অধস্তন আদালতের বিচারকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরি শৃঙ্খলা পরিপন্থী অপ্রয়োজনীয় কোনো স্ট্যাটাস বা মন্তব্য শেয়ার না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে সার্কুলারে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কতিপয় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ও ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিলের প্রদত্ত নির্দেশনা প্রতিপালন করছেন না। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত।
এতে আরও বলা হয়, অত্র কোর্টের গোচরীভূত হয়েছে যে, কোনো কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা বিচারিক কর্মঘণ্টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন এবং কোনো কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে নানাবিধ বিরূপ মন্তব্য করছেন, যা চাকরি শৃঙ্খলা ও বিধিমালার পরিপন্থী এবং অসদাচরণের শামিল।
প্রধান বিচারপতি এ অবস্থায় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২০১৯ ও ২০২৩ সালের প্রদত্ত নির্দেশনাগুলো আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া কোনো অবস্থাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাকরির শৃঙ্খলা পরিপন্থী অপ্রয়োজনীয় কোনো স্ট্যাটাস, মন্তব্য শেয়ার না করতে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি বিধানের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, নির্দেশনা অমান্য করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৭–এর পাশাপাশি প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধি–বিধান প্রযোজ্য হবে।
২০১৯ সালে জারি করা সার্কুলারে যেসব বিষয় পরিহার করতে বলা হয়েছে:
জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো প্রকার তথ্য, মন্তব্য ও অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার; কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনো তথ্য বা মন্তব্য; রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য বা মন্তব্য; কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয় প্রতিপন্নমূলক কোনো তথ্য বা মন্তব্য; কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন করে এমন কোনো তথ্য বা মন্তব্য; লিঙ্গ বৈষম্যমূলক কোনো তথ্য বা মন্তব্য; জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো তথ্য বা মন্তব্য; কোনো মামলা সংক্রান্তে বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি; নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি; সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ ও প্রচার; অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, মানহানিকর এবং নৈতিকতা পরিপন্থী কোনো স্ট্যাটাস, পোস্ট, লিংক, ছবি ইত্যাদিতে অন্যজনকে সংযুক্তকরণ (ট্যাগিং), আদান-প্রদান (শেয়ারিং), প্রকাশ ও প্রচার।
যেসব বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে:
প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি নির্বাচন ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে; প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে; ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং বিচারকসুলভ মনোভাব অবলম্বন করতে হবে; অপ্রয়োজনীয় বা গুরুত্বহীন বিষয়ে তথ্য, স্ট্যাটাস বা পোস্ট দেওয়া যাবে না; দায়িত্বশীল ও বিচারকসূলভ আচরণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে; মামলার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না; বাস্তব ও স্বাভাবিক অবস্থায় সহকর্মীদের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি, করণীয় ও বর্জনীয় দিকসমূহের প্রতিফলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিশ্চিত করতে হবে।
২০২৩ সালের সার্কুলারে বলা হয়, কোনো কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা বিচারিক কর্মঘণ্টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন, এই মাধ্যমে তাদের চেম্বার অথবা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তোলা ছবি বা ভিডিও আপলোড করাসহ নিজেদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ভঙ্গকারী ছবি পাবলিক পোস্ট হিসেবে আপলোড করছেন। অন্যের আপলোড করা ছবি, ভিডিও বা কনটেন্ট শেয়ার বা তাতে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করছেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্তব্য বা শেয়ার করছেন এবং ইউটিউবে বা অন্য কোনো মাধ্যমে নিজ বা ছদ্মনামে চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করাসহ অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন অনুষ্ঠানের ছবি আপলোড করছেন। এমন কর্মকাণ্ডে বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, যা অপ্রত্যাশিত।