নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সদস্য সচিবের উপর হামলা

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সদস্য সচিবের উপর হামলা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল ও তার অনুগামীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ তিন রাস্তার মোড়ে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও যুবদল নেতা খায়রুল কবির মুন্নাকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত ও জখম করা হয়। আহতরা একটি ভবনে প্রায় আধাঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পরিস্থিতি শান্ত হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ শহরের ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেন।

পরে তাদেরকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে টিপুকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ এলাকার নূর হোসেন নামের এক বিএনপি কর্মী সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছিলেন মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে সুজন নামের একজন কথিত যুবদল নেতা মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে ৩ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। তার দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠে।

টাকা না দেয়াতে নূর হোসেনকে গত কয়েকদিন ধরে কয়েক দফা মারধর করা হয়।

নূর হোসেনের অভিযোগ শুক্রবার সকালেও তাকে সুজনের লোকজন মারধর করে। এ নিয়ে নবীগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকাতে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সুজন মূলত মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর অনুসারী হিসেবে খ্যাত।

এছাড়া প্রভাব বিস্তার নিয়ে বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুলের সঙ্গে সাখাওয়াত ও টিপুর বিরোধ ছিল।
শুক্রবার বিকেলে বন্দরে বিএনপির একটি কর্মসূচীতে যাওয়ার সময়ে নবীগঞ্জ ঘাটের অদূরে তিন রাস্তার মোড়ে জমায়েত হয় মহানগর বিএনপির নেতারা। হঠাৎ করেই ৪০-৫০ জন যুবক মিলে লাঠিসোটা ও বাশ নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। এতে অনেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও টিপুকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। টিপুর শরীরের পাঞ্জাবী ছিড়ে ফেলা হয়। উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন মাসুদ রানা ও মুন্না। তাদের মধ্যে মুন্না রক্তাক্ত জখম হয়। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলার সময়ে নূর হোসেনকেও দেখা গেছে। তবে ঘটনার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা জানান, নবীগঞ্জ তিন রাস্তার মোড়ে পৌছালে সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা বিএনপির বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুলের অনুসারীরা গতিরোধ করে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই লাঠিসোটা ও বাশ দিয়ে আমাদের উপর আক্রমণ করে। এতে আবু আল ইউসুফ খান টিপু, যুবদল নেতা মুন্না গুরুত্বর আহত হয়। মূলত হত্যার উদ্দেশ্যে আমাদের উপর এ আক্রমণ হয়েছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, বিএনপির বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল, কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, রিফাত, সৌরভ, রাজীবসহ অন্তত ২০০ জন লোক টিপুসহ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। দল ১৫ ধরে ক্ষমতায় ছিলো না। এই ১৫ বছর ধরে তারা আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির দালালি করেছে। এখন দালালি করতে পারে না। তাই তারা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির লোক নিয়ে হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় আমাদের প্রায় ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আমাদের সদস্য সচিব মৃত্যুশয্যায় রয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে আতাউর রহমান মুকুল জানান, তারা অভিযোগ করতেই পারে। কারণ এখন মহানগরে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী তো আমিই আছি। তারা আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিএনপি থেকে বহিস্কার করিয়েছে। আমি বিএনপির রাজনীতি করলেও আমাকে আওয়ামীলীগের লোকজনের সঙ্গে গুলি করে হত্যা মামলার আসামী করেছে সাখাওয়াত টিপু। তারা এখন আমাকে ঘায়েল করতে নানা মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমি মারামারির মানুষ না। মারামারি করতে জানি না। আমার সেই বয়সও নেই। ওই হামলার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। সেই ফুটেজ দেখলেই বুঝতে পারবেন কারা হামলা করেছে। সেই ভিডিও ফুটেজে আমি বা আমাদের কোন লোক ছিলনা। যাদের কাছে দোষ করেছে তারাই মারধর করেছে। আমার লোকজনের এসবের সাথে জড়িত না। মূলত চাঁদা চাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। ওই টাকা পয়সার লেনদেন নিয়ে বিরোধে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম যায়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কিভাবে ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দায়ের করেন নি। অভিযোগ দায়ের করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

news24bd.tv/JP

এই রকম আরও টপিক