সাথেই সরাসরি ইন্টারেকশনের সুযোগ হয়েছে, আমি লক্ষ্য করেছি এই বিষয়টা। আমি একজনকে চিনতাম যিনি জামাতের রিপোর্টে ভুল তথ্য দিতেন , অনেক পৃষ্ঠা পড়ে ফেলেছেন ইত্যাদি। পড়ে শুনলাম এইটা নাকি ওয়াইড স্প্রেড সমস্যা।  
সেলফ রিপোর্টিংর বেইজড যেকোন ইভালুয়েশন মেট্রিক গেমিফাই হয়ে যায়। আপনি হয়ত ভাববেন ত্বাকওয়ার জোড়ে এইটা প্রিভেন্ট হবে। এইটা আসলে হয় না, কারন যারা মিথ্যা বলতে রাজি তারা আগায়া যাইতে পারে। তারা নিজেকে বুঝ দেয় এইবার অনেক ব্যস্ততার কারনে একটু বাড়ায়া বললাম, সামনের বার পুষায়ে দিব। সামনের বারও একই জিনিস ভাবে।
এই আত্নশুদ্ধির মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের ১০০ শতাংশ আন স্কেইলেবল জিনিস আধুনিক জুগে এসে জনপ্রিয় করেছে লেনিনবাদী চিন্তাভাবনা। অত্যন্ত দক্ষ প্রফেশনাল বিপ্লবীদের ছোট একটা দল বিপ্লব করবে এই তত্বের প্রচার প্রসার হইছে বিংশ শতকের কমিউনিস্ট দলগুলো দ্বারা। এইটারে বলে ভ্যানগার্ড তত্ব।
আমি কিন্তু মওদুদী সাহেবের লেখা অনেক পরে পরছি। উনার মডেল যে আনওয়ার্কেবল বলশেভিক চিন্তাভাবনার কপিক্যাট সেইটা বুঝতে পারছি আমি অনেক পরে। উনার এই মডেলের দ্বারা আবার সাইয়েদ কুতুবও প্রভাবিত হইয়া গেছিলেন মাঝবয়সের পরে। মাঝবয়সের আগে কুতুব কিন্তু অন্য লাইনের ছিলেন। তিনি শিখা গোষ্ঠীর থেকে খুব বেশী দূরে কোথাও থেকে শুরু করেন নাই। উনাকে বাচায়া দিছে উনি গ্রাম থেকে কায়ড়ো আসছিলেন। এই কারনে কায়রোর নোংরা থেকে তার গ্রামের এক্সপিরিয়েন্স বাচায় দিছিল। উনি হঠাত আরেক দিকে চলে গেলেন কেন? এর মূল কারন দুইটা, উনার উপরে রিপ্রেসন তো আছেই। এছাড়াও উনি মওদুদীর মডেলকে ভায়াবল মনে করছিলেন।
মওদুদীর মডেলকে যারা ভায়াবল মনে করে, তাদের মধ্যে ইমেডিয়েসি চলে আসে। এইটা একটা বিশাল সিস্টেমিক রিস্ক।
আমি সবসময়েই একটা কথা বলি সময়ের চেয়ে ভালো আনবায়াসড জাজ আর কেউ নাই। সময় যা টিকায়া রাখে, সেইটা গুরুত্বপূর্ণ কোনও না কোনও দিক থেকে। এইজন্যেই ১৯৫০ সালের সিনেমা নিয়ে জাজমেন্ট করা সহজ। সময় ফিল্টার আউট করে ফেলে শর্ট টাইম নয়েজগুলোকে।   এই কারনে লং টার্ম থিংকিং, রিয়েলিস্ট হওয়া ইত্যাদি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।  
কিন্তু বিপ্লব স্পন্দিত বক্ষে যেইসব চিন্তা আসে সেগুলো হচ্ছে অধিকাংশই শর্ট টাইম চিন্তায় ভর্তি।  
যখন মার্টিন লুথার চার্চের অথোরিটি ভুলে যেতে বললেন, থিওলজির সিলসিলা অস্বীকার করলেন,  বাইবেলের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরী করতে বললেন, তখন প্রথম যারা এগিয়ে এলো এরা ছিল হাজার বছরের সেরা ফ্যানাটিক। সুসমাচারগুলো এমনভাবে লেখা যা পড়ে মনে হবে, যীশুর দ্বিতীয় আগমন অদুর ভবিষ্যতের একটা ব্যাপার। যারা লিখছেন তাদের মনে আশা আছে এটি তাদের জীবদ্দশায় হয়ে যাবে। সুতরাং উস্তাদ ছাড়া নিজে নিজে বাইবেল পড়া লোকজন বিভিন্ন এক্সট্রিম কনক্লুশনে পৌছায়া পুরা ইউরোপ জুড়ে অরাজকতা লাগায়া দিল। প্রোটেস্টেন্ট আন্দোলন শুরু হইছিল খারেজি চিন্তাভাবনার ফলাফল হিসেবে।   মওদুদীর মধ্যে এই স্পিরিট দেখবেন।  
শিবিরে ফেরত আসি।
সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক পরিবর্তন না চেয়ে যখন আপনার এজেন্ডা হবে আমূল পরিবর্তন, মানুষের মন সহ, তখন আপনার দ্বারা প্র্যাগমেটিক কাজ করা কঠিন হবে। আপনার প্রায়োরিটি হবে আনরিয়েলিস্টিক। আপনি ভ্যানগার্ড বানাতে পারবেন যথেষ্ঠ সংখ্যক লয়ালিস্ট দিয়ে। কিন্তু ফান্ডামেন্টাল চেইঞ্জ আনতে পারবেন না। যেহেতু আপনি "বিপ্লব" চান, সেহেতু আপনি ক্ষমতা পেয়ে অধৈর্য হবেন, জনগন আপনার চিন্তায় কমপ্লাই না করলে আপনি কোয়ের্স করা শুরু করবেন। কারন আপনি তাদের চেয়ে তাদের ভালো বেশী বুঝেন।  
আর যদি আপনি সেটা না করে থাকেন, তাইলে আপনাকে খোলাসা করে বলতে হবে মওদুদীর মডেলের  কোন যায়গায় তারা রিভিশনিজম আনতে চাইতেছেন?
যাই হোক, মওদুদীর এই আদর্শিক বিষয়গুলির সাথে আমার পরিচয় অনেক পরে।  কিন্তু তার আগেই জামায়াত/শিবির সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট/মানুষজন সম্পর্কে আমার পার্সেপশনই ছিল এরা ভীষণ পার্ফোর্মেটিভ, এবং অথেনটিক না।  
খেয়াল করে দেখতে পারেন ৭১ সালের কথায় কিন্তু আমি এখনো আসি নাই। একাত্তরের বিষয়টা ছাড়াই তাদের রাজনীতি নিয়া আমার ভালো ধারনা নাই। একাত্তর আসলে জিনিসটা আরো কমপ্লেক্স করে দিছে।
একাত্তর সালে রাজনৈতিক ভূল করাটা জামায়াত শুধু  মার্চের ২৫ তারিখে করে নাই। ২৫ তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত করছে। এইধরনের ঐতিহাসিক মুহুর্তে যারা ভুল যায়গায় থাকে তাদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হওয়ার কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়। দক্ষিণ  ভিয়েতনামের যারা আমেরিকার পুতুল সরকার চালাইত তাদের কি অবস্থা হয়েছিল সেইটা ঘাইটা দেখতে পারেন। সকল গেরিলা যুদ্ধে এইগুলো হয়। গেরিলাযুদ্ধ এমন একটা এনার্কি, এইখানে পৃথিবীতে কোথাও জেনেভা কনভেনশন কাজ করে নাই, বাংলাদেশেও করে নাই। আমি দুঃখিত অসংখ্য যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হয়েছে বাংলাদেশীদের দ্বারাও। বিহারীসহ অনেক পাকিস্তানপন্থীকে পরিবারপরিজনসহ হত্যা করা হয়েছে। আমি এতগুলো ঘটনা এইখানে লিস্ট করতে পারব, যে আমার ওয়ার্ল্ড লিমিট শেষ হয়ে যাবে। আমি মেটিকুলাসলি এই সম্পর্কিত ডকুমেন্টশন পড়েছি। বাংলাদেশের মানুষের উপর যা হয়েছে , তা অন্তত ডকুমেন্টেড। অপরদিকটা ঠিকমত ডকুমেন্টেড না। এখান থেকে ওখান থেকে তথ্য পড়ে বাকিটা ফিল ইন দ্যা গ্যাপস করতে হয়।
কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ(গনভোট করে দেখতে পারেন), ৭১ সালকে নেট পজিটিভ মনে করে। আমিও করি।  ভিয়েতনামের মত দশকের পর দশক বাংলাদেশ যুদ্ধ করুক, অথবা হেরে গিয়ে পাইকারীভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক, এই কাউন্টারফ্যাকচুয়ালকে এন্টারটেইন করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আবারও বলতেছি এইটাকে দুর্বলতা মনে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। এই যায়গায় যদি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দ্বিমত করত তাইলে আসলে বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ হিসেবে এতদিন টিকে থাকত না।  
এই যায়গায় জামাত এবং শিবির সংশ্লিষ্ট যার সাথেই আমার কথা হয়েছে, কখনও না কখনও  একটা snarky টোনে বলা ৭১ নিয়া কথায় গিয়ে পৌঁছাবে। আমরা যে কত বেকুব এবং ভারতের "ফাঁদে" পা দিয়েছি এইসব কথা বলছে।  
এই ব্যাপারগুলো না মোকাবেলা করা কঠিন। কারন হয় তারা একপাক্ষিক জেনেভা কনভেনশন ব্যবহার করে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস আমলায় পরিনত হয়, অথবা খাজা নাজিমুদ্দীন মার্কা মুসলিম লীগারে। এবং দুইটাই ব্যাড ফেইথে। এমননা সে ১৯৪৮ সালের ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটসের খুব বড় ভক্ত। মওদুদী সাহেব নুরেমবার্গ ট্রায়ালের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। অনেক পাতি মওদুদীর চ্যালার Lore ছিল বিশ্ব ইজতেমা কেন বাটা কোম্পানীর মাঠে হয়, বাটা কোম্পানী ইহুদী সুতরাং তাবলীগি জমাত ইহুদী ইত্যাদি।  
বলতে বাধ্য হইতেছি শিবির নিয়া ইম্প্রেস হওয়া অত্যন্ত কঠিন এইসব বিষয়ের পরে।  
এর কোনকিছুই আসলে তাদের উপ্রে গত ১৫ বছরের যেই রিপ্রেসন চলছে, হত্যা, গুম, অবৈধ ডিটেনশন, ক্রসফায়ার, পঙ্গুত্ব, আইনী হয়রানী ইত্যাদির জাস্টিফিকেশন না। রাষ্ট্রযন্ত্র বিশাল অন্যায় করেছে জামাত এবং বিএনপির মানবাধিকারকে ধবংস করে। তারা দুই জনেই মজলুম। এই আন্দোলনেও বিএনপির কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যাই সর্বোচ্চ গ্রুপ হিসেবে। মজলুম হিসেবে তাদের প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিচার আমি চাই।  
কিন্তু শিবিরের ক্রিটিসিজম যেন আবার "ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র" হিসেবে দেখানোর ফায়দা করা না হয়। রাজনৈতিকভাবে শিবিরের বিরোধীদের উচিত শিবিরের রাজনৈতিক বিরোধীতায় মনোযোগ দেয়া, কারন এখন শিবির অত্যাচারিত হচ্ছে না, সুতরাং শিবিরের ক্রিটিসিজম থামায়া রাখার কোন দরকার নাই।  
যেমন আমার কাছে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আমিও শিবিরের বিভিন্ন বিষয়ে সাফাই শুনতে চাই।  
যেমন ১৯৮৪ সালের শাহাদাত হোসেন সারু হত্যার শিবিরের দিকের ব্যাখ্যাটা কি? আমার জানামতে হত্যাকারী পালাতে গিয়ে অন্য ছাত্রদের হাতে ধরা পরেছিল এবং পরে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্ধী দেয়। শাহাদাত হোসেন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র ছিল।
এই প্রশ্নটা কেন করলাম? ছাত্রদল এবং ছাত্রলীগ কি হত্যা করেনি? অবশ্যই করেছে। ছাত্রলীগ গত পনের বছরে পূর্বের সব নৃশংসতা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।  
কিন্তু ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের লোকজন সাধারনত অস্বীকার করেনা এই ঘটনাগুলো। তাদের ডিফেন্স হচ্ছে ব্যাড এপেল ডিফেন্স।  
আমার পরিচিত যারা জামাত/শিবির সংশ্লিস্ট ছিল, তারা সাধারনত ডিনাই করে , এবং ঐ ক্যাম্পাসে আগে শিবিরের কর্মীর হত্যার ঘটনা তুলে ধরে। যেমন ধরেন আপনি রাজশাহীর ডা রতনের ঘটনা নিয়ে কথা বললে আপনাকে জিগ্যেস করা হবে হোয়াট এব্বাউট ১৯৮২ সালে ছাত্র মৈত্রীর হাতে  খুন হওয়া ৪ শিবির কর্মী ? রিটালিয়েশন হোক আর এগ্রেসর হিসেবেই হোক শিবির যে খুন করেছে তাদের ইতিহাসে এই সত্যই আমার সাথে সরাসরি পরিচিত কোন শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট কাউকে বলতে শুনি নাই।
আমি কিন্তু এই ব্যাপারটাকে আউটরেইজাস মনে করি না। তারা হয়ত মনে করে শিবির হত্যা করতে পারে না, আর যদি করে জাস্টিফাইড কারনে করে। এইরকম বিশ্বাস একটা গ্রুপ করতেই পারে।  
আমার কাছে কিউরিয়াস লাগে এই ব্যাপারটা। নিজের সংগঠনকে অন্যায় করতে সক্ষম না মনে করা একটা ইন্টারেস্টিং ফেনমেনা।  
বটমলাইন হইল,
শিবিরের নতুন নেতারা কি এই সেলফ রিপোর্টেড মেট্রিকের ফলাফল? তাদের চিন্তাভাবনা আসলে কেমন এইসব বিষয়গুলোতে? 
পরিবারের বাইরে পরিবারের নিন্দা না করতে চাওয়ার মত একটা ব্যাপার আছে তাদের মধ্যে। এইজন্যে তাদের অংশ না হইয়া গুড ফেইথে আলাপ চালানো আমাদের জেনারেশনে কঠিন মনে হইত।  
কিন্তু জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়করা তাদের সেফটি সিকুরিটি, রাজনীতি সবকিছুতেই ঢাবি শিবিরকে ট্রাস্ট করছে, সেটার পেছনে নিশ্চয়ই কিছু কারন আছে যা আমরা জানি না।
আমি ঢাবির এই নতুন শিবির নেতাদের কথা শুনতে চাই। উনাদের রাষ্ট্রভাবনা, রাজনীতিভাবনা, ভ্যানগার্ডিজম নিয়ে ভাবনা, কিশোর কন্ঠকে কিভাবে দেখেন সেটাও জানতে চাই।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও  বিকাশ লিমিটেডে কর্মরত।

এই রকম আরও টপিক