ছাত্রদল নেতাকে থানায় ঝুলিয়ে নির্যাতন: ১২ বছর পর ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

মাহামুদুল হক টিটো

ছাত্রদল নেতাকে থানায় ঝুলিয়ে নির্যাতন: ১২ বছর পর ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

হরতাল-মিছিল-আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় খুলনা মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মাহামুদুল হক টিটোকে ২০১২ সালে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে থানায় নিয়ে ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। ছাত্রদল নেতাকে থানায় ঝুলিয়ে নির্যাতনের সেই ভিডিও নিউজ টোয়েন্টি ফোরের হাতে এসেছে। ওই ঘটনায় ১২ বছর পর খুলনা সদর থানার তৎকালীন ওসি এস এম কামরুজ্জামানসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

 

ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় আজম খান কমার্স কলেজের ছাত্রদল নেতা ফেরদৌস রহমান মুন্নাকেও। তাদের চোখ বেঁধে ও হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে নেওয়া হয় খুলনা সদর থানার দোতলার একটি কক্ষে। সেখানে মাহমুদুল হক টিটোকে ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়।  

ভিডিওতে দেখা যায়, দুই পুলিশ সদস্য ফ্যানের হুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে টিটোকে ঝুলিয়ে রেখেছে।

পাশেই ওসি এসএম কামরুজ্জামানসহ অন্যরা তাকে নির্যাতন করছেন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে টিটো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।  

টিটো বলেন, ‘ওসি কামরুজ্জামান আমাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে আমাকে থানার দোতলায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে ফ্যানের হুকে ঝুলিয়ে  মার শুরু করে।  লাঠি দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। কয়েকবার মারার পর আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ি। সেন্স ফেরার পর আমি পানি খেতে চাই, কিন্তু তারা বলে ওকে পানি খেতে দেওয়া যাবে ন। এর পর  একজন আমাকে পানি দেয়, কিন্তু সেটা ছিল গরম পানি। আমি তখন বলি ভাই, গরম পানি কেন? তখন তারা বলে, তোকে এটা দিছি এটাই তোর জন্য অনেক কিছু। ’   

অসুস্থ অবস্থায় জেলহাজতে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে বের হলেও আবার তাকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়। থানায় ডেকে এনে ভয়ভীতি দেখানো হয় তার পরিবারকে।  

টিটো বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমার পরিবার অনেক ভেঙে পড়ে। পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে রাজনীতি করতে নিষেধ করা হয়। পুলিশ পরিবারকে হুমকি দিয়ে বলে, আমি রাজনীতি করলে পরিবারের অনেক সমস্যা হবে। ’ 

পুলিশের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় তার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেছে বলেও জানান এই ছাত্রদল নেতা।  

এদিকে, ঘটনার ১২ বছর পর তৎকালীন ওসি কামরুজ্জামানসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার মাহামুদুল হক টিটো বাদি হয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক অভিযোগ আমলে নিয়ে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে বর্তমান পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দেন।  

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাফিউল আলম বলেন, ‘২০১২ সালের ২২ এপ্রিল তৎকালীন ওসি টিটোকে ধরে নিয়ে যায় এবং ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে প্রচুর মারপিট করে। এতে তার পায়ের পাতা ভেঙে যায়। জ্ঞান ফেরার পর তাকে গরম পানি খেতে দেওয়া হয়। ’ 
 
বাদীপক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট আ ফ ম মোস্তাকুজ্জামান বলেন, ‘আদালত সার্বিক প্রমাণাদি দেখে মামলাটা গ্রহণ করেছেন। বর্তমান পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের ভার দিয়েছেন। আগামী মাসের ১৭ তারিখ তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন। ’  

মামলার অপর আসামিরা হলেন তৎকালীন এসআই মো. শাহআলম, জেলহাজ্ব উদ্দিন, পুলিশ কমিশনার শফিকুর রহমানসহ ৯ জন।  

দোষী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যরা।

news24bd.tv/আইএএম