দোয়া করার ক্ষেত্রে যে সতর্কতা জরুরি

দোয়া করার ক্ষেত্রে যে সতর্কতা জরুরি

 মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মগজ বলা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে মুমিনদের বিভিন্ন বিষয়ের দোয়া শেখানো হয়েছে। এসব দোয়া পাঠ করার সময় অনেককে এর শব্দ ও বাক্যে পরিবর্তন আনতে দেখা যায়।

বিশেষত সম্মিলিত দোয়ার সময় মাসনুন দোয়ায় ব্যবহৃত একবচনকে বহুবচনে রূপান্তর করতে দেখা যায়।

হয়তো হাদিসে একবচনে এসেছে—হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, কিন্তু দোয়া করার সময় বহুবচনে বলা হচ্ছে, হে আল্লাহ, আমাদের ক্ষমা করুন। প্রশ্ন হচ্ছে, দোয়ার শব্দ ও বাক্যে এমন পরিবর্তন কি অনুমোদিত?

প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, দোয়ার শব্দ ও বাক্যে পরিবর্তন করা হারাম নয়, তবে তা অনুচিত। কেননা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো ইবাদতেরই অংশ।

আর ইবাদত সেভাবেই করা উত্তম, যেভাবে তা বর্ণিত হয়েছে। তাতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা অনুচিত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও এমন পরিবর্তন থেকে নিষেধ করেছেন। বারা ইবনু আজিব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তুমি বিছানা গ্রহণ করবে, তখন নামাজের অজুর মতো অজু করবে। এরপর তুমি তোমার ডান কাতে শুয়ে পড়বে। তারপর তুমি বলবে, ‘হে আল্লাহ! আমি আমার চেহারাকে তোমার প্রতি সমর্পণ করলাম, আমার কাজকর্ম তোমার কাছে অর্পণ করলাম। আমি প্রতিদান পাওয়ার প্রত্যাশায় এবং শাস্তির ভয়পূর্বক তোমার কাছে আশ্রয় চাইলাম। তুমি ছাড়া নেই কোনো আশ্রয়স্থল ও নেই কোনো মুক্তির স্থান। তুমি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছ তার ওপর বিশ্বাস আনলাম, তুমি যে নবী পাঠিয়েছ তাঁর প্রতি বিশ্বাস আনলাম। ’

এ বাক্যগুলোকে তোমার শেষ কথা বলে গণ্য করে নাও। এরপর যদি তুমি সে রাতে মারা যাও তাহলে তুমি ফিতরাতের ওপরই মৃত্যুবরণ করলে। বারা ইবনু আজিব (রা.) বলেন, আমি দোয়াটি মনে রাখার জন্য বারবার পড়তে গিয়ে বললাম, ‘আমি আপনার রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি, যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন। ’ অর্থাৎ ‘তোমার নবী’-এর স্থলে ‘তোমার রাসুল’ বললাম। তিনি বললেন, বরং তুমি বলো, ‘আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি তোমার নবীর প্রতি, যাকে তুমি প্রেরণ করেছ। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭১০)

হাফেজ ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) বলেন, ‘দোয়ার শব্দগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত। এর আলাদা বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য আছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি-তর্ক গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং সে শব্দে এসেছে, সে শব্দে তা সংরক্ষণ করা আবশ্যক। ’ (ফাতহুল বারি : ১১/১১৬)

আল্লামা মাজেরি (রহ.) বলেন, ‘দোয়াগুলো যে শব্দে-বর্ণে বর্ণিত হয়েছে তাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কেননা কখনো কখনো প্রতিদান বর্ণগুলোর সঙ্গেও যুক্ত থাকে। হয়তো বা এই শব্দই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই সেভাবেই তা আদায় করা আবশ্যক। ’ (মুসনাদে আবি ইআলার টীকা : ৩/২৩০)

তবে কোনো কোনো দোয়ার শব্দে পরিবর্তন আনার অবকাশ রয়েছে। যেমন তাআউজ বা কারো ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার সময়। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এভাবে : ‘আমি তোমাদের দুজনের জন্য আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমাগুলোর মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান ও বিষাক্ত প্রাণী থেকে এবং সকল প্রকার বদনজর থেকে মুক্তি চাইছি। ’ অতঃপর তিনি বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-ও ইসমাঈল এবং ইসহাক (আ.) উভয়ের জন্য এই দোয়া পড়ে আশ্রয় চাইতেন। (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৩৭)

উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.) দুজনকে বোঝাতে দ্বিবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা থেকে বোঝা যায়—এখানে একজনের জন্য একবচন এবং বহুজনের জন্য বহুবচন ব্যবহারের অবকাশ আছে।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-কে একজন নারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। যে হাদিসে বর্ণিত ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আবদুকা ওয়া ইবনু আবদিকা’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার দাস এবং দাসের ছেলে) বাক্যে দোয়া করত এবং দাসের পরিবর্তে দাসী বলতে অস্বীকার করেছিল। তিনি বলেন, তার জন্য উচিত ও উত্তম হলো এভাবে দোয়া করা—হে আল্লাহ, আমি আপনার দাসী, আমি আপনার দাসের মেয়ে দাসী। ’ (আল ফাতাওয়াল কুবরা : ২/২০৫)

আল্লাহ সবাইকে যথাযথভাবে ইবাদত করার তাওফিক দিন। আমিন।

এই রকম আরও টপিক