খবর সংগ্রহে গিয়ে যৌন হেনস্তার শিকার নারী সাংবাদিক, পুড়িয়ে দেওয়া হয় মুখও

সংগৃহীত ছবি

খবর সংগ্রহে গিয়ে যৌন হেনস্তার শিকার নারী সাংবাদিক, পুড়িয়ে দেওয়া হয় মুখও

অনলাইন ডেস্ক

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলাকারীদের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হন এক নারী সাংবাদিক। এছাড়া গ্যাস লাইট দিয়ে তার মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন নারায়ণগঞ্জের ওই নারী সাংবাদিক।

ভয়াবহ সেই ঘটনার ১০ দিন পরেই ভয় আর আতঙ্কে থাকেন তিনি। নিজের ওপর হওয়া হামলা নিয়ে তিনি বলেন, ‘রাতে ঘুম হয় না।

দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায়। সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে থাকি। মানুষের ভিড় দেখলেই ভয় লাগে। প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
কোনোভাবেই মাথা থেকে ওই স্মৃতি মুছতে পারছি না। ’ 

জানা গেছে, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য গত ২০ জুলাই বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় যান ওই নারী সাংবাদিক। এ সময় তার সঙ্গে আরও দুই নারী সহকর্মী ছিলেন। তারাও মারধরের শিকার হয়েছেন। আহত তিন নারী সাংবাদিকই স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর আন্দোলনরতদের একটি অংশ তাদের ওপর হামলা চালায়।

এদিকে, হাসপাতালে যিনি ভর্তি আছেন তার শারীরিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসক।

পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী সাংবাদিক জানান, আন্দোলনের শুরু থেকেই পেশাগত কারণে মাঠপর্যায়ে কাজ করছিলেন তারা। ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ ঘোষণার পরও নারায়ণগঞ্জের একাধিক স্থান ছিল আন্দোলনকারীদের দখলে। পরদিন বিকাল ৪টার দিকে শহরের চাষাঢ়া থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক হয়ে সাইনবোর্ড এলাকায় যান তিন সাংবাদিক। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পরই হামলার শিকার হন তারা।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আমরা যখন যাচ্ছিলাম তখন পরিচিত একজন বলছিলেন, ওদিকে যাইয়েন না সাংবাদিক জানলে মেরে ফেলবে। তখন ফিরে যেতে চাইলেও সাথের জন বললো, চলেন যাই, বেশিক্ষণ থাকবো না। কিছু ছবি আর ফুটেজ (ভিডিও) নিয়ে চলে আসবো। তার কথায় সায় দিয়ে গেলাম সেখানে। যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ‘ওই সাংবাদিক’ বইলাই আমাদের ঘেরাও দিয়ে ফেলে। তারপর আর কিছু বলার নাই। যার হাতে যা ছিল তা দিয়েই মারতে শুরু করলো। দুইজন কোনোমতে পালাতে পারলেও শারীরিকভাবে আমাকে ওরা হেস্তনেস্ত করে ছাড়লো। তা তো আপনারা শুনেছেনই। ’ 

শুধু মারধরই নয়, ‘যৌন নির্যাতনের’ শিকার হয়েছেন অভিযোগ করে তিনি হেনস্তার ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় গাড়িগুলো যেভাবে পিটাইয়া ভাঙছে, আমাদেরও একইভাবে পিটাইছে। এক পর্যায়ে একজন বলে উঠলো ‘তোরা থাম, মইরা গেলে তো মামলা খাবি’। তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার শব্দ পেয়ে হামলাকারীরা সরে যায়। পরে স্থানীয় দুইজন লোক আমাকে কোনোমতে ধরে রিকশা তুলে দেয়। ’ 

তার আগে হামলাকারীরা মুখের সামনে গ্যাস লাইটার জ্বেলে ধরলে মুখমণ্ডলের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায় বলেও তুলে ধরেন এই সংবাদকর্মী।

আহত অবস্থায় প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন তিনি। পরে তাকে পাঠানো হয় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলেও তিনি যেতে পারেননি।

নারায়ণগঞ্জের যে বেসরকারি হাসপাতালে এই নারী সাংবাদিক চিকিৎসা নিচ্ছেন সেখানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মাহাদী হাসান বলেন, ‘একবার তিনি এখানে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় গিয়েছিলেন। পরে আবার এসে হাসপাতালে ভর্তি হন। গত পাঁচদিন তিনি ভর্তি আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা আগের থেকে ভালো। তবে তার মাথায় আঘাত বেশি। মুখের বেশকিছু অংশ ঝলসে যাওয়ায় সিটিস্ক্যান করা যাচ্ছে না। ’

news24bd.tv/SHS