মোদির ‘৪০০’র গ্যারান্টিতে কেন আস্থা রাখলেন না ভারতের জনগণ?

নরেন্দ্র মোদি

মোদির ‘৪০০’র গ্যারান্টিতে কেন আস্থা রাখলেন না ভারতের জনগণ?

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এককভাবে দল হিসেবে ২৩৯টি আসন পেয়েছে বিজেপি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিটি প্রচার সভায় নিয়ম করে নিজের গ্যারান্টির কথা বললেও ভোটের ফল বলছে, তাঁর গ্যারান্টিতে খুব বেশি আস্থা রাখতে পারল না ভারতবাসী।

পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৩০৩টি আসন পেয়েছিল বিজেপি।

মনে করা হয়, সেই সময় বিজেপির পক্ষে কাজ করেছিল মোদি ম্যাজিক এবং জাতীয়তাবাদী হাওয়া।

আরও পড়ুন...ভারতের লোকসভা নির্বাচন, কে কত আসন পেল?

পাঁচ বছর পরে অবশ্য সেই ম্যাজিক অনেকটাই ফিকে। তাই এক ধাক্কায় বিজেপির আসনসংখ্যা নেমে এল ২৩৯টি আসনে। নিজের বারাণসী কেন্দ্র থেকে অবশ্য জয় পেয়েছেন মোদী।

তবে গত বারের তুলনায় মোদীর জয়ের ব্যবধান কমেছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ।

মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে অবশ্য সকলকে চমকে দিয়ে এক বার অল্প ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েন মোদী। পরে অবশ্য ক্রমশ ব্যবধান বাড়তে থাকে তাঁর। শেষ পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে জয়ী হন তিনি।

৪০০ আসন পাওয়ার লক্ষ্যে এ বার লোকসভা নির্বাচনে লড়তে নেমেছিল বিজেপি। স্লোগান উঠেছিল, ‘আব কী বার, চারশো পার’। তবে কার্যক্ষেত্রে আড়াইশ’র ঘরও পেরোতে পারলো না বিজেপি।

ভোটের আগে ‘সঙ্কল্পপত্র’ নামের ইস্তফাপত্র প্রকাশ করেছিল বিজেপি। দলের ইস্তাহার প্রকাশ হওয়ার পর বক্তব্য রাখতে উঠে মোদি বলেছিলেন, “মোদির গ্যারান্টি এই যে, বিনামূল্যে রেশন বণ্টনের প্রকল্প আগামী ৫ বছরের জন্য চালু থাকবে। ”

বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গ্যাস পৌঁছে যাবে বলেও জানান মোদী। তা ছাড়াও বিজেপির ইস্তাহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি উদ্ধৃত করে মোদী জানিয়েছিলেন, দল তৃতীয় বারের জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের আওতায় সত্তরোর্ধ্ব সমস্ত মানুষ পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন।

প্রতিটি প্রচারসভা থেকে এই প্রতিশ্রুতিগুলির কথা বলেছিলেন মোদী। অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের অধিকাংশ কেন্দ্রে গিয়েই প্রচার করেছেন তিনি।

দ্বিতীয় দফার ভোটের পর অবশ্য মোদীর প্রচারে এসেছিল ধর্মীয় অনুষঙ্গও। ‘নবরাত্রিতে মাংস খাওয়ার অভ্যাস’ নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

কংগ্রেসের ইস্তাহারে ‘মুসলিম লিগের মনোভাব’ প্রকাশ পাচ্ছে বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেদের দলকে আক্রমণ করে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির ওপরে রয়েছে। ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে। ’’

ফলাফল বলছে, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ আর এনডিএ-র মধ্যে আসনের ব্যবধান ৬০-এর একটু বেশি। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের তকমাও পায়নি বিজেপি।

এই পরিস্থিতিতে সরকার চালাতে শরিক দলগুলোর ওপরে অনেকটাই নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে। সে ক্ষেত্রে এনডিএ-র অন্য দলগুলি বিজেপির উপর চাপ বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

বিজেপির ‘সঙ্কল্পপত্রে’ এক দেশ এক ভোট, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পদ্মশিবির তাদের এই লক্ষ্যগুলো কতটা পূরণ করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ভোটের ফল বলছে, দেশে মোদী সরকার থাকলেও, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের ঢালাও সমর্থনে বেশ খানিকটা টান পড়েছে।

news24bd.tv/আইএএম