কক্সবাজারে ৮৫৬ একর বনভূমির বরাদ্দ বাতিল হচ্ছে

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে এই বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারে ৮৫৬ একর বনভূমির বরাদ্দ বাতিল হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক

কক্সবাজারে রক্ষিত বনের জমিতে দুই প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া ৮৫৬ একর বনভূমির দীর্ঘমেয়াদি বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহীদ এটিএম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমির নামে ১৫৬ একর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নামে ৭০০ একর বনভূমি নিয়মবহির্ভূতভাবে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

বনভূমি রক্ষার মাধ্যমে ওই অঞ্চলের পরিবেশ ও ইকোসিস্টেম টিকিয়ে রাখতে বরাদ্দ বাতিলের উদ্দোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। বরাদ্দ বাতিলের ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফকে চিঠি দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে ওই বরাদ্দ বাতিলের ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি চলতি মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ‘দেশে যে পরিমাণ বনভূমি দরকার, তা নেই। তাই যতটুকু বনভূমি টিকে আছে, তা রক্ষা করতে সরকার সাংবিধানিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং মৌজায় ১৫৫ দশমিক ৭ একর জমি শহীদ এটিএম জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নামে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এ জমি ৭৭ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৭১৫ টাকা মূল্যে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। পরে শহীদ এটিএম জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নাম পরিবর্তন করে শহীদ এটিএম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমি নাম দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব শফিউল আলমের ভাই এটিএম জাফর আলম (প্রয়াত)।

এছাড়া কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ-সংলগ্ন ঝিলংজা মৌজার ৭০০ একর জমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নামে ২০২১ সালের ৩ জুলাই বরাদ্দ দেওয়া হয়। জমির মূল্য ধরা হয় ৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু একাডেমির জন্য প্রতীকী মূল্য ধরা হয় মাত্র ১ লাখ টাকা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রে দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বনভূমিকে অকৃষি খাসজমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে বন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বন বিভাগ।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এই বনভূমিতে মূলত প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালা রয়েছে। বন্য প্রাণীদের নিরাপদ আবাস এই এলাকা। বিশেষ করে মহাবিপন্ন প্রজাতির এশীয় বন্যহাতির একটি দল নিয়মিতভাবে সেখানে বিচরণ করে। বিশেষ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য– যেমন নরম মাটি, ছড়া ও মিঠাপানির আধার ও সমুদ্র-উপকূলবর্তী হওয়ায় সেখানে বৈচিত্র্যপূর্ণ বৃক্ষ জন্মেছে। প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণের স্বার্থে এ বনভূমি রক্ষা করা প্রয়োজন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ঝিলংজা মৌজার ৭০০ একর বনভূমিসহ কক্সবাজার সদর ও সাগর সৈকতকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে এমন এলাকায় কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ এবং পরিবেশ ও ইকোসিস্টেমের ক্ষতি হয় এমন কোনো তৎপরতা চালানো নিষেধ। কিন্তু ২০২১ সালে ওই বনভূমিকে খাসজমি দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয় একাডেমি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়।

এছাড়া খুনিয়াপালং মৌজায় বন্দোবস্ত দেওয়া ১৫৫ দশমিক ৭ একর জমি গেজেটভুক্ত রক্ষিত বনভূমি।

news24bd.tv/DHL