নয়াদিল্লির শেখ হাসিনাকে ফেরত দেয়ার সম্ভাবনা কতটা?

নয়াদিল্লির শেখ হাসিনাকে ফেরত দেয়ার সম্ভাবনা কতটা?

অনলাইন ডেস্ক

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার পালানো এবং দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার এক মাস অতিবাহিত হয়েছে ইতোমধ্যে। দীর্ঘদিনের এই মিত্রকে নিয়ে এখন উভয়সঙ্কটে রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ভারত সরকার। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তার প্রত্যর্পণ নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। যদি শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চায় বাংলাদেশ তখন কী ঘটবে? দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রত্যর্পণ চুক্তির ব্যতিক্রমী ধারা যদি ভারত ব্যবহার করে তাহলে তাতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে? বুধবার সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সাবেক কূটনীতিক এবং শিক্ষাবিদরা বলছেন, নয়াদিল্লি সম্ভবত হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতে ঢাকার চাপ প্রতিহত করবে।

ডয়চে ভেলেকে পাকিস্তানে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার অজয় ​​বিসারিয়া বলেন, যতই বাংলাদেশ থেকে চাপ আসুক কোনো পরিস্থিতিতেই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে না ভারত। বরং ভারত পছন্দ করবে যে সে তার পছন্দের পশ্চিমা আশ্রয়স্থলে স্থানান্তরিত হোক শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত মীরা শঙ্কর উল্লেখ করেছেন, ওয়াশিংটন হাসিনাকে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিচ্ছে না।

শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য উভয়ই তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়নি।

ভারতে হাসিনার অবস্থান নিরাপত্তাজনিত কারণে দেওয়া হয়েছে বলে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আগস্টের শেষের দিকে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছিলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয় ভিত্তিহীন।

জয়সওয়াল সাংবাদিকদের বলেছেন, "যেমন আমরা আগেই বলেছি, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তার কারণে খুব অল্প সময়ের নোটিশে ভারতে এসেছিলেন। এই বিষয়ে আমাদের আর কিছু যোগ করার নেই। "

তবে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত ভারত এবং হাসিনার সরকারের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংযোগের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, নির্বাসনের মাধ্যমে "ভারত হাসিনাকে হতাশ করার সম্ভাবনা কম"।

তিনি বলেন, "উভয় সরকারকেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সময় বাস্তববাদীতা এবং পরিপক্কতা দেখাতে হবে। হাসিনাকে থাকার অনুমতি দিলে ভবিষ্যতের সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়বে"।

গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। শেখ হাসিনার নামে বিভিন্ন মামলা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরে এনে বিচারের আওতায় আনতে চায়। কিন্তু দিল্লি তাতে অনুমোদন দিতে আগ্রহী নয় মনে হচ্ছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে সরকারের সহিংসতায় শত শত ছাত্র-জনতা নিহত হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, সহিংসতার জন্য প্রধানত শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন।  

গত রোববার তিনি বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের অপরাধী প্রত্যর্পণ সম্পর্কিত একটি চুক্তি ২০১৩ সালে সই হয়েছে। সে সময় শেখ হাসিনার সরকারই ক্ষমতায় ছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হওয়া ধ্বংসযজ্ঞের মূল অভিযুক্ত যেহেতু তিনি, সেহেতু আমরা তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করতে আইনি পথে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।  

কিন্তু কোথায় আছেন  শেখ হাসিনা তার বিস্তারিত কিছুই জানাচ্ছে না ভারত। এদিকে ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে।

এদিকে ভারতে হাসিনার কার্যকলাপ ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক সৃষ্টি করেছে। ইউনূস তার মন্তব্যকে 'সমস্যাজনক' বলে বর্ণনা করেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড.মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশে ফেরত আনার আগ পর্যন্ত ভারত যদি তাঁকে রাখতে চায়, তবে শর্ত থাকবে যে, তিনি যেন চুপ থাকেন। ’

ভারতে বসে তিনি কথা বলবেন, নির্দেশনা দেবেন এটি কারো পছন্দ নয় বলেও জানান ইউনূস।

আগস্টের মাঝামাঝিতে হাসিনা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় হত্যা ও ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনার পুত্র ও সাবেক আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের মাধ্যমে এ বিবৃতি দেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তার ছেলের মাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান।

news24bd.tv/TR