কোরআনের ফযিলতপূর্ণ কয়েকটি সূরা ও আয়াত

কোরআনের ফযিলতপূর্ণ কয়েকটি সূরা ও আয়াত

অনলাইন ডেস্ক

কোরআনুল কারীমের মর্যাদা, ফজিলত, অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে অনেক আয়াত বর্ণিত হয়েছে, তেমনি বহু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে কুরআন পাঠের ফযিলত। কোরআনুল কারীমের যথাযথ তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন আল্লাহর সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে, যাতে কখনও লোকসান হবে না। পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তাদের সওয়াব পুরোপুরি দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দেবেন।

নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল মূল্যায়নকারী। ” (সুরা-ফাতির-২৯-৩০)
কোরআনের একটি আয়াত (পাঠ করা বা শিক্ষা দেয়া) উটের মালিক হওয়া অপেক্ষা উত্তম। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: “তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কোরআন হতে দুটি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না? তাহলে সেটি তার জন্য দুটি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম।

চারটি আয়ত চার উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম। ” (মুসলিম)

সংক্ষেপে কতকগুলো সুরা ও আয়াত পুন:পুন: পাঠের ফযিলত সম্পর্কে এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।

সূরা ফাতিহা
“সূরা ফাতিহা' কে আল্লাহ তাআলা তার ও বান্দার মাঝে ভাগ করে নিয়েছেন । বান্দা যখন নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করে প্রতিটি আয়াতের জবাব আল্লাহ তা'আলা দেন। ” [মুসলিম হা/৯০৪, মিশকাত হা/৮২৩]

আবু সাইদ রাফে’ ইবনে মুআল্লা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ (সা:) আমাকে বললেন, “মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বেই তোমাকে কি কুরআনের সব চেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব না?” এই সাথে তিনি আমার হাত ধরলেন। অতঃপর যখন আমরা বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, তখন আমি নিবেদন করলাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা:)! আপনি যে আমাকে বললেন তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সব চেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব?’

সুতরাং তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ (সূরা ফাতেহা), এটি হচ্ছে ‘সাবউ মাসানি (অর্থাৎ নামাযে বারংবার পঠিতব্য সপ্ত আয়াত ) এবং মহা কুরআন; যা আমাকে দান করা হয়েছে”। (সহীহুল বুখারি ৪৪৭৪)

সূরা ইখলাস
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত , রাসূলুল্লাহ (সা:) (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”।

অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) সাহাবাগণকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তারা বলে উঠলেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ ( অর্থাৎ কেও পারবে না। ) তিনি বললেন, “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস সামাদ” (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। [সহীহুল বুখারি। নং ৫০১৫]

সূরা ফালাক ও সূরা নাস
উকবাহ বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সা:) একদা বললেন, ‘তুমি কি দেখনি, আজ রাতে আমার উপর কতকগুলি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; যার আনুরূপ আর কিছু দেখা যায়নি? (আর তা হল,) ‘কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ক’ ও ‘কুল আউযু বিরাব্বিল নাস’। (মুসলিম ৮১৪)

আবূ সাঈদ খুদরী ( রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন ‘রাসূলুল্লাহ (সূরা ফালাক্ক ও নাস অবতীর্ণ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষাতে) জিন ও বদ নজর থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন উক্ত সূরা দু’ টি অবতীর্ণ হল, তখন ঐ সূরা দু’টি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন’। (তিরমিজী ২০৫৮)

সূরা মূলক
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘কুরআনের তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা এমন আছে , যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে,সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মূলক’ (সূরা মূলক)। (আবূ দাউদ ১৪০০)

সূরা বাক্বারা
হাদিস গ্রন্থ মুসলিম এর ৮০৬ নং হাদীস থেকে জানা যায়, একদা জিবরাইল (আঃ) নবী(সা:)-এর নিকট বসে ছিলেন। এমন সময় উপর থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি (জিবরাইল) মাথা তুলে বললেন, ‘এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজ খোলা হল। ইতোপূর্বে এটা কখনও খোলা হয় নাই। ওদিক দিয়ে একজন ফেরেশতা আবতির্ন হল। এই ফেরেশতা যে দুনিয়াতে অবতরণ করেছে,ইতোপূর্বে কখনও অবতরণ করেনি। সুতরাং তিনি এসে নবী (সা:)-কে সালাম জানিয়ে বললেন, ‘‘আপনি দুটি জ্যোতির সুসংবাদ নিন। যা আপনার আগে কোন নবীকে দেওয়া হই নাই। (সে দুটি হচ্ছে) সূরা ফাতেহা ও সূরা বাক্কারার শেষ আয়াতসমূহ । ওর মধ্যে হতে যে বর্নটিই পাঠ করবেন, তাই আপনাকে দেওয়া হবে। ’’

এছাড়াও, বুখারি হাদিস গ্রন্থের ৪০০৮ নং হাদীস হতে আবূ মাসাঊদ বদরী (রাঃ) হতে বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত দু’টি পাঠ করবে, তার জন্য সেই দু’টি যথেষ্ট হবে’।

অর্থাৎ, সে রাতে অপ্রীতিকর জিনিসের মোকাবেলায় যথেষ্ট হবে। অথবা তাহাজ্জুদের নামায থেকে যথেষ্ট হবে।

আয়াতুল কুরসী
কুরআনের সবচেয়ে বড় মর্যাদাপূর্ণ আয়াত 'আয়াতুল কুরসী'। সুরা বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াতকে “আয়াতুল কুরসী” নামে অভিহিত করা হয়েছে। যে ব্যক্তি ঘুমানোর সময় ইহা পাঠ করবে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। [বুখারী হা/২৩১১ এর পরবর্তী বাব]

যে ব্যক্তি প্রতি ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল্ জামে :৬৪৬৪)

হাদীস গ্রন্থ মুসলিম এর ৮১০ নং হাদীসে উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘হে আবূ মুনযির! তুমি কি জান,মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরআন) এর ভিতর তমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোনটি?’ আমি বললাম, ‘সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরসী। ’ সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপড় মেরে বললেন, ‘আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক’। (অর্থাৎ তুমি, নিজ জ্ঞানের বর্কতে উক্ত আয়াতটির সন্ধান পেয়েছ, সে জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। )

সূরা কাহফ
মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমদ হাদীস গ্রন্থের বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি 'সূরা আল্-কাহাফ' এর প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করে সে দাজ্জালের ফিৎনা হতে নিরাপদ থাকবে। শেষ ১০ আয়াতের ব্যাপারেও উল্লিখিত ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে।

ইমাম নাসাঈ ও বায়হাকী হতে জানা যায়, যে ব্যক্তি জুম’আর দিনে 'সূরা আল-কাহাফ' পাঠ করবে, তার জন্য মহান আল্লাহ্ দুই জুম’আর মাঝে নূর আলোকিত করবেন।

পরকালে কুরআন সুপারিশ করবে
রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা কিয়ামত দিবসে কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে। (মুসলিম) অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে সুপারিশ করবে। (আহমাদ, হাকেম)

এই রকম আরও টপিক