যে কারণে রাসুল (সা.) অন্যের কোরআন পাঠ শুনতে পছন্দ করতেন

যে কারণে রাসুল (সা.) অন্যের কোরআন পাঠ শুনতে পছন্দ করতেন

 মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর ঐশি বাণী। এর তিলাওয়াত করা যেমন সওয়াবের, তেমনি তার তিলাওয়াত শ্রবণ করাও সওয়াবের কাজ। মহানবী (সা.) মাঝে মাঝে সাহাবায়ে কিরামকে দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করাতেন এবং গভীর আগ্রহ সহকারে তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, আমার কাছে কোরআন পাঠ করো।

আমি বললাম, আমি আপনার কাছে কোরআন পাঠ করব, অথচ আপনারই ওপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ৫০৫৬)

নিম্নে কোরআনের তিলাওয়াত শোনার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো—

আল্লাহর রহমত লাভ
যখন কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন মহান আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়। যারা মনোযোগ সহকারে কোরআন তিলাওয়াত শোনে, তাদের ওপরও রহমত অবতীর্ণ হয়।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শোনো এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৪)

আল্লাহর প্রশংসা অর্জন
যারা কোরআনের মজলিসে অংশ নিয়ে ভক্তি-শ্রদ্ধার সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াত করে এবং শোনে, মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের মজলিসে তাদের প্রশংসা করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর কোনো ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়, তাদেরকে রহমত ঢেকে নেয়, ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে, এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫৫)

হিদায়াতের পথ দেখায়
পবিত্র কোরআন মানুষকে হিদায়াতের পথ দেখায়। কোরআন মানুষের হৃদয়কে যেমন প্রশান্ত করে, তেমনি হৃদয়ের বক্রতা দূর করতেও এর কার্যকর ভূমিকা রাখে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই কোরআন হিদায়াত করে সে পথের দিকে, যা সর্বশ্রেষ্ঠ (সরল, সুদৃঢ়) এবং সত্কর্মপরায়ণ মুমিনদের সুসংবাদ দেয় যে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৯)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে, অতঃপর তার মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করে, তাদেরকেই আল্লাহ হিদায়াত দান করেন আর তারাই বুদ্ধিমান। ’ (সুরা : যুমার, আয়াত : ১৮)

অন্তরে নুর তৈরি করে
পবিত্র কোরআন মানুষের অন্তরকে শীতল করে। মানুষের অন্তরে হিদায়াতের নুর তৈরি করে। ফলে বান্দা মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করে পাপ থেকে ফিরে আসে, যা তার আখিরাতকেও নুর দ্বারা আলোকিত করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, নবী ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের নুর তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয়ই আপনি সব বিষয়ে সর্বক্ষমতাবান। ’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৮)

ঈমান বৃদ্ধি পায়
পবিত্র কোরআন এমন একটি বরকতময় কিতাব, যার তিলাওয়াত শোনার মাধ্যমে মুমিনের ঈমান বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো তারা, আল্লাহর কথা আলোচনা করা হলে যাতের অন্তর প্রকম্পিত হয়। আর যখন তাদের কাছে আয়াত তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে আর তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে। ’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৮)

সওয়াব পাওয়া যায়
অভিজ্ঞ আলেমদের মতে, কোরআন তিলাওয়াত করলে যেমন প্রতি হরফে ১০ নেকি পাওয়া যায়, তেমনি কোরআন তিলাওয়াত শুনলেও নেকি পাওয়া যায়। যেহেতু সুরা আরাফের ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ কোরআন তিলাওয়াত হলে তা মনোযোগ সহকারে শোনার হুকুম করেছেন এবং চুপ থাকতে বলেছেন। রাসুল (সা.)-এরও মাঝে মাঝে সাহাবায়ে কিরাম থেকে কোরআন শোনার প্রমাণ রয়েছে। তবে রেকর্ডকৃত কোরআন শুনলে সওয়াব হবে কি না তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ২/১০৪)
 

এই রকম আরও টপিক