জয়াকে সামনে প্রশংসা আর আড়ালে নিন্দা করেন যে শীর্ষ নায়িকা 

জয়া আহসান ও তানভীর তারেক

জয়াকে সামনে প্রশংসা আর আড়ালে নিন্দা করেন যে শীর্ষ নায়িকা 

অনলাইন ডেস্ক

গত মঙ্গলবার ( ২জুলাই)   ছিল অভিনেত্রী জয়া আহসানের জন্মদিন । সেই জন্মদিনে ফেসবুকে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকে। উপস্থাপক ও সিনে সাংবাদিক তানভীর তারেকও জানিয়েছেন। তিনি জয়া আহসানকে নিয়ে এদিন একটি লেখা পোস্ট করেন।

সেই লেখায় জয়ার উত্থান ও বিনয়ের গল্প বলেছেন। বলেছেন নাম না নেওয়া অন্য আরেক নায়িকার কথা যিনি জয়াকে গোপনে মন্দ সমালোচনা করেন আবার সামনে পেলে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘ তুমি এতো ভাল অভিনয় কীভাবে করো’।  তানভীর তারেকের পোস্ট নিচে দেওয়া হলো : 

শুভ জন্মদিন.. দ্যা লেডি সুপারস্টার। Jaya Ahsan
জয়া’কে আমি ফিলসফার হিসেবে মানি।

 
আমরা হরহামেশাই বলি- 
শিল্পীদের বিনয়ী হতে হয়।  
এটা খুবই ভুল তত্ত্ব।  
শুধু শিল্পী ক্যান? মানুষ মাত্রই বিনয়বচন, বিনয়বতার তার ভেতরে ধারণ করা খুব প্রয়োজন।  
প্রশ্ন হইল- আমরা এখন অনেকেই খুব বিনয়ী হবার অভিনয় করি। কিন্তু মনে মনে একেকটা খাড়া ইবলিশ!
যাই হোক মানুষ জয়ার ভেতরে ভান কম। সে সরল। সাবলীল। সহজ। ওর সাথে আমার পরিচয়ের বয়স দেড় যুগের বেশি হয়ে গেল।  
জয়া আহসানের অভিনয়ের জার্ণিকে কেউ কেউ ঈর্ষা করে। কিন্তু মুশকিল হইল ওর স্ট্রাগলকে তারা আবার মেপে দেখতে চায় না। চাইলে এদেশে আরো এমন শিল্পী তৈরি হতো।  
জয়া একটা দারুণ কথা বলে।
‘আমি দৌড়াতে চাই না। দৌড়ালে পথ দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ’
জয়া’র সাথে আমার একাধিকবার নানান বিষয়ে অন ক্যামেরা/ অফ ক্যামেরা আড্ডা হয়েছে। এত বড় শিল্পী- তাই এভাবে বলা ভাল যে, আমি তাঁর সাথে আড্ডার সুযোগ পেয়েছি বা সে সেই সুযোগটা আমাকে দিয়েছে।  
এক আড্ডায় জয়া বলেছিল।  
‘তানভীর ভাই , আমি হাঁসের মতো। সারাদিন কাঁদা, পোকা মাকড়ের ভেতরে হাঁটি, ডুবি ভাসি। আবার ডাঙায় এলেই একবারে ঝেড়ে সব ফেলে দিই। কিছু মনে রেখে চলিনা। ’
কথাটা যখন ওর বাসায় ধারণ করি। তখন বুঝিনাই। পরে এডিটর যখন এডিট করছে। তখন বারবার দেখি! কইল ক্যামনে এমন কথা !!
জয়া বাংলা ছবির যে পর্যায়ে হাঁটছে। তাঁর এই শিল্পযাত্রা। তা সুচিত্রা সেনের পরে কেউ এমন একাই এ পথে অনেকটা দূর। এটা আমি অন রেকর্ড একদিন বলেছিলাম কোনো এক অনুষ্ঠানে। সে অনুষ্ঠানে জয়া ছিল না। এক নির্মাতার সাথে আড্ডায় বলেছিলাম।  
ঐ ক্লিপ দেখে শীর্ষস্থানীয় এক নায়িকা আমাকে ফোন দিয়ে নানান আদেশ উপদেশ, বেসুরো ধমক! সিনেমা নিয়ে আপনার অনেক জ্ঞান আছে আগে জানতাম। কিন্তু কী সব মূর্খের মতো কথা বলেন আজকাল। জয়া কেন ? ও অভিনয় জানে নাকি! আপনার মাথা গ্যাছে নাকি।  
এই বলে- তিনি নিজে কী কী অর্জন করেছেন, সেই গল্প আমাকে বলা শুরু করলেন।  
তারপর থেকে আমি অফিশিয়ালি জয়া আহসানকে বাংলাদেশের লেডি সুপারস্টার হিসেবে সম্বোধণ করি।  
এরপর তার মাস কয়েক পরে কোনো এক অনুষ্ঠানে জয়া আর সেই শীর্ষ নায়িকা একসাথে কোনো এক ঘটনাচক্রে। সেখানে পারলে জয়াকে জড়িয়ে ধরে কাইন্দা দেয় সে! বলতে থাকে- তোমাকে আমার কী যে ভাল লাগে, কেমন করে করো এমন দারুণ অভিনয় !!
আগে এসব দৃশ্যে অবাক হইতাম। টাফনিল খেয়েটেয়ে মাথা ঠিক রাখতে হইত। এখন আর অবাক হই না। অভ্যেস হয়ে গেছে।  
আমরা অনেকটা এরকমই যে, আপনি আমার নীচের অবস্থানে যতদিন আছেন বা থাকবেন। ততদিন আপনাকে খুব প্রশংসা করে যাবো। যেই আপনি আমাকে ছাড়িয়ে যাবেন। তখনই ছেলেটা / মেয়েটা খুব খ্রাপ। দিনকে দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ আমরা নিজেকে ছাড়িয়ে যাক এটা কখনও নিতে পারি না।  
সমস্যা হইল - 
জয়া আহসান অনেক আগেই এখনকার সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাই এখন তার ঐ হাঁস হয়ে উঠা ছাড়া উপায়ও নাই। আবার অহংকারও তাকে মাটি থেকে আড়াল করে নাই কখনও।  
আমরা এই সোস্যাল মিডিয়ার জমানায় অদ্ভুত এক কামড়া-কামড়ি কালচারে বাস করছি। কারণ আমাদের অনেকের হাতেই কাজ কম। ক্ষুধা বেশি। তাই আজাগা কুজায়গায় কামড়িয়ে চলেছি।  
এটা হয়ত সময়ের দোষ।  
বাংলা নাটকের জয়া আহসান থেকে ঢাকাই ফিল্মের জয়া আহসান অত:পর কলকাতার আবর্তের জয়া’র যে জয় যাত্রা- সর্বাধিক ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি, সর্বাধিক ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি।  
তার এই জার্নিকে আপনি প্রশংসা না-ই করে থাকতে পারবেন। কিন্তু অস্বীকার করতে পারবেন না।  
আমরা এখন শিল্পীদের কেউ কেউ একটা দুইটা হিট হইলেই গণমাধ্যমের সাথে আড়াল থাকার খুব চেষ্টা করি। পা অনেকটা মাটি থেকে উপ্রে রেখে হাঁটার অভ্যেস করি।  
এতে সে যে ক্রমেই নিজেকে হারিয়ে ফেলে তা বুঝে উঠতে পারেনা। গণমাধ্যমকে ফেস করা, আর ঠিক ঠাক ভাবে ফেস করার ভেতরে ম্যালা পার্থক্য আছে।  
যা জয়া খুব সুন্দর করে মেনটেইন করেন।  
জানেন তো! শিল্পীকে সফল না স্বার্থক হতে হয়। কারণ জীবনে একটা কাজে সফল হবেন আবার পরের কাজে ব্যর্থ, তার পরে হয়ত অ্যাভারেজ।  
জয়া আমাদের দেশের এক স্বার্থক শিল্পী।
একটা মানুষ পুরোপুরি সহী হতে পারে না। জয়াও না।  
তবে নিজের কথা, নিজের অর্জনের কথা যে মানুষটি বিভিন্ন পাবলিক ডোমেইনে নিজ মুখে বলা শুরু করবে।  
ভাববেন- তখন থেকেই সে তার নিজেকে হারিয়ে ফেলা শুরু করেছে। জয়া তার প্রত্যেকটা ইন্টারভিউতে আত্মসমালোচনায় থাকেন।  
এখানেই মেয়েটা ব্যতিক্রম।  
অদ্ভুত।  
অসাধারণ।  
শুভ জন্মদিন দ্যা জয়া আহসান।  
আপনি এরমই থাইকেন।  
আপনাকে ভালবাসা 

news24bd.tv/ডিডি
 


 

এই রকম আরও টপিক