পোশাকশিল্পে দৈনিক লোকসান ১৬০০ কোটি টাকা

সংগৃহীত ছবি

কোটা আন্দোলন

পোশাকশিল্পে দৈনিক লোকসান ১৬০০ কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাক শিল্পের চট্টগ্রামের কিছু কারখানা চালু থাকলেও বেশির ভাগ বন্ধ। এই অবস্থায় প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশের শীর্ষ পর্যায়ে দেনদরবার করছেন। এমন প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার থেকে কারখানা খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

গতকাল মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠনের নেতারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, ইন্টারনেটসেবা ও পণ্য জাহাজীকরণের অভাবে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বিশ্ববাজারে। এই খাতের লাখ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছেন।

এই অবস্থা দেশের শীর্ষ পর্যায়ে তুলে ধরতে তাঁরা সক্ষম হয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়াও পাচ্ছেন। এর ফলে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে পোশাক কারখানার অঞ্চলগুলোতে সীমিত আকারে ইন্টারনেটসেবা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আজ এই সেবা চালু হবে বলে তাঁদের আশা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, পোশাক খাতে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েক শ কোটি ডলারের পণ্য জাহাজীকরণ করা যাচ্ছে না। ফলে জাহাজগুলো বন্দরে আটকা পড়ে আছে।

এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাঁরা। আজকের মধ্যে পোশাক অঞ্চলগুলোতে সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড (ইন্টারনেটসেবা) চালু করে দেবেন বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা চাইবেন। এ জন্য গতকাল রাতেই স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

এদিকে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শতভাগ অনলাইননির্ভর রপ্তানিপ্রক্রিয়া এখন বন্ধ। এর ফলে বৈশ্বিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় দেশের তৈরি পোশাক পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম সুইডিশ কম্পানি এইচঅ্যান্ডএম জানিয়েছে, ক্রয়াদেশে প্রস্তুত করা ২০ কোটি ডলার মূল্যের চালান এখন চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে আছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষ-সহিংসতা বেড়ে গেলে গত ১৯ জুলাই দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্বয়ংক্রিয় অ্যাসাইকুডা ব্যবস্থায় রপ্তানিবিষয়ক নথি বা শিপিং বিলসংশ্লিষ্ট সব এন্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। জানা যায়, জাহাজে ওঠার আগেই আটকা পড়ে এইচঅ্যান্ডএমসহ বাংলাদেশ থেকে আমদানিকারক অনেক প্রতিষ্ঠানের চালান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ইন্টারনেটসেবা চালু না থাকায় ২০ কোটি ডলারের রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ করা যাচ্ছে না। এর ফলে এ সপ্তাহে আমাদের অর্ডার প্লেসমেন্ট ছিল, যোগাযোগ না হওয়ায় আমরা সেগুলো করতে পারিনি। ’ তিনি জানান, এখন অপারেশন ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। চট্টগ্রাম বন্দরে তাঁদের প্রচুর মালপত্র পড়ে আছে। শুধু ইন্টারনেট নেই বলে এগুলো হ্যান্ডওভার করতে পারছেন না।

জিয়াউর রহমান বলেন, এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশ ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে। এ জন্য বিকল্প ব্যবস্থায় ইন্টারনেট চালু করা দরকার। এটা হতে পারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা।

তিনি আরো বলেন, ‘সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা শতভাগ সম্মান জানাই। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব ব্যবসা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া দরকার। তা না হলে আমরা পিছিয়ে যাব। ’

বাংলাদেশ থেকে আর যেসব প্রতিষ্ঠান বেশির ভাগ পোশাক আমদানি করে থাকে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্ডিটেক্স, সিঅ্যান্ডএ, ওয়ালমার্ট, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, গ্যাপ, পিভিএইচ ইত্যাদি। শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এই ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো কমবেশি এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাংলাদেশ থেকে ক্রয় করে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ছোট-বড় প্রায় সব ক্রেতাপতিষ্ঠানকেই পণ্য আটকে থাকার বিড়ম্বনা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

news24bd.tv/DHL