মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদের স্বর্ণযুগের জন্য কারা দায়ী?

সংগৃহীত ছবি

মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদের স্বর্ণযুগের জন্য কারা দায়ী?

অনলাইন ডেস্ক

নিজেদের সেরা সময়ে সিরিয়ার এক তৃতীয়াংশ এবং ইরাকের ৪০ শতাংশের দখল নিয়েছিল ইসলামিক স্টেট। গোষ্ঠীটির বিভিন্ন সেল ইউরোপে হামলা চালাচ্ছিলো, এবং অনেকেই তাদেরকে নির্মূলের চেষ্টা করলেও তারা এখনও বিশ্ববাসীর জন্য হুমকি।

২০১৪ সালের জুন মাসে আবু বকর আল বাগদাদী সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে ইরাকের দিয়ালা পর্যন্ত খিলাফতের ঘোষণা দেন। এর আগে ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর দেশটিতে বিদ্যমান সুন্নী মুসলমানদের ওপর নিধনযজ্ঞ শুরু হয়।

প্রায় সকল ক্ষেত্রে তৎকালীন শিয়া সরকার সুন্নীদেরকে বঞ্চিত করতে শুরু করে, এবং যখন ইসলামিক স্টেটের আবির্ভাব ঘটে তখন ইরাকের অনেক সুন্নী মুসলিম তাদেরকে সাহায্য করতে শুরু করে।

ইসলামিক স্টেট মূলত সুন্নী ইরাকিদের কাছে স্বপ্ন বেচতে শুরু করে। তারা চেয়েছিল ইরাক ও সিরিয়াতে শিয়া সরকারকে উৎখাত করে সুন্নী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে। ইসলামিক স্টেটের ধর্মীয় নেতারা ফতোয়া দিতে শুরু করে, এবং তাদের কথা শুনবে না এমন যে কাউকে হত্যা করার নির্দেশ দিতে থাকে।

ফতোয়াগুলো সৌদি আরব থেকে আসতো এবং কাতার এগুলোকে সমর্থন করতো। পাশাপাশি, পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অর্থ, অস্ত্র এবং যোদ্ধারা ইরাক ও সিরিয়াতে পাড়ি জমাচ্ছিলো।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইসলামিক স্টেট ইরাকের সম্পূর্ণ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং সিরিয়ার বিশাল এলাকার দখল নিয়ে নেয়। সেখানে তাদেরকে স্থানীয় সুন্নী দলগুলো সাহায্য করছিলো, যারা সিরিয়া সরকারের অবহেলার কারণে ক্ষিপ্ত ছিল।

২০১৪ সালের আগস্টে ইসলামিক স্টেট তুরস্কের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে হামলা চালিয়ে ১৯০ জনকে হত্যা করে এবং ২৪০ জনকে জিম্মি করে। তারা পবিত্র স্থাপনাগুলোকে ধ্বংস করে এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালায়। সিরিয়ান সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যে যুদ্ধ করছিলো, তাই ছোটো ছোটো এলাকাগুলো ইসলামিক স্টেটের হাতে পড়ে যায়।

এরপর ইসলামিক স্টেটের হুমকি মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। আফ্রিকায় অনেক ছোটো ছোটো সন্ত্রাসী দল বাগদাদীর কাছে আনুগত্য প্রকাশ করতে শুরু করে। ইসলামিক স্টেটের সমর্থগোষ্ঠী ইউরোপে বেশ কয়েকবার হামলাও চালায়।

ইসলামিক স্টেটকে ঠেকাতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ৮৭টি পশ্চিমা এবং এশিয়ান মিত্রের সমন্বয়ে যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করে। প্রথম পাঁচ বছরে এই টাস্কফোর্স সিরিয়া ও ইরাকে অনবরত বোমা হামলা চালাতে শুরু করে, যাতে শত শত আইএস যোদ্ধা নিহত হয় এবং হাজারো আইএস যোদ্ধা আটক হয়। ২০১৯ সালে বাগদাদীকে হত্যার পর টাস্কফোর্স ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব আইএসকে নির্মূল করেনি, এর জন্য দায়ী অন্য একটি পক্ষ।

২০১৪ সালের জুনে সৈয়দ আলী আল হোসেইনি আল সিস্তানি নামের একজন শিয়া ধর্মীয় নেতা আইএসকে নির্মূল করার জন্য শিয়াদের উদ্দেশ্যে একটি ফতোয়া জারি করেন। এর ফলে ১ লাখ যোদ্ধা সমেত পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের সৃষ্টি হয়। এই বাহিনীই মূলত আইএসের বিস্তারে বাধা প্রদান করেছিলো। এই ফোর্সকে অস্ত্র ও উপদেশ দিয়েছিলো ইরান, এবং ইরাকী সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলো রাশিয়া। অপরদিকে, আমেরিকা মূলত সন্ত্রাসী দলগুলোকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়েছিলো, ইউরোপিয়ান পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা আইএসের হয়ে যুদ্ধ করছিলো এবং পশ্চিমা বিশ্ব থেকে গোষ্ঠীটি অর্থ পাচ্ছিলো।

২০১৪ সালে মার্কিন সরকারের কাছে আইএসকে নির্মূলের জন্য অস্ত্র চেয়েছিল ইরাক সরকার। মার্কিনিরা রাজি হলেও বলেছিলো অস্ত্রের প্রথম চালান ২০২০ সালে পৌঁছাবে। মার্কিনিদের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে ইরান ও রাশিয়ার দ্বারস্থ হয় ইরাক সরকার, যারা এগিয়ে এসেছিল। ইরান ও রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে ইরাক সরকার আইএসকে নির্মূল করেছিলো, এবং অবস্থা বুঝতে পেরে শেষ মুহূর্তে আমেরিকান সরকার যুদ্ধে যোগ দেয় এবং আইএসকে নির্মূলের দাবি জানাতে শুরু করে।

২০১৯ সালে আইএসের বিরুদ্ধে বিজয়ের ঘোষণা দিলেও আমেরিকা ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে যায়। বর্তমানে ইরাক সরকার যেকোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মূলে সক্ষম, এবং আইএস এখন অতীতের বিষয়বস্তু।

তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ইরাক ও সিরিয়ায় এখনও আইএসের ২ হাজার ৫০০ যোদ্ধা রয়েছে। শুধুমাত্র মার্চ মাসেই সিরিয়ায় আইএস ৬৯টি হামলা চালিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে আইএস শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি একটি ধারণা। ধারণাকে ধ্বংস করার কোনো পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।

সূত্রঃ আরটি

news24bd.tv/ab