ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, প্রশাসনে এখনও ফ্যাসিস্টের দোসররা বসে আছে: জোনায়েদ সাকি

ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, প্রশাসনে এখনও ফ্যাসিস্টের দোসররা বসে আছে: জোনায়েদ সাকি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রশাসনে এখনও ফ্যাসিস্টের দোসররা বসে আছে। বিভিন্ন কাঠামোতে তারা বসে আছে। তারা খুনিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে।

তারা যেন খুনিদের আড়াল করতে না পারে। আপনারা যদি এদের বিচার করতে না পারেন তাহলে কেন দায়িত্ব নিয়েছেন? বিচার আপনাদের করতেই হবে। এটাই বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়াস্থ হোসিয়ারী সমিতির মিলনায়তনের তৃতীয় তলায় গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের যৌথ উদ্যোগে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জোনায়েদ সাকি।

গণসংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক অঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন তরিকুল সুজন, ফারহানা মানিক মুনাসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এ সরকার শহীদের তালিকা প্রকাশ করবে। একজন শহীদের তালিকাও যেন বাদ না যায়। দল হিসেবে আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু সরকারের সক্ষমতা আছে। এ শহীদেরা শুধুমাত্র নাম নয়, একেকটি সম্ভাবনাময় জীবন এগুলো।

কি নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছে এ ছেলেরা। অন্তত পাঁচশ যুবক চোখ হারিয়েছে। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে যেন ভাবতে না হয়। সেভাবে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। তবে সরকারকে বলব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ তালিকা প্রস্তুত করুন। নতুন বাংলাদেশের দিকে যাত্রা ন্যায়ের ওপর দাঁড়িয়ে হবে। কোনও শহীদ পরিবারকে যেন বলতে না হয় আমরা বিচার পেলাম না। এসব হত্যার দোসর ও নির্দেশদাতারা কোথায় গেল? আমরা শুনতে পারছি তারা পালিয়ে গেছে, এখনো পালিয়ে যাচ্ছে। তারা কীভাবে আইনের মুখোমুখি না হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে সরকারকে তার জবাব দিতে হবে। আমরা তাদের বিচারের মুখোমুখি দেখতে চাই।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সুযোগের সমতা মর্যাদা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ৭২ সাল থেকে আমরা দেখলাম ওই মুক্তিযুদ্ধের সময় যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার বিপরীতে বাংলাদেশকে চালানো হয়েছিল। সাংবিধানিক ক্ষমতার কাঠামো দেখেন সমস্ত ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। একহাতে মানুষের অধিকারের কথা বলেছে আরেক হাতে সেটা কেড়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এইভাবে যারা ক্ষমতায় গিয়েছে তারা পুরো জমিদারীর মতো দেশ চালানোর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যে কারণে ৫৩ বছরে আমরা সুযোগের সমতা পাই নাই। আমরা মানবিক মর্যাদা পাই নাই। আমরা সামাজিক ন্যায় বিচার পাই নাই। বরং আমাদের ভোটের অধিকারটা পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমাদের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। আমি শুনেছিলাম ১১ লাখ কোটি টাকা এখন শুনছি ১৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। এইভাবে তারা নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য জুলাই আগস্টে নির্বিচারে আমাদের সন্তানদের সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। ছাত্র জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ চলবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। কেউ খাবে কেউ খাবেনা তা হবেনা। ফ্যাসিস্টরা যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করেছিল সেটাতে হবেনা। আমাদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত লাগবে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মানে গণতান্ত্রিক সংবিধান। এক ব্যাক্তির হাতে ক্ষমতার সংবিধান না। এজন্য রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার লাগবে। আইনের সংস্কার লাগবে। যে আইন আমার গলাটিপে ধরে আমার কণ্ঠরোধ করে এই সব কিছুর সংস্কার লাগবে। যে আইন সাংবাদিকদের নির্যাতন করতে না পারে। রাষ্ট্রের যে কোন নাগরিক যাতে মাথা উঁচু করতে পারে। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর লাগবে। উন্নয়ন মানে বড় বড় স্থাপনা না। উন্নয়ন বলতে বোঝায় একজন মানুষ সর্বনিম্ন কত আয় করে সেটা নিয়ে সে যদি সম্মান নিয়ে বাচতে পারে তার সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারে তার পরিবারের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পরিবারের ভবিষ্যৎ করতে পারে তাহলে বুঝবো বাংলাদেশ উন্নতি করছে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদেরকে কয়েকটি বিল্ডিং কয়েকটি মেট্রোরেল আর কয়েকটি  স্থাপনা দেখিয়ে বলবেন না দেশে উন্নতি হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের উন্নতি বলতে বুঝি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের উন্নতি, যে উন্নতিতে প্রতিটি মানুষ মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। জনগণ হতে হবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করবে এ ধরনের রাষ্ট্র আমরা প্রত্যাশা করি। চব্বিশের জুলাইয়ে এই রাষ্ট্রের প্রত্যাশায় শহীদরা রক্ত দিয়েছে। তাদের রক্তের ঋণের সঙ্গে আমরা যাতে বেঈমানি না করি সবাই সে অঙ্গীকার করি।

news24bd.tv/JP