অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি শিল্প খাত

অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি শিল্প খাত

প্রিন্সিপাল এম এইচ খান মঞ্জু

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই শেখ হাসিনা একের পর এক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তমূলক ঘটনার মাধ্যমে সরকারকে অস্থিতিশীল এবং ব্যর্থ করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। সেসব ষড়যন্ত্র অন্তর্র্বর্তী সরকার সফলভাবে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গত মাসের শেষ দিকে ঢাকার অদূরে আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরে গার্মেন্ট শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধি ও বকেয়া বেতন পরিশোধসহ নানা সুযোগ-সুবিধার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের নামে তারা সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, কারখানা ও যানবাহন ভাঙচুরসহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে।

এতে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। গত ৪ সেপ্টেম্বর বিজিএমইএ এক বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হয়। এতে অনেক কারখানা বেতন পরিশোধ করে পুর্ণোদ্যমে উৎপাদন শুরু করে। তবে কিছু কারখানার শ্রমিকরা পুনরায় নানা দাবি নিয়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির সিংহভাগ মেনে নেওয়ার পরও তারা পুরো দাবি মানার অজুহাতে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে সকাল থেকেই মহাসড়ক ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীসহ কর্মজীবীরা অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। তারা যথাসময়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যেতে পারেনি। বিদেশগামীরা সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছতে না পারায় ফ্লাইট মিস করে। যানজটে অ্যাম্বুলেন্স আটকে পড়ায় রোগীর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। জনজীবন পুরোপুরি স্থবির হয়ে যায়।

বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন দাবিদাওয়ার নামে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে একশ্রেণির শ্রমিকের আন্দোলন যে ষড়যন্ত্রের অংশ তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন দাবি আদায়ের নামে আন্দোলন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উসকানি দিয়েছে। তারা বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

শ্রমিকদের উত্তেজিত করে গার্মেন্ট খাতকে অচল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত শেখ হাসিনার দোসররা। বেশির ভাগ গার্মেন্ট কারখানা সচল থাকলেও কিছু কারখানার শ্রমিক বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা থেকেই বোঝা যায়, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে। ন্যায্য দাবিদাওয়া নিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনে কোনো বাধা নেই। তারা মানববন্ধন কিংবা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি উত্থাপন ও তা আদায় করতে পারে। তবে সন্ত্রাসী কায়দায় সড়ক অবরোধ, কারখানা এবং যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণ কী? দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে কেন? তারা কেন সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে? কেন ত্রাসের পথ বেছে নিতে হবে? রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ ভাগ গার্মেন্ট খাত থেকে আসে। গার্মেন্ট খাতে যে অস্থিরতা ও চক্রান্ত চলছে, তা আওয়ামী লীগেরই সৃষ্টি। শ্রমিক আন্দোলনের নামে গার্মেন্ট খাতে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসররা এসব সন্ত্রাসীকে লেলিয়ে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। আন্দোলনের নামে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, জনজীবন বিপর্যস্ত ও অচল করে দেওয়া এবং অর্থনীতির ক্ষতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর পেছনে যারা রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো শিল্প খাত। এক্ষেত্রে তৈরি পোশাকশিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। এ খাত শুধু দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগণিত মানুষের কর্মসংস্থান। পোশাকশিল্পের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে বাংলাদেশ। এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে পোশাকশিল্প। দেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান এবং তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ক্ষমতা বাড়িয়েছে এ খাত।

বর্তমানে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। সারা পৃথিবীতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাতি দিয়েছে এ পণ্য। শ্রমঘন এ শিল্পটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। এ খাতের হাত ধরেই বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিকাশ হয়েছে। গার্মেন্ট দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও পরে তারা অন্যান্য শিল্পে রূপান্তর ঘটিয়েছে। আর বর্তমানে রাজস্ব আয়ের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই আসছে বেসরকারি খাত থেকে। অন্যদিকে পোশাকশিল্পের বিকাশে নারীর ক্ষমতায়নসহ বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ছাড়াও তৈরি পোশাকশিল্পে ২৫ লাখের বেশি নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এতে শ্রমজীবী নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন পরিবারে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। যে কোনো মূল্যে গার্মেন্টসহ শিল্প খাতের শান্তি-শৃৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।

লেখক: সাবেক সংসদ সদস্য ও সভাপতি, গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি। প্রাক্তন প্রিন্সিপাল এম এইচ খান ডিগ্রি কলেজ, গোপালগঞ্জ

news24bd.tv/আইএএম