শুরুতে ম্যাচটা দেবব্রত পালের কাছে লাগছিল অন্য সবগুলোর মতোই। বিকেএসপিতে আজ সোমবার (২৪ মার্চ) প্রিমিয়ার লিগের মোহামেডান-শাইনপুকুর মধ্যকার ম্যাচে রেফারির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। দুই দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও রায়ান রাফসানকে নিয়ে সকাল ৯টায় টসও সেরে ফেলেন। তখনো খান সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছিল দেবব্রতর।
যদিও টসের আগে ওয়ার্ম আপের সময়ই তামিম ইকবাল কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন। টস করে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর সেটা আরও বাড়ে। মোহামেডান কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামকে এ সময় তিনি বলেন, তার সম্ভবত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হচ্ছে।
তারিকুলও তখন তাকে বলেন, তোমার মাঠে যাওয়ার দরকার নেই। বিশ্রাম নাও। কিছুক্ষণ পর তামিম আরও অসুস্থ বোধ করেন। তরিকুলকে তিনি জানান, তার খারাপ লাগছে, মুখের দিকে ব্যথা হচ্ছে।
মূলত এ তথ্য পেয়েই তরিকুল ও টিম ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেনসহ মোহামেডান দল–সংশ্লিষ্টরা দ্রুত তামিমকে বিকেএসপির কাছের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা নেন। এ সময় বিকেএসপির চিকিৎসকও তাদের সাহায্য করেন। মোহামেডান কর্মকর্তাদের তিনিই পরামর্শ দেন তামিমকে বিকেএসপির কাছের এই হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
এ সময় তামিম নিজের গাড়িতে চেপে হাসপাতালে যান। তার আগে সকাল ৯টা ২২ মিনিটে মোহামেডানের ফিজিও এনাম ম্যাচ রেফারি দেবব্রতকে ফোন করে জানান, বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৯টায় তামিমকে ছাড়াই ম্যাচ খেলতে নামে মোহামেডান।
হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রাথমিকভাবে ইসিজি ও আরও কিছু পরীক্ষা করানো হয় তামিমের। তখনো পরিষ্কার হওয়া যায়নি তার আদ্যতে কী হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকায় যোগাযোগ করে খান সাহেবের জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বিকেএসপির মাঠে উড়িয়ে আনা হয়। কেপিজে হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে কিছু ধরা না পড়ায় তামিমও তখন ভেবেছিলেন, ঢাকায় গিয়েই ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেন। সঙ্গে থাকা মোহামেডান কর্মকর্তাদের সেরকম ইচ্ছার কথাই জানিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন
হামজার পায়ের জাদু দেখতে মুখিয়ে ভারতীয়রাও
২৪ মার্চ, ২০২৫
যদিও কেপিজে হাসপাতাল থেকে বিকেএসপির মাঠে ফিরে হেলিকপ্টারে চড়ার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তামিম। ম্যাচ রেফারি দেবব্রত জানান, তখন তার মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছিল। পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। আকস্মিক এই পরিস্থিতিতে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না কেউ।
বিকেএসপির চিকিৎসক তখন বলেছিলেন, অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিতে নিতে সমস্যা বাড়তে পারে। তার চেয়ে কাছের হাসপাতালে নেওয়া ভালো। ওদিকে তামিমের এই শারীরিক অবস্থায় হেলিকপ্টারের চালকও তাকে নিয়ে ওড়াটা ঠিক হবে না বলে জানান।
বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে তামিমকে আবার কেপিজে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে পুরো সময়টাই তার বুকে পাঞ্চ করতে থাকেন মোহামেডানের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী। তামিমের অবস্থা তখন অনেকটাই সংকটাপন্ন। কারও কোনো ডাকেই সাড়া দিচ্ছিলেন না তিনি।
হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে তামিমকে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। এর মধ্যে তামিমের পরিবারের সদস্যরাও সেখানে চলে আসেন। কেপিজে হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট মনিরুজ্জামান মারুফের তত্ত্বাবধানে তার অ্যানজিওগ্রাম, অ্যানজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট করানো হয়। অ্যানজিওগ্রামে তামিমের হৃদযন্ত্রে একটি ব্লক ধরা পড়লে তখনই তাকে রিং (স্টেন্ট) পরানো হয়।
আপাতত কেপিজে হাসপাতালের সিসিইউতে রয়েছেন তামিম। সেখানেই তার সঙ্গে আছেন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা। জ্ঞান ফেরার পর তিনি পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী।
তিনি জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টা তামিম চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকবেন। এর মধ্যে প্রথম ২৪ ঘণ্টা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এ দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ তামিমের দ্রুত চিকিৎসায় সাহায্য করার জন্য বিকেএসপি ও কেপিজে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কার্যালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে সার্বক্ষণিক তামিমের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিসিবিও তামিমের চিকিৎসায় সবরকম সহায়তা করবে।
তামিমের ভক্ত–সমর্থকদের বিসিবির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, অযথা হাসপাতালে ভিড় না করতে। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও তামিমের জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
তামিমের সুস্থতার জন্য ভারতীয় ও লঙ্কান ক্রিকেটারদের প্রার্থনা
২৪ মার্চ, ২০২৫
এ দিকে তামিম ইকবালের সুস্থতা কামনায় দোয়া করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্যটি জানানো হয়।
news24bd.tv/কেএইচআর