সাগর-রুনি খুনের বিষয়টি আগেই জানতেন সোহায়েল-জিয়া

নৃশংস খুনের শিকার হওয়া সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি

সাগর-রুনি খুনের বিষয়টি আগেই জানতেন সোহায়েল-জিয়া

অনলাইন ডেস্ক

এক যুগ আগে নিজ বাসায় খুন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। এরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিতি হয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ঘোষণা করেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। তবে সেই প্রতিশ্রুতি কথাতেই থেকে গেছে। এখন পর্যন্ত মামলার তদন্ত প্রতিবেদনই জমা দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা।

এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় পেছানো হয়েছে ১১১ বার।

জানা গেছে, সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছিলেন সদ্য গ্রেপ্তার রিয়ার অ্যাডিমিরাল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) এম সোহায়েল এবং মেজর জেনারেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) জিয়াউল আহসান। তারা দুজনেই এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আগে থেকেই জানতেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা শেখ হাসিনা সরকারের এই দুই প্রভাবশালী কর্মকর্তাসহ অনেকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

গত ১৬ আগস্ট ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে জিয়াউলকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর ২০ আগস্ট রাতে রাজধানীর বনানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এম সোহায়েলকে। পরবর্তীতে তাদের আট এবং চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি। সেই জিজ্ঞাসাবাদেই উঠে আসতে থাকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

শেখ হাসিনা সরকারের সময় এলিট ফোর্স র‌্যাবের প্রভাবশালী কর্মকর্তা ছিলেন বাহিনীর সাবেক আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সোহায়েল। ২০১০ সাল থেকে পরবর্তী দুই বছর র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ছিলেন। ওই সময় থেকেই তার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম, হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।

২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সোহায়েল কমোডর থেকে রিয়ার অ্যাডমিরাল হিসেবে পদোন্নতি পান। অভিযোগ ওঠে, কোনো জাহাজ বা ঘাঁটি কমান্ড কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কোর্স না করেই শেখ হাসিনা সরকারের আনুকূল্যে রিয়ার অ্যাডমিরাল হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। গত বছরের ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন।

রিয়ার অ্যাডিমিরাল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) এম সোহায়েল এবং মেজর জেনারেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) জিয়াউল আহসান

এদিকে, জিয়াউল আহসান ছিলেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক। গত ১৫ বছর আলোচিত ও প্রভাবশালী এই কর্মকর্তাকে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরদিন চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া জিয়াউল ২০০৯ সালে মেজর থাকাকালে র‌্যাব-২ এর উপ-অধিনায়ক হন। ওই বছরই তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন এবং র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালকের দায়িত্ব পান।

পরে কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জিয়া র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হন। ২০১৬ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান। এর পর কিছুদিন তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৭ সালে তাকে এনটিএমসির পরিচালক করা হয়। ২০২২ সালে সংস্থাটিতে মহাপরিচালক পদ সৃষ্টি করে তাকে এনটিএমসির পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুল আলোচিত এবং চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যা মামলাটির রহস্য উন্মোচনে র‌্যাবের ওপর আস্থা রেখেছিলেন আদালত। তবে এ ঘটনায় যদি র‌্যাবেরই সাবেক কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা থাকে, তাহলে কোনোভাবেই মামলার তদন্ত তাদের কাছে রাখা উচিত হবে না। নিশ্চয়ই আদালতের নজরে বিষয়টি আনা উচিত হবে। নয়তো এই মামলার রহস্য উন্মোচন হবে না।

মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন। সবশেষ গত ৩০ জুন পর্যন্ত এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ১১১ বার পেছায় তদন্তকারী সংস্থা।

সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে এ বিলম্ব দেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার সঙ্গে ‘ক্রমাগত উপহাস’ বলে হাইকোর্টের একটি রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। চলতি বছরের ১৩ মে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না বলে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

news24bd.tv/SHS