দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) এস আলমের জন্য বরাদ্দকৃত জমি বাতিল হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে যারা জমি নিয়ে ফেলে রেখেছে বা সনদ নিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে, তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বেজা জানায়, যেসব বেসরকারি গ্রুপ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রাথমিক বা চূড়ান্ত সনদ পেয়েও কাজ করেনি, তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হবে।
বেজার কাছ থেকে এস আলম গ্রুপের দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ২০০ একর জমি ইজারার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল।
এ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি গ্রুপের জমি ইজারা ও ইজেডের লাইসেন্সের ক্ষেত্রে নতুন করে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা পেলে খুব দ্রুত এস আলমসহ অন্য গ্রুপের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বেজা।
এ বিষয়ে বেজার নতুন নির্বাহী চেয়ারম্যান ডা. মো. সারোয়ার বারী বলেন, দেশের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে সফল হওয়া যাবে না।
এ ক্ষেত্রে যারা জমি ইজারা নিয়েছে ও ইজেডের লাইসেন্স নিয়ে ফেলে রেখেছে, তাদের লাইসেন্স ও চুক্তি বাতিল করতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে উত্থাপন করা হবে। কোন প্রক্রিয়ায় জমি ইজারা নিয়ে ফেলে রেখেছে, তা পর্যালোচনা করা হবে।
তিনি বলেন, এর মধ্যে দুটি গ্রুপের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অনুমতির জন্য পাঠানো হয়েছে। মতামত পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইজেডে বিনিয়োগে অনুমতি পাওয়ার পরও বাস্তবায়ন না করা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ওই বৈঠকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সম্ভাবনা নেই এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের সনদ ও চুক্তি বাতিল হতে পারে।
আবার কিছু প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে সংশোধনের মাধ্যমে বিনিয়োগে আসার সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
রয়েছে বিদেশি নাগরিকত্বের সুবিধা
নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদেশে সম্পদের পাহাড় থাকার অভিযোগ রয়েছে এস আলমের বিরুদ্ধে। এই সম্পদের বৈধতার জন্য সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্বও ত্যাগ করার অভিযোগও রয়েছে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে। ব্যাংকে বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রায় ২ বছর আগে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাঁদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের (পার্মানেন্ট রেসিডেনশিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি।
গোপনভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই অনুমতি নিতে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি নিয়েছে পরিবারটি। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ও নথিপত্র বলছে, দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলেও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে এস আলম পরিবারের সদস্যরা জনপ্রতি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ডলার। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ভারী শিল্পে বিনিয়োগ দেখাতে হয়। বিনিয়োগের ছাড়পত্র দেয়—এমন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সনদ নিতে হয়েছে। এসব সংস্থার সনদ ব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বেজার সনদ ব্যবহারের বিষয়ে সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, এস আলমসহ কোনো গ্রুপ বেজার কাছ থেকে নেওয়া সনদ কোথাও অপব্যবহার করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করে হবে। বেজার সনদ নিয়ে যেকোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নিলে তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে এস আলম গ্রুপ দাবি করে, বেজার অনুমোদিত দুটি শিল্পাঞ্চলে ৫৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।
বেজা সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে বাঁশখালীর আলোকদিয়ায় ১৮৪ একর জমিতে ‘বাঁশখালী এস আলম ইকোনমিক জোন-১’ এবং গণ্ডামারায় ২৫৯ একর জমিতে ‘বাঁশখালী এস আলম ইকোনমিক জোন-২’ করার পরিকল্পনা প্রস্তাব দেয়।
news24bd.tv/এসএম
