সংলাপ, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে যে প্রক্রিয়ায় এগোতে চায় সরকার

সংলাপ, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে যে প্রক্রিয়ায় এগোতে চায় সরকার

অনলাইন ডেস্ক

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের ভাবনা জানালেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, সংস্কার ও সুনির্দিষ্ট সংশোধনীর পরেই সরকার নির্বাচনের কথা ভাবছে। নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি ।

 

আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফিং করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।  

এরশাদ সরকারের সময় কমিশন গঠন করে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্তু হয়নি, এবার কি এমন হবে, এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নিশ্চয় উপলব্ধি এসেছে। এরশাদ সরকার সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারেনি, এর ফল কী হয়েছে সবাই দেখেছে।

তারাও কিছু করতে পারেনি, এর ফল কী হয়েছে তা ৫ আগস্ট গোটা জাতি দেখেছে। কোনো রাজনৈতিক দল নিশ্চয় চাইবে না তারাও অজনপ্রিয় হয়ে একই ফলাফল ভোগ করতে। এ জন্য প্রথম থেকে আমরা মতবিনিময়ে তাদের (রাজনৈতিক দল) অন্তর্ভুক্ত করেছি। একপর্যায়ে আমরা সংলাপে যাব। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সংশোধনী এনে তারপরেই আমরা নির্বাচনের কথা ভাবছি। রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছে আগে সংস্কার, এরপর তারা নির্বাচনে যেতে চায়। তাই আমি মনে করি, আজকের দিনে বাস্তবতাটাও ভিন্ন, প্রেক্ষিতটাও ভিন্ন। ’ 

তিনি বলেন, ‘সংস্কারের জন্য কমিশনগুলো প্রাথমিকভাবে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে বলে আমরা আশা করছি। এগুলো আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে এগুলোর স্বপক্ষে আমরা রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে পারি কি না। এ জন্য সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মতামত চাচ্ছি। ’ 
 
এরশাদের সরকারে সঙ্গে বর্তমান সরকারে পার্থক্য আছে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এ সরকার হলো গণ-অভ্যুত্থানের আউটকাম। সেখানে দুইটা মূল শব্দ ছিল। একটা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী, আরেকটা হচ্ছে সংস্কার। এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা প্রকৃত গণতন্ত্রের দিকে দেশটাকে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু এরশাদ সরকারের সঙ্গে আমাদের ফাউন্ডেশনেই অনেক পার্থক্য আছে, তাই তার সঙ্গে আমাদের কর্মপদ্ধতি, কর্মপরিকল্পনাকে কোনোভাবে মিলিয়ে ফেলব না। ’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংস্কার প্রস্তাবের কিছু কিছু বিষয় আছে, পত্র-পত্রিকায় আছে, জনগণের মতামত হিসেবে আছে, কারও কারও গবেষণায় হিসেবে আছে। ওইগুলো নিয়ে তাঁরা হয়তো কাজ শুরু করে দেবেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কংক্রিট যে প্রস্তাবগুলো আহ্বান করেছি, সেগুলো চলে আসবে। তাদের কর্মপরিধি ঠিক করতে আমাদের হয়তো দুই-তিন সপ্তাহ লাগবে। তবে আমরা মনে করেছি, এ সময় বসে না থেকে হাতে যা আমাদের আছে তা নিয়ে কাজ শুরু করুক। ওনারা কোথায় বসবেন তা মোটামুটি ধারণা আমরা করছি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সাচিবিক দিক দেখবেন- এমনটা ঠিক হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় কয়েকটা দিনের জন্য জাতিসংঘে যাচ্ছেন। উনি আসার পর কর্মপরিধি ও কারা কারা থাকবেন সেগুলো ঠিক হবে। ’

জলবায়ু ফান্ডের ৫৯৭ কোটি ৬২ লাখ ৫২ হাজার ২৫২ টাকা পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমাস ব্যাংক) এফডিআর করার বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ফারমাস ব্যাংকে রাখা টাকা সুদে–আসলে বেড়ে পাওনা হয়েছে ৮৭৩ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫৩ টাকা। বারবার টাকা চাওয়া সত্ত্বেও দিতে পারছে না। আলোচনা না করেই বছর বছর এফডিআর নবায়ন করছে তারা। তাদের বর্তমান বক্তব্য ২০৩৮ সালের আগে এ টাকা দিতে পারবে না। না সুদ, না আসল। এ রকম সমস্যা শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়ে আছে।

সেই বিষয় আজকে বৈঠকে আলোচনা তুলেছিলেন জানিয়ে রিজওয়ানা বলেন, ‘কী বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলতে পারি না। এটা তো পাবলিক মানি। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে বলা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে রোডম্যাপ তৈরি করে দেবে। যাতে এই পাবলিক মানি ফেরত পাই। ’ 

ব্যাংকিং খাত ভঙ্গুর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং সংস্কারে কতটা সময় প্রচেষ্টা দিতে হচ্ছে, এটার একটা সামান্য নমুনা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। ’ 

লভ্যাংশ বেশি পাওয়ার জন্য বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রাখা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের টাকা সরকারি ব্যাংকে রাখছি। ওদের বন্ড কেনার সিস্টেম আছে, তাহলে ইন্টারেস্ট বেশি পাওয়া যায়। ব্যাংকে টাকা কে কেন কোন ব্যাংকে রেখেছিল, সেটাও অনুসন্ধান করে জবাবদিহির আওতায় আনার কথা ভাবব। ’ 

শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কিছু রিপোর্ট পেয়েছি, আমাদের ওই দিকে ইঙ্গিত করে। রেজাল্টটা যদি দেখেন সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দিকে, এটা তো সিজনাল বিজনেস। তিন মাস আগেই মালিক পক্ষকে পণ্য প্রস্তুত করতে হয়। সেই অর্ডারগুলো ক্যানসেল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার বাতিল হচ্ছে। কিছু নির্দিষ্ট দেশের ক্রেতারা সেই অর্ডার নেওয়ার জন্য লবিং করছেন; উঠে পড়ে লেগেছেন। সেই জায়গা থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব এ কথা বলেছেন। ফলাফল দেখে অবস্থানটা বোঝা যায়। ’ 

news24bd.tv/আইএএম