কেবিনেটে দুর্নীতিবাজদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক

কেবিনেটে দুর্নীতিবাজদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘কেবিনেটে আলোচনা হয়েছে, অপরাধী ও দুর্নীবাজদের দৃষ্টামূলক শাস্তি দেওয়া হবে। ’

শনিবার (২৯ জুন) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কল্যাণ পার্টির বিশেষ কাউন্সিলে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।   

দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মানুষের চাহিদা থাকতেই পারে।

সবাই উন্নত জীবন যাপন করতে চায়। তবে তারা যেটা করেছেন সেটা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ’

তিনি বলেন, ‘এই সরকারের সফলতা অনেক। কিন্তু দুর্নীতি এবং এ সব অন্যায় সফলতাকে ম্লান করে দিয়েছে।

এ সব দুর্বৃত্তদের দমনে সর্বস্তরের সহযোগিতা ও সমর্থন দরকার। ’ 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে অবক্ষয় হয়েছে। মানুষের কল্যাণ বাদ দিয়ে আমরা নিজের কল্যাণের জন্য মরিয়া। গত একমাসে যে পরিমাণ অন্যায় ও দুর্নীতির খবর এসেছে সেটা দুঃখজনক। এটা সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক কর্মীর জন্য চপেটাঘাত। অন্যায় দুর্নীতি হয় না, এমন কোনো রাষ্ট্র নেই। তবে এখন যেটা হয়েছে সেটা সীমা লঙ্ঘন করেছে। ’

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যারা সমাজকর্মী ও সমাজের মঙ্গল চায় তাদের উচিত দেশের কল্যাণ কাজ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

আরও পড়ুন...দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিন, প্রধানমন্ত্রীকে সৈয়দ ইবরাহিম

কল্যাণ পার্টির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ সময়ের রাজনীতিতে এমন শৃঙ্খলা আগে দেখিনি। দলীয় সভা এত সুশৃঙ্খল হতে পারে তা কল্যাণ পার্টি দেখিয়েছে। ’ এ সময় নিজের দলের শৃঙ্খলা নিয়েও কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

জনপ্রতিনিধিদের জনসম্পৃক্ততার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সবার ভোট পাবেন এই ভাবনা ভুল। তবে নির্বাচিত হওয়ার পরে একজন জনপ্রতিনিধি সবার হয়ে কাজ করেন। সাধারণ মানুষ যেন নির্ভয়ে একজন জনপ্রতিনিধির কাছে আসতে পারে সেই সুযোগটা করে দিতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধী দলের ভালো বিষয়গুলো আমরা দেখতে পারি না। তাদের মতামত গ্রহণ করি না। এটা বহুদলীয় রাজনীতিতে শোভা পায় না। বিরোধী দল হলেও দায়িত্বশীল বিরোধী দল হতে হবে। এটা না হলে দেশ কখনোই উন্নতি করতে পারে না। ’ তবে কাউকে হেয় করে বিরোধিতা না করে গঠনমূলক বিরোধিতা করার আহ্বান জানান মন্ত্রী। কল্যাণ পার্টি সেই ধারা রাজনীতি করে আসছে বলেও জানান তিনি।  

অনুষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সংসদ সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন ‘সরকারের সমালোচনার একটা জায়গা দুর্নীতি। সরকারের বড় বড় পর্যায়ের ব্যক্তিরা টাকা পাচার ও নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলতে চাই, আপনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিন। কল্যাণ পার্টি আপনাদের সঙ্গে আছে। ’

তিনি বলেন, ‘শুধু দুর্নীতি নয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অর্থপাচার রোধ ও মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের সব পদক্ষেপে কল্যাণ পার্টি সঙ্গে থাকবে। ’ 

এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমাদের অভ্যাস মৃত্যুর পরে শ্রদ্ধা জানানো। তবে আমি সারাবিশ্বে যতো মুক্তিযোদ্ধা ছড়িয়ে আছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ’

আ ক ম মোজাম্মেল হককে আজকের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করার বিষয়ে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ‘আমি নিজে যেহেতু রাজনীতিবিদের আগে একজন মুক্তিযোদ্ধা, সে জন্য পার্টির সর্বসম্মতিক্রমে আরেক মুক্তিযোদ্ধাকে প্রধান অতিথি করেছি। ’

তিনি বলেন, ‘কল্যাণ পার্টি সারাদেশে এবার ১৪টি আসনে নির্বাচন করেছে। একটি আসনে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করেনি। সেখানে আওয়ামী লীগ ছিল কল্যাণ পার্টির বন্ধু। সেটা কক্সবাজার-১ আসন। চকরিয়া-পেকুয়া আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচন সফল করার জন্য অক্লান্ত কাজ করেছেন। ’

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘যতদিন আমি এমপি হিসেবে আছি, ততদিন পেকুয়া-চকবাজারে কোনো কোন্দল থাকবে না। কোনো অন্তর্ন্দ্বন্দ্ব থাকবে না। সব নেতাকর্মী এক হয়ে কাজ করবে। ’ 

তিনি বলেন, ‘গঠমূলক পরিবর্তনে সময়, পরিশ্রম ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা লাগে। আওয়ামী লীগকে বলবো, আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরাও গঠনমূলক কাজে আপনাদের সঙ্গে আছি। সরকারের অনেক ছোট ছোট ভুল আছে। সবচেয়ে বেশি ভুল অর্থনীতি ও দুর্নীতি নিয়ে। অর্থনীতিতে যতটুকু উন্নতি হয়েছিল তা পূর্ণ হয়নি কোভিড ও বৈশ্বিক মন্দার জন্য। ’

এ সময় দুই উপজেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ফুল দিয়ে বরণ করেন সৈয়দ ইবরাহিম।  

এর আগে অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির নেতারা বলেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি মুক্তিযুদ্ধের আদি ও অকৃত্রিম চেতনাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চায়। সরকারের ভুলত্রুটিগুলো গঠনমূলক পদ্ধতিতে উপস্থাপন করতে চায়। জনগণের কষ্টের কথা সরকারের কাছে তুলে ধরতে চায়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, রোহিঙ্গা সংকট, অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা বিষয় নিয়ে গঠনমূলক প্রস্তাব উত্থাপন করতে চায়।  

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, যুগ্ম মহাসচিব ওবায়দুল হক সিরাজী, অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল কবীর ভূঁইয়া পিন্টু, ফরহাদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তামান্না, ভাইস দয়াল কুমার, ভাইস মাহমুদ খান, ভাইস বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা শারমিন ফাতেমাসহ পার্টির বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা।

news24bd.tv/আইএএম