বন্যায় তলিয়ে গেল ২২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি

বন্যায় তলিয়ে গেছে ফসলি জমি (ফাইল ছবি)

বন্যায় তলিয়ে গেল ২২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি

অনলাইন ডেস্ক

দেশে উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে দেশের ছয় জেলার প্রায় ২২ হাজার ২৫০ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।  

জানা গেছে, সিলেটে ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের জেলা গাইবান্ধায় দুই হাজার ৫৪৬ হেক্টর, কুড়িগ্রামে এক হাজার ৪০০ হেক্টর, বগুড়ায় ৮০২ হেক্টর এবং সিরাজগঞ্জে ৪০৮ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। শেরপুরে ডুবেছে এক হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমি। এসব জমিতে পাট, আউশ ধান, রোপা আমনের বীজতলা, কলা, মরিচ ও সবজি চাষ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাবে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত দেশের উত্তর, উত্তর-মধ্য, উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মোট ৯টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ছিল।

৯ জেলায় ৯টি নদ-নদীর পানি ১৯ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে অবস্থান করছিল এ সময়।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার (৫ জুলাই) সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে উত্তর, উত্তর-মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে আজ।

যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৮ সে. মি. এবং কাজিপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বগুড়ায় যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলায় যমুনার পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সে. মি., চিলমারী নৌ বন্দর পয়েন্টে ৭৮ সে. মি. এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭২ সে. মি.  ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় ৬টি উপজেলার প্রায় সোয়া লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে বন্যাকবলিত মানুষ।  

গাইবান্ধার সব নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাউবোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গাইবান্ধায় দুই হাজার ৫৪৬ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম।

এদিকে, সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নে উজান ঢলে একটি গ্রামীণ বাঁধ ভেঙে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বাংশের তিন ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলা কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরে নদীতীরের নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলের লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। কিছু বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লোকজন অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। আরও দুই-তিন দিন পানি বাড়ার আশঙ্কার পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা করছে পাউবো।

সিরাজগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর জানান, জেলায় ৪০৮ হেক্টর জমিতে পানি ঢুকেছে। তবে আবাদি জমিগুলোতে সবেমাত্র পানি প্রবেশ করায় এখনো ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি।

সিলেটে বৃহস্পতিবারও নদীর পানি বিপৎসীমার ছয় পয়েন্টে ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে পাউবো সূত্রে জানা গেছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেটের ৩১টি উপজেলার ৯৬টি ইউনিয়ন এখনো বন্যাকবলিত। এসব ইউনিয়নের এক হাজার ১৬০টি গ্রামের ছয় লাখ ১৭ হাজার ৭৯৩ জন বন্যাক্রান্ত। জেলার ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো আট হাজার ৯৫১ জন রয়েছে।

শেরপুর জেলায় পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে এক হাজার ৫৬৪ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে পুরো নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে ৬৮০ হেক্টর এবং আংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে ৮৮৪ হেক্টর। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাত হাজার ৭০ জন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হবে।

news24bd.tv/আইএএম