ইসলামের চোখে জীবনের নিরাপত্তা

ইসলামের চোখে জীবনের নিরাপত্তা

সাফওয়ান সাহল

পৃথিবীতে মানুষের নিরাপদে বেঁচে থাকার জন্য ইসলাম দিয়েছে পূর্ণ নিশ্চয়তা। এতে মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। ইসলামের চোখে অন্যায়ভাবে কোনো মানুষ হত্যা করা বিশ্ব মানবতাকে হত্যা করার মতো অপরাধ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ হত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল।

আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩২)

পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করো না। ’ (বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৩)
সমাজে দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষ যেন তাদের সন্তানদের হত্যা না করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ কোরআনে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। বর্তমান বিশ্বে মানুষ জন্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বংশ নিধনের যে কত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার হিসাব নেই।

এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমি তাদের ও তোমাদের রিজিক দেব। ’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৫১)

অন্যায়ভাবে কেউ কাউকে হত্যা করলে ইসলামের দৃষ্টিতে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এই শাস্তি দুনিয়ায় পেতে হয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের (মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার) বিধান দেওয়া হয়েছে...। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৮)

দুনিয়ার এই শাস্তির পাশাপাশি পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি। আল্লাহ বলেন, ‘আর কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, যেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার প্রতি আল্লাহর গজব ও অভিশাপ এবং তিনি তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৯৩)

হত্যা কখন করা বৈধ
মানুষ মানুষকে অকারণে ও বেআইনিভাবে হত্যা করতে পারে না। আইন মোতাবেক তথা উপযুক্ত কারণে ইসলামী রাষ্ট্র কোনো অপরাধীকে হত্যা করতে পারে। কোনো ব্যক্তি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারবে না। কাউকে শাস্তিস্বরূপ হত্যা করতে হলে তার জন্য আলাদা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ইসলামের চোখেও অপরাধ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বিনা কারণে মানুষ হত্যাকে কবিরা গুনাহ (বড় ধরনের পাপ) বলেছেন। তিনি মারামারি ও সশস্ত্র ঝগড়া বিবাদ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। নবী করিম (সা.) বলেন, দুই জন মুসলমান তরবারি (মারণাস্ত্র) সহ পরস্পরের মুখোমুখী হয়ে পড়লে (একজন নিহত হলে), হত্যাকারী ও নিহত উভয় ব্যক্তি জাহান্নামি হবে।

নিহত ব্যক্তির জাহান্নামি হওয়ার কারণ কি? জিজ্ঞেস করা হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেননা সেও তো প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে উদ্যোগী ছিল। অন্য জনের নিহত হওয়া তো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ব্যাপার। তার পরিবর্তে তারই হাতে সেও নিহত হতে পারত। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩১)

ইসলামী আইনের চূড়ান্ত বিচারে মানুষকে হত্যা করা যায়, এমন ছয়টি ক্ষেত্র আছে: 

১. কিসাসের দণ্ড হিসেবে হত্যা করা।
২. ইসলামের জন্য যুদ্ধ করা এবং সে যুদ্ধে হত্যা করা।
৩. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ও তা উৎখাতের চেষ্টাকারীকে হত্যা করা।
৪. বিবাহিত পুরুষ-নারী ব্যভিচার করলে এবং তা পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত হলে দণ্ডস্বরূপ হত্যা করা।
৫. মুরতাদ তথা ইসলাম-ধর্ম ত্যাগকারীকে দণ্ডস্বরূপ হত্যা করা।
৬. ডাকাতির কারণে অথবা নিজের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রম রক্ষার ক্ষেত্রে কাউকে হত্যা করা।

ইসলামে শুধু উপরোক্ত ছয় অবস্থায় মানুষের জীবন ও প্রাণের সম্মান নিঃশেষ হয়ে যায়। ওই অবস্থায় তাকে হত্যা করা যায়। তবে এসবের এখতিয়ার রাষ্ট্রের। তবে ব্যক্তিগত হত্যার ক্ষেত্রে নিজে কখনো আগেভাগে উদ্বুদ্ধ হবে না এবং ওই হত্যায় মানুষের মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা চলবে না।

news24bd.tv/SHS 

এই রকম আরও টপিক