ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার শেখ হাসিনা 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার শেখ হাসিনা 

অনলাইন ডেস্ক

গত ছয় মাসে একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্ট চেকে এটা উঠে এসেছে। সম্মিলিত তালিকা ছাড়াও জাতীয় এবং রাজনৈতিক ক্যাটাগরিতেও ভুল তথ্যের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের তালিকায়ও প্রথমে রয়েছেন শেখ হাসিনা।  

এছাড়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজী হাবিবুল আওয়াল, ধর্মীয় ক্ষেত্রে হযরত মুহাম্মদ (সা.), বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জো বাইডেন, খেলাধুলার ক্ষেত্রে সাকিব আল হাসান এবং বিনোদন ক্ষেত্রে শবনম বুবলী সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন।

 

২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া ১৩৮০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।  
গত বছর একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ৬১ শতাংশ বেশি। এ বছর প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভুল তথ্য প্রচারের হার বেড়েছে ১১ শতাংশ।  

ভুল তথ্য সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে ফেসবুকে।

প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে সাতটির বেশি ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে এই প্লাটফর্মে।  

ছয় মাসে দেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগ।  

দায়িত্বশীলরাও যে ভুল তথ্য প্রচার করছেন তারও প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ গত ছয় মাসে এমন ১৭টি ঘটনার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে পরিসংখ্যানে।  

ভুল তথ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম, পুরোনো ফুটেজ এবং নকল ফটোকার্ড। এসব কায়দা ব্যবহার করা হয়েছে, গত ছয় মাসে এমন ২১২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। অর্থাৎ, গড়ে প্রতিদিন একটির বেশি ভুল তথ্য প্রচারে গণমাধ্যমকে জড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।  

২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে রিউমর স্ক্যানার ভুল তথ্য শনাক্ত করেছিল ৮৫৬টি। সংসদ নির্বাচন, রাজনৈতিক নানা ঘটনা আর খেলাধুলার বিভিন্ন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের কারণে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভুল তথ্য প্রচারের হার বেড়েছে।  

ভুল তথ্য সবচেয়ে বেশি ফেসবুকে, ভাবাচ্ছে টিকটকও

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত প্লাটফর্ম ফেসবুক। মেটার অধীনে থাকা এই মাধ্যমটিতে গত ছয় মাসে ১০১১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এ হিসেবে প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে সাতটির বেশি ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে এই প্লাটফর্মে। ফেসবুকের পর একক প্লাটফর্ম হিসেবে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ইউটিউবে (৩৬৪টি)। তবে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটক। ছয় মাসে এখানে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ৩৬০টি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় টিকটকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এত ভুল তথ্য শনাক্ত হতে দেখা যায়নি। এর বাইরে অন্যান্য প্লাটফর্মগুলো বাংলাদেশে তুলনামূলক কম জনপ্রিয় হওয়ায় সেগুলোতে ভুল তথ্য প্রচারের হারও বেশ কম লক্ষ্য করা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ছাড়াও গণমাধ্যমও ভুল তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। গত ছয় মাসে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ভুল তথ্য, ছবি এবং ভিডিও সম্বলিত ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে ৭৮টি৷ এ বিষয়ে খুব শিগগিরিই  বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে রিউমর স্ক্যানার।

ছয় মাসে রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে পুরোপুরি মিথ্যা বা ভুয়া ঘটনা সম্বলিত ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ৯৮০টি৷ এছাড়া, বিভ্রান্তিকর রেটিং দেওয়া হয়েছে ২০৮টি। বিকৃত রেটিং পেয়েছে ১৬১টি, অধিকাংশই মিথ্যা এমন রেটিং পেয়েছে তিনটি। এছাড়া, সার্কাজম বা কৌতুক হিসেবে হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে ২৮টি। এসব ভুল তথ্য শনাক্তের ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই করা হয়েছে ৩৯২টি, ছবি যাচাই করা হয়েছে ৩৯৭টি এবং ভিডিও যাচাই করা হয়েছে ৫৯১টি।  

প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চে ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ৬৫৪টি। তবে পরের প্রান্তিকে (এপ্রিল থেকে জুন) তা ১১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২৬টিতে। প্রান্তিক ভিত্তিক হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সে সময়ে অনুমিতভাবে রাজনৈতিক বিষয়েই (১৯১) বেশি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে৷ একই সময়ে সর্বোচ্চ ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে এমন তালিকার পরের দুই অবস্থানে রয়েছে খেলাধুলা (১১৬) এবং জাতীয় (৭৯) বিষয়। পরের প্রান্তিকে রাজনৈতিক ভুল তথ্য উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, দাঁড়িয়েছে ৮১টিতে। এই সময়ে সর্বোচ্চ ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে জাতীয় (১১২) বিষয়ে। পরের দুই অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে প্রতারণা (১০৫) ও আন্তর্জাতিক (৯৯) বিষয়ক ভুল তথ্য।  

প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে ফেসবুকে ভুল তথ্য শনাক্তের হার বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। একই সময়ে উল্টো চিত্র দেখা গেছে ইউটিউবের ক্ষেত্রে। সেখানে ভুল তথ্য শনাক্তের পরিমাণ কমেছে প্রায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ। তবে টিকটকে প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে সমপরিমাণ (১৮০) ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে।

নির্বাচনের বছরে রাজনৈতিক ভুল তথ্যে সয়লাব ইন্টারনেট

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দেশের ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত বছর থেকেই ভুল তথ্য প্রচারের বিষয়টি লক্ষ্য করে আসছে রিউমর স্ক্যানার। নির্বাচনকে জড়িয়ে গেল বছরে ৩২০টি ভুল তথ্য ছড়ানোর তথ্য দিয়েছিল রিউমর স্ক্যানার। এ বছর প্রথম দুই মাসে নির্বাচন নিয়ে আরো ৯১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে জানুয়ারিতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সময়ে সময়ে ভুল তথ্য প্রচারের ফলে সে মাসে শুধু রাজনীতি কেন্দ্রিক ভুল তথ্যই শনাক্ত হয়েছে ১২৪টি। পরের পাঁচ মাসে তা গড়ে ৩০টিতে নেমে এসেছে৷ ছয় মাসে রাজনীতি বিষয়ে ২৭২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে, যা অন্য সকল ক্যাটাগরি থেকে বেশি৷

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিপিএলের মতো ক্রীড়া আয়োজন নিয়ে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ির প্রভাব পড়েছে ক্যাটাগরি ভিত্তিক তালিকায়। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে খেলাধুলা বিষয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২১০টি) ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া জাতীয় বিষয়ে ১৯১টি, প্রতারণা বিষয়ে ১৭৬টি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে ১৩৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।  

রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার আওয়ামী লীগ

২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্য গুলোর সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটি, দলটির বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের নামে ছয় মাসে ২১৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ এই দলের বিষয়ে শনাক্তকৃত ভুল তথ্যের সংখ্যা রিউমর স্ক্যানার কর্তৃক অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নামে শনাক্তকৃত ভুল তথ্যের মোট সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি।  

গেল ছয় মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক বিষয়ে তাকে জড়িয়ে ৮১টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এই তালিকায় পরের অবস্থানে রয়েছেন দলটির সহযোগী সংগঠন যুবলীগ এর কেন্দ্রীয় কমিটির অব্যাহতিপ্রাপ্ত আইন সম্পাদক ও হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সায়েদুল হক সুমন (৪২টি)। এছাড়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ২২টি, মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে নিয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে ১৬টি, শেখ হাসিনার পুত্র ও তার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ১২টি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তিনটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)৷ দলটিকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ৭৪টি ভুল তথ্যের মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামেই সবচেয়ে বেশি (২২টি) ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ১০টি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে ৮টি, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানার নামে ৫টি, প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে ৩টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ এর বাইরে দেশের আরো চার রাজনৈতিক দলের নামে একাধিক ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।  

একক ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনাই বেশি ভুল তথ্যের শিকার

২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে রিউমর স্ক্যানার কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ের মধ্যে একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাকে জড়িয়ে শনাক্তকৃত ৯৪টি ভুল তথ্যের মধ্যে ৮১টিই রাজনীতি কেন্দ্রিক। জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে প্রতি মাসেই তাকে নিয়ে একাধিক ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে নির্বাচনের মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে (২৯টি)। ছয় মাসে প্রতি দুই দিনে গড়ে একটি করে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে তাকে নিয়ে। এসব ভুল তথ্য ছড়াতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে ইউটিউবকে। চটকদার থান্বনেইল, বিভ্রান্তিকর শিরোনাম আর অপ্রাসঙ্গিক ফুটেজ ব্যবহার করে ইউটিউবে ছড়ানো ভুয়া ভিডিওগুলো লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। এর বাইরে ফেসবুক এবং টিকটকেও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছড়ানো হয়েছে ভুল তথ্য।

তালিকার পরের দুই অবস্থানে যারা আছেন তারা দুইজনই ১২তম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মাগুরা-১ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ৭৪টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে ৪৬টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। নিজেদের পেশাগত পরিচয়ের বাইরে নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে এই দুইজনের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রচারের হার বেড়েছে বলে মনে করছে রিউমর স্ক্যানার।  

সম্মিলিত এই তালিকার বাইরে জাতীয় এবং রাজনৈতিক এই দুইটি আলাদা ক্ষেত্রেও ভুল তথ্যের শিকার হওয়ার তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষে রয়েছেন৷ জাতীয় ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পর তালিকার পরের দুই অবস্থানে রয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পর দ্বিতীয় অবস্থানে সায়েদুল হক সুমন এবং তৃতীয় অবস্থানে যৌথভাবে রয়েছেন খালেদা জিয়া ও ওবায়দুল কাদের।  

ভুল তথ্যের প্রবাহ থেকে বাদ যায়নি কোনো ক্ষেত্রই

দেশে সশস্ত্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে গেল ছয় মাসে ৬৭টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে সর্বোচ্চ ২৭টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে ২৩টি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার  প্রধান হারুন অর রশিদকে নিয়ে তিনটি, র‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‍্যাব) নিয়ে চারটি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নিয়ে তিনটি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নিয়ে দুইটি এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে একটি করে ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।  

সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্থাপনাকে নিয়েও এই ছয় মাসে অসংখ্য ভুল তথ্য প্রচার হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার। জাতীয় সংসদকে নিয়ে ২৪টি, নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে চারটি, বাংলাদেশ রেলওয়েকে নিয়ে সাতটি, বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ে একটি, সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ে একটি, বাংলাদেশ সচিবালয়কে নিয়ে একটি, ভূমি মন্ত্রণালয়কে নিয়ে দুইটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি, বিমান বাংলাদেশকে নিয়ে একটিসহ একাধিক সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের নামে ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শুধু দেশীয় প্রতিষ্ঠানই নয়, বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাকেও একাধিক ভুল তথ্যের শিকার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এই তালিকায় রয়েছে জাতিসংঘ, ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংক, জাইকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ওআইসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।  

স্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে ঢাকার মেট্রোরেল (সাতটি)। এছাড়া, বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে পাঁচটি এবং পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু সেতুকে নিয়ে একটি করে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে৷ 

বাংলাদেশে গত ছয় মাসে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বেশকিছু ব্যক্তি আলোচনায় উঠে এসেছেন। এদের মধ্যে একজন হলেন সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ। তার অঢেল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই তাকে জড়িয়ে প্রচারিত তিনটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ এছাড়া, ছাগলকাণ্ডে এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা (বর্তমানে ওএসডি) মতিউর রহমানকে নিয়ে একটি, মানবিক কাজে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে আলোচনায় আসা মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে একটি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ‘চিফ হিট অফিসার’ বুশরা আফরিনকে নিয়ে দুইটি, করোনাকালীন সময়ে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. সাবরিনাকে নিয়ে একটি, পাঠ্যবইয়ে সমকামিতার অভিযোগ তুলে আলোচনায় আসা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে নিয়ে একটি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

নিয়মিত ভুল তথ্যের শিকার হচ্ছে এমন অন্যতম একটি ক্ষেত্র ধর্ম। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে ইসলাম ধর্মকে জড়িয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে ৩৯টি। মুসলিমদের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ২৩টি ভুল তথ্য প্রচারের তথ্য মিলেছে৷ রমজানকে কেন্দ্র করেও ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, সংখ্যায় যা ২৫টি। একই সময়ে হিন্দু ধর্মকে নিয়ে ৩০টি এবং বৌদ্ধ ধর্মকে নিয়ে একটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ ধর্মীয় বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হয়ে উঠছে সাম্প্রদায়িক ভুল তথ্য। এ বিষয়ে গত ছয় মাসে ২৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার, যার মধ্যে মে মাসেই শনাক্ত হয়েছে ১২টি ভুল তথ্য।  

শিক্ষাক্ষেত্রে পাবলিক এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখা যায়। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এই সময়ে এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ১০টি, এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে ছয়টি, জেএসসি নিয়ে দুইটি এবং পিইসি নিয়ে একটি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে৷ থেমে থাকেনি এ সংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রচারও। এই বিষয়ে শনাক্ত হয়েছে ১১টি ভুল তথ্য। বাংলাদেশের পাঠ্যবইগুলোতে ভুলের প্রবণতার বিষয়টিও গেল কয়েক বছর ধরেই আলোচনা ও সমালোচনার ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিউমর স্ক্যানার গেল বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এ বছরও পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুলের বিষয়ে কাজ করেছে, প্রকাশ করেছে তিনটি ফ্যাক্টচেক। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সম্প্রতি স্কুলগুলোতে একটি সংশোধনী দিয়েছে, যার মধ্যে এই তিন ফ্যাক্টচেকের ভুলগুলোর বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রচারিত ২২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে গত ছয় মাসে৷ একই সময়ে প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ে পাঁচটি, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে চারটি এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দুইটি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।  

সময়ে সময়ে নানান ইস্যু, সঙ্গী ভুল তথ্যও

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলা কেন্দ্র করে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হয়, যা এখনো চলছে। এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে নিয়মিতই। সংঘাত শুরুর পর থেকে গত ২৯ জুন পর্যন্ত এই ইস্যুতে ৯৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে গত ছয় মাসে শনাক্ত হয়েছে ২০টি৷ ফিলিস্তিনের ইস্যুতে বেভারেজ পণ্য কোকা-কোলা বয়কট ক্যাম্পেইন চলছে৷ এই পণ্য নিয়েও গত ছয় মাসে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন ১২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করা হয়েছে।  অন্য আরেক বেভারেজ পণ্য মোজার প্রতিটি বোতল থেকে এক টাকা করে ফিলিস্তিনের সহায়তায় পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে মোজো কর্তৃপক্ষ। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করেও মোজোর বিষয়ে চারটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

গত জানুয়ারিতে দেশি-বিদেশি নানান ঘটনার প্রেক্ষিতে এমন ইস্যু চিহ্নিত করা হয়েছে পাঁচটি। পরবর্তী মাসগুলোতে যথাক্রমে ফেব্রুয়ারিতে চারটি, মার্চে তিনটি, এপ্রিলে পাঁচটি, মে’তে চারটি এবং জুন মাসে তিনটি ইস্যু চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ইস্যুতে ৩৫২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে যথাক্রমে সংসদ নির্বাচন (৯১টি), আইপিএল (৫৭টি) ও বিপিএল (৩৮টি) ইস্যুতে।  

সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার সাকিব আল হাসান

গত ছয় মাসে ক্রীড়াঙ্গনে ছড়িয়ে পড়া ৩২৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব ভুল তথ্যে জড়ানো হয়েছে ৮২ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দলকে। ক্রীড়াঙ্গনের ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্রিকেট আর ফুটবল এই দুই ক্ষেত্রেই শুধু গত ছয় মাসে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। এই দুই ক্ষেত্রের মধ্যে অনুমিতভাবেই এগিয়ে আছে ক্রিকেট নিয়ে ভুল তথ্য। ছয় মাসে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ৩০৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ক্রিকেটার, কোচ, সংগঠক, দল, ক্রিকেট বোর্ড এবং আইসিসিকে জড়িয়ে প্রচারিত এসব ভুল তথ্যের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন সাকিব আল হাসান (৫৮টি)। পরের দুই অবস্থানে আছেন যথাক্রমে তামিম ইকবাল (৩৬টি) এবং মুস্তাফিজুর রহমান (২৩টি)। এছাড়া এই তালিকায় অন্তত পাঁচটি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন  মুশফিকুর রহিম (৯টি), রিশাদ হোসেন (৫টি), তাওহীদ হৃদয় (৫টি), লিটন কুমার দাস (৭টি), ইমরুল কায়েস (৫টি), বিরাট কোহলি (১০টি), শরিফুল ইসলাম (৫টি), মাহেন্দ্র সিং ধোনি (১৬টি), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৬টি), মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা (১৪টি) এবং সৌরভ গাঙ্গুলী (৫টি)।

ক্রিকেটের বাইরে ফুটবল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গত ছয় মাসে ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে ১২টি৷ এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন এমন তালিকার প্রথম তিন অবস্থানে রয়েছেন যথাক্রমে আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি (৭টি), পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (৩টি) এবং ব্রাজিলের নেইমার জুনিয়র ও বাংলাদেশের জামাল ভূঁইয়া (২টি করে)।  

শতাধিক ভুল তথ্য বিনোদন অঙ্গনেও

বিনোদন জগতে বিভিন্ন বিষয়ে গুঞ্জন আর ধোঁয়াশা লেগেই থাকে সবসময়। এসবের ভীড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারিত ১১১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। গেল ছয় মাসের এই হিসাবে ভুল তথ্যে জড়ানো হয়েছে বিনোদন জগতের ৫৩ তারকাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন নায়িকা শবনম বুবলী (১৩টি)। এর পরের দুই অবস্থানে রয়েছেন নায়ক শাকিব খান (১২টি) এবং নায়িকা অপু বিশ্বাস ও অভিনেতা মারজুক রাসেল (৬টি করে)। এছাড়া এই তালিকায় অন্তত পাঁচটি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন নায়িকা পরী মণি (৫টি) এবং বলিউড নায়ক শাহরুখ খান (৫টি)।  

দায়িত্বশীলরাও ভুল তথ্য প্রচার করেন

ভুল তথ্য সারাবিশ্বের জন্যই বর্তমান সময়ে এক বড় চিন্তার কারণ। দেশে দেশে নিত্য নতুন পদ্ধতিতে ভুল তথ্যের প্রচার এবং প্রসার ঘটছে। ভুল তথ্য থামাতে তাই সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। এই প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসতে হয় দায়িত্বশীল কিংবা সমাজের পরিচিত মুখদের৷ কিন্তু তারাই যখন জেনে কিংবা না জেনে ভুল তথ্য প্রচার করেন, তখন ভুল তথ্য তার ভয়াবহ রূপটাই যেন চিনিয়ে দেয়। রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে এমন ১৭টি ঘটনার (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭) প্রমাণ মিলেছে গত ছয় মাসে, যেখানে ১৭ জন ব্যক্তিত্ব নিজেদের বক্তব্যে, ফেসবুক পোস্টে কিংবা এক্স পোস্টের মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়েছেন। এদের মধ্যে ১৩ জন ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে, দুইজন নিজেদের বক্তব্যে, একজন এক্স পোস্টে এবং একজন ফেসবুক অ্যাকাউন্টের স্টোরিতে ভুল তথ্য শেয়ার করেছেন। এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ও এই ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনের ভুল তথ্য হিসেবে শনাক্ত হওয়া পোস্ট ফেসবুকে সচল অবস্থায় দেখা গেছে। এগুলো দেখুন ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬। তাছাড়া, দুইজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও (১, ২) তাদের দেওয়া ভুল তথ্য সম্বলিত বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি।  

প্রতারণা নিয়ে চিন্তা, ভুয়া নিয়োগ নিয়ে কাজে সফল রিউমর স্ক্যানার

সময়ের সাথে নিত্যনতুন পন্থায় প্রতারণার পথ বেছে নিচ্ছেন এ কাজের সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর জুয়ার অ্যাপের ভুয়া বিজ্ঞাপনে সেলিব্রিটিদের জড়ানোর বিষয়টি প্রতারণার ক্ষেত্রটিতে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে জুয়ার বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত ৪২টি ভুয়া ভিডিও শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। জুয়ার বিজ্ঞাপনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় ক্রিকেটার, বিনোদন তারকা এমনকি প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে জড়িয়ে ভিডিওগুলোকে বিশ্বস্ত করে তোলার চেষ্টা বেড়েছে। এসব ভুয়া ভিডিওতে ব্যবহার হয়েছেন এমন ব্যক্তিরা হচ্ছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, শাকিব খান, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মুস্তাফিজুর রহমান, গায়ক তাহসান রহমান খান, নায়ক মনোয়ার হোসেন ডিপজল, র‍‍্যাবের সাবেক মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন, বিটিআরসির বর্তমান চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ, কনটেন্ট ক্রিয়েটর তাওহীদ আফ্রিদি এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইফতেখার রাফসান। শুধু সেলিব্রিটিরাই নয়, প্রতারণামূলক এসব ভিডিওতে একাধিক গণমাধ্যমের নাম, লোগো এবং ভিন্ন ঘটনার ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বিজ্ঞাপন ফেসবুকে অর্থের বিনিময়ে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।  

প্রতারণার আরেকটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে ভুয়া নিয়োগ। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ৮৮টি ভুয়া নিয়োগের ঘটনা শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ চলতি বছর সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে ফেসবুকে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছেড়ে এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণা সংক্রান্ত একটি বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানারের বিশেষায়িত বিভাগ ‘রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট’। দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশের ০৭টি সিটি কর্পোরেশন, অন্তত ২০টি পৌরসভা, অন্তত ৬০টি হাসপাতালে এবং অন্তত ২০টি পাসপোর্ট অফিসের নাম, লোগো ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করা হয়। গত ২৬ মে এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। ০৮ জুন আলোচিত এই নিয়োগ প্রতারণার সাথে জড়িত তাওহীদ নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর আর এমন ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পায়নি রিউমর স্ক্যানার।  

৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ “০৭ তারিখ সারাদিন হরতাল পালন করুন। কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। ” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও গত ০৫ জানুয়ারি থেকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, হারুন অর রশীদ এমন কিছুই বলেননি। এটি মূলত ডিপফেক প্রযুক্তির কারসাজি৷ এভাবেই শুরু। জানুয়ারির এক নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই তিনটি ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর বাইরে গত ছয় মাসে আরও সাতটি ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে যার শিকার হয়েছেন রাজনৈতিক এবং বিনোদন অঙ্গণের বিভিন্ন ব্যক্তি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-কে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তির এই অপব্যবহার সবচেয়ে বেশি করা হচ্ছে। গত ছয় মাসে এমন ৫৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে, যাতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে।  

আধুনিক এসব প্রযুক্তিকে ভুল তথ্য ছড়ানোর হাতিয়ার বানানো ছাড়াও আরেকটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে গণমাধ্যমকে ভুল তথ্য ছড়ানোর কাজে ব্যবহার। গণমাধ্যম যা প্রচার করেনি তা-ই গণমাধ্যমের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে ২০২৩ সাল থেকেই ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব ভুল তথ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম, পুরোনো ফুটেজ এবং নকল ফটোকার্ড। এসব কায়দা ব্যবহার করা হয়েছে, গত ছয় মাসে এমন ২১২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। অর্থাৎ, গড়ে প্রতিদিন একটির বেশি ভুল তথ্য প্রচারে গণমাধ্যমকে জড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ছয় মাসের এই ভুল তথ্যের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, গত ৩/৪ বছরে শনাক্ত হয়েছে এমন ভুল তথ্যগুলো আবার ফিরে আসছে। ফেসবুকে মেমোরিজ বলে একটি অপশন রয়েছে যা পূর্বের বছরগুলোর নির্দিষ্ট দিনের অ্যাক্টিভিটি আপনাকে জানাবে৷ ফিরে আসা এসব ভুল তথ্যের ক্ষেত্রে এই মেমোরিস অপশন ভূমিকা রাখছে৷ দেখা গেছে, পূর্বের বছর কোনো এক সময়ে একটি ভুল তথ্য প্রচার হলে পরের বছর ঠিক একই সময়েই তা আবার ছড়ায়। অথচ, এই ভুল তথ্যটি ইতোমধ্যেই শনাক্ত হয়েছে৷ এটি ছাড়াও বছর বছর শনাক্ত হওয়া একই ভুল তথ্য ফিরে আসছে, ছড়িয়ে পড়ছে ইন্টারনেটে। রিউমর স্ক্যানার গত ছয় মাসে এমন ৯০টি ভুল তথ্য নতুন করে প্রচার হতে দেখেছে যেগুলো কিনা পূর্বেই শনাক্ত হয়েছে।  

news24bd.tv/আইএএম