দ্বিন পালনে নারী-পুরুষের ভূমিকা

দ্বিন পালনে নারী-পুরুষের ভূমিকা

আলেমা মারিয়া মিম

প্রত্যেক সফল পুরুষের নেপথ্যে একজন নারীর মমতাময়ী পরশ থাকে। কখনো মায়ের রূপে, কখনো বোন বা স্ত্রী হিসেবে। নারী তাঁর সঙ্গে থাকা পুরুষের সফলতার ভাগীদার হয়ে থাকেন। পুরুষের জীবনে তাঁর রক্তের সম্পর্কের মা ও বোনের ন্যায় অপরিচিত মেয়ে থেকে স্ত্রী হয়ে ওঠা নারীর অবদানও অপরিসীম।

তাই তো স্বামীর পার্থিব বিষয়াদির পাশাপাশি স্ত্রী তাঁর দ্বিনদারিতায়ও সহযোগী হন। তা ছাড়া একজন সৎ ও নেককার স্ত্রী স্বামীর জন্য রহমতস্বরূপ। হাদিস শরিফে এমন নারীকে দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সমগ্র পৃথিবী মানুষের ভোগ্য বস্তু, আর পৃথিবীর ভোগ্য বস্তুগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হলো পুণ্যবতী স্ত্রী।

’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩২৩২)

অন্য হাদিসে হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন এই আয়াত নাজিল হলো, যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তাদের মর্মন্তুদ আজাবের সুসংবাদ দিন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনবার বললেন, সোনা-রুপার বিনাশ হোক। কথাটি সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর জন্য কিছুটা ভারী মনে হলো। তাই তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আমারা কোন বস্তুকে সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করব? নবীজি (সা.) উত্তর দিলেন,  ‘জিকিরকারী জবান, শোকরকারী অন্তর এবং এমন স্ত্রী যে তার স্বামীকে দ্বিনের কাজে সহযোগিতা করবে। ’ (তাফসিরে ইবনে কাসির ২/৫৪৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩১০১, ২২৩৯২)

বৈবাহিক সম্পর্ক মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। চারপাশের নানা মানুষ ও আপনজনের মধ্যে থেকেও দিনশেষে একজন পুরুষ বা নারী নিজস্ব একটা জগৎ এবং একান্তই নিজের একজন সঙ্গী কামনা করেন। যিনি সব কাজে তাঁর সাহায্যকারী হবেন। সে ক্ষেত্রে দ্বিনদার জীবনসঙ্গীর গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। কেননা দ্বিনদারিতার অভাবে ঘরে অশান্তি দেখা দেয়।

যার প্রভাব পড়ে পুরুষের বাইরের কর্মস্থলেও। ফলে এভাবেই পুরো একটি পরিবার, সমাজ, এমনকি রাষ্ট্রও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।  অপরদিকে দ্বিন মেনে চলার কারণে ঘরের শান্তি বজায় থাকে। ফলে শ্রমিক থেকে শুরু করে একজন রাষ্ট্রপতিও স্বাচ্ছন্দ্যে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। প্রয়োজনে একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করে যেকোনো সমস্যার সমাধান করে দ্বিনের ওপর অটল থাকতে পারেন।

এ জন্য আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে দ্বিনের কাজে পরস্পরের সহযোগী নর-নারীর প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদের ওপরই আল্লাহ তাআলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭১)

তা ছাড়া দাম্পত্য জীবনে দ্বিনের কাজে সাহায্যকারী স্বামী-স্ত্রীর জন্য নবীজি (সা.)-ও রহমতের দোয়া করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির ওপর রহম করুন, যে রাত্রের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে, অতঃপর তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়, সেও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। যদি তার স্ত্রী জাগ্রত হতে না চায় তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়। ওই মহিলার ওপরও আল্লাহ তাআলা রহম করুন, যে রাত্রের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। অতঃপর তার স্বামীকেও জাগিয়ে দেয়, সে-ও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। যদি সে জাগ্রত হতে না চায়, তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ১৬১০)

ইসলামের সোনালি যুগের নারীরাও নিজে দ্বীন পালনের পাশাপাশি স্বামী-সন্তানকেও আমল করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। স্বামী উপার্জনের জন্য বের হলে বলে দিতেন যে আমাদের ভরণ-পোষণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন এবং হারাম আহার থেকে দূরে রাখুন। কারণ আমরা অভাব-অনটন এবং ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করতে পারব। কিন্তু জাহান্নামের আগুন সহ্য করতে পারব না।

আবু হাকিম (রহ.)বলেন, একবার হাসসান ইবনে আবু সিনান (রহ.) ঈদের নামাজে বের হলেন। নামাজ থেকে ফিরে এলে তাঁর স্ত্রী দৃষ্টির গুনাহ থেকে বেঁচেছেন কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন, কী বলছ! ঘর থেকে বের হওয়া থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত দৃষ্টি কেবল পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির প্রতি নিবদ্ধ ছিল। (হিলইয়াতুল আওলিয়া : ৩/১১৫)