ক্ষমতা হারিয়ে বনি ইসরাঈলের করুণ পরিণতি

ক্ষমতা হারিয়ে বনি ইসরাঈলের করুণ পরিণতি

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

বনি ইসরাঈলের প্রতি মিসরের সম্রাট ও মিসরীয় জাতির নেতাদের আচরণ ছিল অমানবিক। সম্রাট রাজকীয় ফরমান জারি করেছিল যে বনি ইসরাঈলীয় ঘরে কোনো পুত্রসন্তানের জন্ম নিলে তাকে তত্ক্ষণাৎ মেরে ফেলতে হবে। তারা বনি ইসরাঈলের নারীদের দাসী বানিয়ে ব্যবহার করত।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, মুসা তার জাতিকে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের রক্ষা করেছিলেন ফেরাউন পরিবারের কবল থেকে, যারা তোমাদের মর্মান্তিক শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদের খুন করত আর তোমাদের নারীদের (দাসী বানিয়ে) জীবিত রাখত।

এতে ছিল তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক মহাপরীক্ষা। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৬)

মুসা (আ.) নবুয়ত লাভের পর যেসব মানুষ ঈমান আনে, ফেরাউনের পারিষদবর্গ তাদের ওপরও হামলে পড়ে। নির্যাতন-নিপীড়নের এমন কোনো পন্থা নেই, যা তারা ঈমানদারদের ওপর প্রয়োগ করেনি। অবশেষে আল্লাহর হুকুমে ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গ সাগরে ডুবে মরে।

এরপর পতিত বনি ইসরাঈলের অসাধারণ উত্থান ঘটে। ক্ষমতার এই পালাবদলের ঘটনা প্রতিটি যুগের নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠীর জন্য উদ্দীপনার সঞ্চার করতে পারে। আর জালিম, স্বৈরশাসকদের দিতে পারে এক কঠিন সতর্কবার্তা।
একটু ক্ষমতা পেলে মানুষ ক্ষমতার অপব্যবহার করে।

উত্তমকে অধম এবং অধমকে উত্তম বানিয়ে ছাড়ে। উন্মাদনায় মেতে ওঠে। সে ভুলতে শুরু করে, ‌পৃথিবীর কোনো কিছুই স্থায়ী নয়, কেবল পরিবর্তনটাই একমাত্র স্থায়ী। অথচ মহান আল্লাহর অনিবার্য নীতি হলো—‘মানুষের মধ্যে এই দিনগুলোর (সুদিন-দুর্দিন বা জয়-পরাজয়) পর্যায়ক্রমে আমি (আল্লাহ) আবর্তন ঘটাই। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪০)

রাষ্ট্রক্ষমতাও মহান আল্লাহর একটি বিশেষ অনুগ্রহ। এই ক্ষমতারও পালাবদল হয়। একসময়ের শাসক পরে হয় শাসিত, আবার একসময়ের শাসিত পরে হয়ে যায় শাসক। মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতার এই অনুগ্রহ দান করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করো এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও; যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মানিত করো আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন করো। কল্যাণ তোমার হাতেই। নিশ্চয়ই তুমি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। ’ (সুরা : আলে ইরমান, আয়াত : ২৬)

কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে ক্ষমতার অপব্যবহার জালিমকে মজলুমে পরিণত করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং আমি কিতাবে (তাওরাতে) ওহির মাধ্যমে বনি ইসরাঈলকে জানিয়েছিলাম, নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা অতিশয় ঔদ্ধত্যকারী হবে। অতঃপর যখন এই উভয়ের মধ্যে প্রথম ওয়াদা এলো, তখন আমি তোমাদের ওপর আমার কিছু বান্দা পাঠালাম, যারা কঠোর যুদ্ধবাজ। অতঃপর তারা ঘরে ঘরে ঢুকে ধ্বংসযজ্ঞ চালাল। আর এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল। তারপর আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জন্য পালা ঘুরিয়ে দিলাম, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে তোমাদের মদদ করলাম এবং জনবলে তোমাদের সংখ্যাধিক্যে পরিণত করলাম। তোমরা ভালো কাজ করলে নিজেদের কল্যাণের জন্যই তা করবে, আর যদি তোমরা মন্দ কাজ করো, তা-ও করবে নিজেদেরই জন্য। অতঃপর যখন দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় এলো, (তখন আমি তোমাদের শত্রুদের শক্তি দিলাম) যেন তারা তোমাদের চেহারা বিকৃত করে দেয়, আর মসজিদে (আকসায়) ঢুকে পড়ে যেভাবে তারা সেখানে প্রথমবার ঢুকে পড়েছিল, আর তাদের সম্মুখে যা পড়ে তাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের ওপর রহম করবেন। কিন্তু তোমরা যদি পুনরায় করো, তাহলে আমিও পুনরায় করব। আর আমি জাহান্নামকে করেছি কাফিরদের জন্য কয়েদখানা। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৪-৮)