নিত্যপণ্যের বাজারে আবারো অস্থিরতা

নিত্যপণ্যের বাজারে আবারো অস্থিরতা

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার সপ্তাহ ব্যবধানে আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে। মাছ, মাংস ও শাক-সবজিসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধমুখী। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। তাদের মতে, শুধু সরকার পরিবর্তন হলেই চলবে না, অতিমুনাফা করার মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে ব্যবসায়ীদের।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল, মাছ ও মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে কমে গেছে পণ্যের সরবরাহ। তাছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।

বাজারে চলমান অস্থিরতা নিয়ে ক্রেতারা জানিয়েছেন, সরকার বদলালেও বাজারের চিত্র বদলায়নি; অসাধুরা এখনও লুটে নিচ্ছে টাকা।

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৮০-১০০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, লতি ৬০-৮০ টাকা, কহি ৬০ টাকা ও পটোল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, শিম ২০০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

এছাড়াও, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, আর প্রতি পিস লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। বাজারে লালশাকের আঁটি ২০ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, কলমিশাক ১০-১৫ টাকা ও পালংশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমায় ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, কিছু কিছু সবজির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে কমেছে হাতেগোনা কয়েকটির দাম। সম্প্রতি বন্যায় ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে, যার প্রভাবে দাম বেড়েই চলছে।

গত ৪-৫ দিন আগে বৃষ্টির কারণে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে নেমে এসেছে ১৬০-১৮০ টাকা। অথচ গত সোমবারও (১৬ সেপ্টেম্বর) মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩০০ টাকায়।

এদিকে, সরকার ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেয়ার পর আরও চড়েছে বাজার। বিক্রেতারা বলছেন, দাম নির্ধারণের আগে বাজারে কম দামেই বিক্রি হয়েছে ডিম ও মুরগি। কিন্তু দাম বেঁধে দেয়ার পর খামারিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও।

বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৮৫ টাকা, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৪০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। এছাড়া, জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।

এদিকে মুরগির পাশাপাশি অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

বাজারে মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, আর সাদা ডিম ১৫৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই চড়া চালের দাম। বর্তমানে মিনিকেট ৭১-৭২ টাকা, আটাশ চাল ৫৭-৫৮ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকা, সুগন্ধি চিনিগুড়া পোলাওর চাল ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, গত এক-দেড় মাস ধরেই চড়া চালের বাজার। নতুন করে দাম না বাড়লেও, কমেনি।

তবে বাজারে সামান্য কমেছে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। এছাড়া, ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০-১১৫ টাকা ও পাকিস্তানি ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি দেশি রসুন ২২০-২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৪০-২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকায়।

মাছের দামে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। বেশিরভাগ মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৩৮০ টাকায়। এছাড়া, চাষের পাঙাশ ২০০-২২০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০-২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০-২৮০ টাকায়, চাষের শিং প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০ টাকায়, কোরাল ৭৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা, আইড় ৭৫০-৮০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এতোদিন ভারতে রপ্তানি না হলেও বাজারে ইলিশের দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৩০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৭০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত।

news24bd.tv/SC