ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে এসেছে তার বাল্যবন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীনের নাম। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। কোটচাঁদপুরের নির্জন এলাকায় বিলাসবহুল শাহিনের বাগানবাড়ি যাতায়াত ছিল চলচ্চিত্র অঙ্গনের নায়িকা ও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির। এ বাড়িতেই মাঝে মধ্যে শাহীনের সঙ্গে আড্ডা দিতেন এমপি আনার।
জানা গেছে, কোটচাঁদপুর শহর থেকে প্রায় ৫কিলোমিটার দূরে এলাঙ্গী গ্রামের নির্জন মাঠের ভেতরে চারপাশে জঙ্গল, কাঁটাতার ও ফুলেঘেরা বেড়া। ভেতরের আমবাগানের এক প্রান্তে বিলাসবহুল দ্বিতীয় বাড়ি, যা দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। বাড়িটির বেশিরভাগই কাচঘেরা। ঝুলছে বড় বড় পর্দা।
প্রবেশ পথে লেখা, কুকুর হইতে সাবধান। এই কয়েকটি কুকুর জার্মান থেকে আনা। আর ভেতরে এলাকার কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তবে বাইরে থেকে কিছু সময় লোকজন আসে, ভেতরে ঢোকে। রাতে মাঝে মাঝে গানবাজনা হয়, মাইক বাজে। প্রায়ই গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢোকে। দিনে ও রাতের বেলায় কেউ মোটরসাইকেল নিয়েও ঢোকে।
মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল জানান, আনার ও শাহীনের বন্ধুত্ব প্রায় ৩০ বছরের। পাশের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামে শাহীনের ওই বাংলোয় প্রথমবার তিনি গিয়েছিলেন বছরখানেক আগে। তিন-চার মাস আগে শেষবার এমপি আনার তাকে ওই বাংলোয় নিয়ে গিয়েছিলেন। একদিন দর্শনা থেকে বাড়ি ফেরার পথে আনার তাকে বলেছিলেন, চলো বন্ধু শাহীনের সঙ্গে দেখা করে আসি। এরপর তারা দুজন ওই বাংলোয় যান। আনার একান্তে শাহীনের সঙ্গে কথা বলেন। তবে রসুল বাইরে বাংলোর মধ্যে একটি কক্ষে বসে অপেক্ষা করেছিলেন।
রসুল বলেন, বাংলো দেখে তিনি হতবাক হয়েছেন, এই গ্রামের মধ্যে এত ভিআইপি বাংলো। যেখানে বিদেশি কুকুর, অনেক কর্মচারী, ভিআইপি আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। আনার তাকে বলেছিলেন, শাহীন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। এখানে বেড়াতে এলে এই বাংলোতে অবস্থান করে।
এলাকাবাসী জানান, বাগানবাড়িতে বিভিন্ন সময় নামিদামি অনেক লোক আসা-যাওয়া করে। রাতে সেখানে মদের আড্ডা আর সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে আমোদ-প্রমোদ করা হয়। শাহীন নিজেই এলাকায় সালিশ-দরবার করতেন। সেখানে তার রায়ই চূড়ান্ত হতো। কেউ বিরোধিতা করলে পুলিশ দিয়ে তাকে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। তবে শাহীন এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন, তার বিরুদ্ধে থানা-পুলিশে অভিযোগ দিয়ে লাভ হতো না। শাহীন গত দেড় দশকে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
কালীগঞ্জের পৌর মেয়র এমপি আনারের ঘনিষ্টজন বলে পরিচিত আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, ১ম ধাপে উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে শাহীনসহ তার ভাড়াটিয়া কিলাররা উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে এসে এমপি আনারের সাথে পরিচয় করে গেছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতার ভাই জানান, সম্প্রতি ভারতীয় বন্ধু সোনা ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসও বাংলাদেশের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আনারের বাড়িতে এসেছিল।
news24bd.tv/তৌহিদ