গোয়েন্দা নজরে নতুন ডিসিরা

সংগৃহীত ছবি

গোয়েন্দা নজরে নতুন ডিসিরা

অনলাইন ডেস্ক

ডিসি নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক শেষ হচ্ছে না। নিয়োগের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের প্রশ্নও সামনে আসছে এখন। নিয়োগ নিয়ে আলোচনার ভিতরেই এক কর্মকর্তার কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার ক্যাশ চেকসহ চিরকুট পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে একের পর এক ঘটনার জন্ম হওয়ায় সারা দেশের নতুন ডিসিরা এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।

গোয়েন্দা নজরে নতুন ডিসিরা ক্ষমতা হারানো হাসিনা সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ কি না, আগের সরকারের মন্ত্রী-সচিবদের এপিএস, পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কি না, ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে চাকরিজীবনের বদলি-পদায়নসহ সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। তাঁরা গত ছয় মাস প্রশাসনের কোথায় ছিলেন, কাদের সঙ্গে চলাফেরা ও উঠাবসা করেছেন তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তাঁদের ভূমিকা কী ছিল, তাতেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি। তবে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠার পর সরকার ডিসিদের প্রকৃত ‘আমলনামা’ জানার চেষ্টা করছে।

ডিসিদের নিয়ে নানামুখী আলোচনার মধ্যেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি (নিয়োগ, পদায়ন, প্রেষণ) অনুবিভাগের এক যুগ্ম সচিবের কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি ব্ল্যাংক চেক উদ্ধার করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

পদায়ন হওয়া এক জেলা প্রশাসক ওই যুগ্ম সচিবকে এই চেক দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে কাঙ্ক্ষিত জেলায় পদায়ন না হওয়ায় ওই ডিসির চেকের বিপরীতে টাকা জমা হয়নি। চেক পাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে পুরো প্রশাসনে। বিষয়টি তদন্ত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার।

কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়, এ কমিটি চেকের সত্যতা যাচাই করে আগামী তিন দিনের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করবে। এ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. লিয়াকত আলী সেখ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘নতুন ডিসিরা মাঠে ভালোভাবে কাজ করছেন। এগুলো কিছু নয়। ডিসি নিয়োগে চেকের মাধ্যমে লেনদেনের অভিযোগ তদন্ত করতে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের আগেই আমরা প্রতিবেদন পাব বলে আশা করছি। ’ 

অন্তর্বতী সরকার গত ৯ ও ১০ সেপ্টেস্বর দুই দফায় ৫৯টি জেলায় নতুন করে ডিসি নিয়োগ দেয়। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করে ফিটলিস্ট তৈরি করা হলেও এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার নানা অভিযোগ ওঠে।  

বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ প্রশাসনের সুবিধাভোগী এসব কর্মকর্তাকে ডিসি হিসেবে পুরস্কৃত ও পুনর্বাসন করায় হট্টগোলে জড়ান বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা। ত্যাগী, বঞ্চিত ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা নিয়েই আওয়ামী লীগ পরিবার সংশ্লিষ্ট এবং বিগত ১৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদেরই আবার ডিসি পদে পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ আনেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের দুই যুগ্ম সচিব ড. জিয়া উদ্দীন আহমেদ ও কে এম আলী আযমকে অভিযুক্ত করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা অবিলম্বে বিতর্কিত ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৯টি জেলার ডিসির নিয়োগ বাতিল এবং চারটি জেলায় রদবদল করে পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ব্রিফিং ছাড়াই সদ্য নিয়োগ দেওয়া ডিসিরা কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন।  

এরই মধ্যে ৫১টি জেলার ডিসি নিজ নিজ জেলায় যোগদান করলেও ঢাকা, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, নাটোরসহ কয়েকটি জেলার ডিসির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট জেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে সচেতন নাগরিক সমাজ। এদিকে হট্টগোলকারী কর্মকর্তা চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্যসচিব আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে আরও একটি কমিটি কাজ করছে বলে জানা গেছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিএনপি-জামায়াত ঘরানার কর্মকর্তাদের আপত্তির মুখেই নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫১ ডিসিকে রেওয়াজ অনুযায়ী কোনো ব্রিফিং ছাড়াই কর্মস্থলে পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ঢাকা, খুলনাসহ অন্তত সাত-আটটি জেলায় নতুন ডিসির অপসারণ চেয়ে ডিসি অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে নাগরিক সমাজ, যা নজিরবিহীন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানান প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

সরকারের শীর্ষমহলের নির্দেশে নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের অতীতের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে কিছু কিছু ডিসির বিষয়ে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড ও হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সদ্য নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রত্যাহার করা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলেও জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

news24bd.tv/এসএম

এই রকম আরও টপিক